ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু ইসলাম কি শ্রেষ্ট ধর্ম? অবশ্যই শ্রেষ্ট ধর্ম যেমনটা প্রত্যেকের নিজের মা তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ট মা! তেমনি প্রত্যেকটা ধর্মই সুন্দর এবং শ্রেষ্ট যার যার নিজ ধর্মের অনুসারিদের কাছে! এখন যে কোনো একটি ধর্ম সত্য হলে বাকি সবগুলো ধর্ম মিথ্যে এই ধরনের একটি প্রশ্ন আপনার মাথায় উদয় হতেই পারে! এবং প্রত্যেক ধর্মের মানুষই তাদের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং সত্য বলে দাবী করে! আর এ কারনেই কয়েকটি প্রশ্ন বার বার আমার মনে উদয় হয়েছে! একজন মুসলমান হিসেবে এবং ইসলাম ধর্মের পয়েন্ট অব ভিউ থেকেই সেই প্রশ্নগুলো আমি উত্থাপন করছি! কারো কাছে যুক্তিযুক্ত উত্তর থাকলে জানাবেন!
কোরআনে লিখা রয়েছে কারো মাঝে তিল পরিমান অহংকার থাকলে সে বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না! কিন্তু আমরা মুসলমানরা প্রায় এটা নিয়ে অহংকার করি যে ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম! তাহলে ধর্ম নিয়ে অহংকার করাটা কি ইসলাম ধর্মের বিরুধী কিনা? আরেকটা কোরআনে আরেক জায়গায় লেখা আছে তোমার অন্যের ধর্মকে অন্যের উপাস্যকে গালি দিয়ো না কিংবা ছোটো করো না তাহলে তারাও অজ্ঞতাবসত তোমার রবকে গালি দিবে! তাহলে আমরা যখন বলি যে ইসলাম ছাড়া বাকি সব ধর্ম মিথ্যা তখন কি তাদেরকে অপমান করা হয় না! তাহলে কোরআনের বানী অনুযায়ী আমাদেরকি কোনো অধিকার রয়েছে অন্য কোনো ধর্মকে বা ধর্মের উপাস্যকে মিথ্যা জ্ঞ্যান করবার! আমি বাইরের দেশে অনেক লম্বা সময় থাকবার কারনে আমার চিন্তা ধারনা অনেকটাই উদারপন্থী হয়েছে বলে আমি মনে করি! আমার সৌভাগ্য হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের এবং জাতির মানুষদের সাথে মিশবার! এবং সেই সুবাদেই বলছি এইসব অন্য ধর্মের মানুষরাও অনেক অমায়িক অনেক ভালো! কিন্তু যখন বলা হয় মুসলমান ছাড়া বাদ বাকি সবাই দোজগে যাবে এবং সেখানে অনন্তকাল শাস্তি পেতে থাকবে তখন আমি সেই কথার সাথে একমত হতে পারি না! কারন পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ অন্য ধর্মের অনুসারী। তাহলে কি এই দুই তৃতীয়াংশ মানুষ দোজখে যাবে যাদের অধিকাংশই অনেক ভালো মানুষ! শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্ম পালন না করবার কারনে তারা সব দোজখে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না! যেখানে আমাদের নবীর জীবনি থেকে জানা যায় যে তিনি সে সময় কয়েকটি যুদ্ধে যাবার সময় অন্য ট্রাইবের সাথে জোট করেছিলেন! যে সমস্ত ট্রাইবের অনেকই ছিলো ননমুসলিম! এখন নবী মোহাম্মদ যদি এদের সাথে যুক্ত হয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধে যেতে পারে তাহলে তারা কি করে দোজখে যাবে! আবার বর্তমানকালেও যদি দেখেন অনেক অমুসলিম দেশ ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হবার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে! তাই আমার মনে হয় না সকল অমুসলিমরাই দোজখে যাবে কথাটা সত্য! এবং এই কথার মাধ্যমে আমাদের দেশের মোল্লারা এক ধরনের বিদ্বেষ সৃষ্টি করে যা ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম এই কথাটির বিপক্ষে যায়!
প্রত্যেকটা ধর্মের আছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট আছে আলাদা সৌন্দর্য! আমি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহন করেছি এবং ছোটবেলার থেকেই এই ধর্মের অনুসারি আর সে কারনেই এই ধর্মের উৎসবগুলো উপভোগ করবার এবং কাছ থেকে দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে!
বিশেষ করে রোজার ঈদ! ঈদের আগে বাংলাদেশে একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ সৃষ্টি হয়! পুরো শহর জুড়ে লাল নীল বাত্তি দিয়ে আলোকিত করে রাখা হয়। ঈদের আগে মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত শপিংমল কিংবা মার্কেটে গিয়ে পরিবার পরিজন এবং নিজের জন্য ঈদের জামাকাপর কিনা কাটা করা। ইফতারের আগে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে ইফতার করা আবার ভোররাতে উঠে সেহেরী করা। আত্নিয়স্বজন, প্রতেবেশীদের বাসায় ইফতারি পাঠানো। ঈদের দিন আত্নীয়স্বজনদের বাসায় গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে আসা। কত সুন্দর নিয়ম। এই ভাবে একটা উৎসব পারিবারিক সৌহার্দ বৃদ্ধি ও সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করবার জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখে!
ঠিক তেমনিভাবে ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় বড়দিন খুব জাকজমক ভাবে পালন করা হয়! যেমনিভাবে আমরা ঈদ উৎসব পালন করি। সবার বাসাবাড়িতে লাইটিং করা হয়। বড়দিনের জন্য সবাই পরিবারের জন্য গিফট কিনে। বড়দিনের আগে শপিংমলগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। বড়দিনে সিক্রেটসান্তার আয়োজন করা হয়! যেখানে সবাইকে গিফট দেওয়া হয়। সবাই সবাইকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়! বাসাবাড়িতে ভালো খাবার দাওয়ার আয়োজন করা হয়! পরিবারের সবাই মিলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ইউরোপে থাকার সময় জিনিসগুলো আমি নিজ চোখে দেখেছি! যদিও আমি কোনো হিন্দুগরিষ্ঠ দেশে থাকিনি কিন্তু আমি শিউর তাদের দেশেও একই ভাবে পূজার সময় একই প্রকৃয়ায় আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়া হয়!
ধর্মের এই জিনিসটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে! পরিবারের সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আছে! সবার মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়! প্রত্যেকটা ধর্মই ভালোবাসতে শিখায়, উপদেশ দেয় ভালো কাজ করবার মন্দ কাজ করা থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখবার। তাই আসুন আমরা কোনো ধর্মকেই ছোটো না করে সব ধর্মকেই সম্মান করি তথা সব ধর্মের মানুষদেরকে সম্মান করি তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান দেখাই!
আমার কাছে যেটা মনে হয় সেটা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা এক জনই! এবং আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ধর্ম মতে ঐ একজন ঈশ্বরেরই উপাসনা করি! তাই আসুন আমরা নিজ ধর্ম পালনের সাথে সাথে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাসীল হই!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩