আজকের থেকে ঠিক এক বছর আগে এই দিনে আমেরিকায় পদার্পন করেছিলাম মানে পা রেখেছিলাম আর কি। ১৮ ঘন্টার দীর্ঘ এক পেইনফুল বিমান যাত্রা তার উপর কাছের মানুষজনের থেকে দূরে চলে আসা। আর দীর্ঘ সময়ের বিমান যাত্রা শেষে নতুন দেশে নামার পর জেটলেগ তো আছেই। এই জেটলেগ কথাটার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটেছিলো হুমায়ন আহমেদের একটা বইয়ের মাধ্যমে আর সরাসরি অভিজ্ঞতা হয়েছিলো প্রথম বার লন্ডনে যাবার পর। যারা জানেন না তাদের জন্য জেটলেগ জিনিসটা একটু এক্সপ্লেইন করি। সহজ ভাবে বলতে গেলে, জেটলেগ হচ্ছে আপনি নতুন কোনো জায়গায় গেলে আপনার ঘুম জনিত সমস্যা হওয়া। ধরেন আপনি বাংলাদেশে প্রতিদিন রাত দশটা বাজে ঘুমাতে যান এখন আপনার শরিল আপনাকে সেই সময় অনুযায়ী ঘুমের জন্য প্রস্তূত করে দেয় বা অভ্যাস হয়ে যায়, রাত দশটা বাজলেই আপনার ঘুম পাবে। এখন হঠাৎ আপনি অন্য এক দেশে গেলেন সেখানে সকাল নয়টা মানে বাংলাদেশ সময় রাত দশটা। এখন আপনার শরীর নিয়ম অনুযায়ী নতুন দেশে সকাল নয়টার সময় ঘুমের জন্য তারা দিবে মানে সকাল নয়টায় আপনার ঘুম পাবে। ঘুমের লাইফ সাইকেলে গন্ডগোল লেগে যাবে। এইটাই জেটলেগ।
আর তাছারা বিমানে ১৮ ঘন্টার ভ্রমন একটা অত্যাচারের মতন। এর আগে অনেকবার প্লেনে উঠলেও এত লম্বা সময় কখনই প্লেনে থাকা হয়নি। আর সত্যি কথা বলতে কি প্লেন জার্নি আমি কখনই উপভোগ করিনা। আর উপর থেকে প্লেন ল্যান্ডিংটা আরেকটা পেইনফুল জিনিস। বিমানের ভিতর বাতাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় আপনার কানটান সব বন্ধ হয়ে যাবে। এই অত্যাচার থেকে বাচবার জন্যে মুখে চুইন্গাম নিয়ে চাবালে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। এ জন্য সবসময় দেখবেন বিমান ল্যান্ডিং আর উড্ডয়নের সময় ছোটো বাচ্চা কাচ্চা থাকলে তারা কান্না কাটি শুরু করে। না হাটতে পারবেন না ঠিক মত ঘুমাইতে পারবেন। বসে থাকতে থাকতে পুরো কোমর ব্যাথা হয়ে যায়। তবে প্লেনের খাওয়াটা আমি সবসময়ই খুব উপভোগ করি। এই একটা জিনিসই মনে হয় প্লেনে ভালো হয়।
তারপর বিমান থেকে নামের পর ফরেইনকান্ট্রির ইমিগ্রেশন সিকিউরিটি চেক করতে আরো ১ বা ২ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থাকা এবং অবশেষে সিকিউরিটি অফিসারের জেরার মুখে পরা। কেনো আসছি, কে থাকে, কোথায় থাকবো হেন টেন আরো কত কি। ইন্টারোগেশন শেষ করে এবার নিজের লাগেজ খোজার পালা। সেখানে আরো ১ ঘন্টা ভাগ্যো খারাপ থাকলে আরো বেশি সময় লাগতে পারে। যাই হোক এত জক্কিঝামেলা পার হয়ে অবশেষে ঢুকলাম নতুন দেশে। এই প্রথম নতুন কোনো দেশে আমার জন্য ফুল আর ওয়েলকাম লেখা বেলুন নিয়ে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। এত কষ্ট অবশেষে সার্থক হলো বউয়ের মুখ খানা দেখে। যদিও এত লম্বা সফর শেষে আমি পুরাই বিদ্ধস্থ ছিলাম তারপরও চোখে মুখে ছিলো আনন্দের একটা ছাপ। তারপর একটা বিশাল অভ্যার্থনা অনুস্থান হলো। বাকিটা ইতিহাস। দেখতে দেখতে কিভাবে একটি বছর পার হয়ে গেলো। মনে হয় এইতো সেদিন আসছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সুস্থ আছি এবং সকলের দোয়া প্রার্থী যাতে ভবিষ্যতেও ভালো থাকতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৮