আমি একবার একটা পরী দেখেছিলাম
আমাদের বাড়িতে একটা বিশাল হল আছে যেখানে আমরা সবাই বিকেলের নাস্তা করতাম। এটি ছিল চারিদিকে খোলা, হাওয়া/বাতাস খাওয়ার জন্যই মনে হয় এমন রাখা হয়েছিল। আমার মা আমাদের বলতেন, চল আমরা একটু বাতাস খাই, আমরাও বাতাস খাওয়ার ভঙ্গি করে শূণ্য থেকে মুঠি মুঠি বাতাস খেতাম। অভ্যাসটা থেকে গিয়েছে, এখনো মাঝে মাঝে আমি একা হাত বাড়িয়ে অদৃশ্য কিছু বাতাস নিয়ে খেতে থাকি। যদিও সে হাওয়াখানা এখন আর নেই, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বেশ কিছু বছর আগে একবার আমি ওখানে একটা চেয়ারে আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলাম, হয়তো অল্পের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এরপর আমি চোখ খুলে দেখতে পাই স্পষ্ট… একটা মেয়ে শূণ্যে ঘুমাচ্ছে মাথার নিচে হাত রেখে, পা দুটি গুটিয়ে। আমার কাছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি, বরং আমি খুব ভাল করে দেখছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আমি একটি পরী দেখেছি কিন্তু তার কোন পাখা ছিল না।
আগুনের বল
আমি আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, এবং আমি থাকি তিনতলায়। রাত আট কি নয়টা হবে দেখলাম খুব কাছ দিয়েই উড়ে গেল একটা আগুনের বলের মত কিছু একটা। এমন উড়ন্ত আগুনের বল আমি অনেকবার দেখেছি। কি বলব এটাকে ?
কেউ একজন / কিছু একটা
ঘুম হচ্ছিল না, হঠাৎ দেখি একজন কেউ দাঁড়িয়ে আলো আঁধারেই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। টিক টিক করে মিনিটের কাটা এগিয়ে যাচ্ছিল, এরপর হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল।
সাঁতার কাহিনী
যে কোন কারণেই হোক, আমাদের বাধ্য করা হল সাঁতার শিখতেই হবে, যদিও আমরা কেউ সাঁতার শেখা দূরে থাকুক পুকুরে নামতেই আগ্রহী ছিলাম না, পুকুরের ঘাট পাকা হলেও পা রাখতে কেমন যেন একটা ঘিনঘিনে অনুভূতি হত। এছাড়া আমাদের তখন কাজ করছে, পানি ভীতি এবং ঘৃণা। প্রতি শুক্রবার সকালে সাঁতার ছিল বাধ্যতামূলক। সাঁতার শেখা হলে মজা পেয়ে যাই এবং প্রায়ই পুকুরের এপার থেকে অন্যপারে যেতাম সাঁতার কেটে। এভাবেই একবার মাঝ পুকুরে পৌঁছালে মনে হল, আমার এক পা কে যেন টানছে, আমিও প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম এরপর মনে হল ছেড়ে দিল কিন্তু দ্বিতীয়বারের মত টানল… আবার ছেড়ে দিল। আমি অন্য পারে পৌঁছেই কান্না শুরু করে দিয়েছিলাম। সবাই জানতে চাচ্ছিল কি হয়েছে কিন্তু আমি কিছুই বলিনি। এই পা ধরে টানার অনুভূতি আমার খুব স্পষ্ট!
আমার জ্বীন দর্শন
এই ব্যাপারটা হাস্যকর মনে বলেও আমার কাছে খুব সত্যি, বয়স তখন ১৩/১৪ হবে। গ্রীষ্মের ছুটিতে, গ্রামের বাড়িতে একদিন বের হলাম টই টই করতে, অল্প হাঁটলেই বিল, আরো মিনিট বিশেক হাঁটলেই খাল। গ্রামে গেলে এখনো আমি খালের ধারটা ছুঁয়ে আসি। একটা বাড়ি আছে যেটাকে আমরা পুরাতন বাড়ি বলি, ঐ বাড়ির একটা ঘরে জ্বীন হাজিরের মত ঘটনা ঘটছিল… আমরা ওখানে কি হচ্ছে তা দেখতে যাই, আমি যাওয়ার পর দেখা গেল সেই জ্বীনের গুরু বুঝতে পারলেন তুলা রাশির একটা মেয়ে ওখানে আছে এবং আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “মা তুমি তুলা রাশির, বসে পড়”।
আমিও বসে পড়লাম মন্ত্রমুগ্ধের মত, যা ছিল আমার জন্য অকল্পনীয়। আমাকে বলা হল আয়নায় তাকাতে এবং আমি সত্যি সত্যিই আয়নায় অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম……ছবির মত করে। দুজন লোক এল, কথা কাটাকাটি হল, এরপর দুই জন দুইদিকে চলে গেল। এই জ্বীনকে ডাকা হয়েছিল একটি নিঁখোজ ছেলের খোঁজ দেওয়ার জন্য। পরে সেই ছেলেটিকে পাওয়া গিয়েছিল ওদের পিছনের পুকুরে মৃত অবস্থায়। ছেলেটা আমাকে ডাকত “মোস্তাফা পাঠান”। কেন ডাকত তা আর জানা হল না।
আমার সত্যি হয়ে যাওয়া স্বপ্ন
আমার আপন ফুফাত বোন যিনি আমার বাবার সমবয়সী, তিনি আমার মা বাবার খুব বন্ধু ছিলেন। আমি এক রাতে স্বপ্ন দেখলাম, তিনি মারা গিয়েছেন আমরা খবরটা পেয়ে অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে উনার বাসায় যাচ্ছি, আমার মা যাওয়া মাত্রই উনার ছেলেমেয়েরা নানু বলে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আকুল হয়ে কাঁদতে লাগল। পরদিন সকালে মা’কে বলতেই উনি বললেন, “ভাল দেখেছ”। স্বপ্ন যাই হোক এটা নাকি নিয়্ম, স্বপ্নকে ভাল বলা।
ঠিক পরদিন ভোর পাঁচটার দিকে আমরা খবর পেলাম মরিয়ম বুবু বেঁচে নেই, আমরা কাঁদতে কাঁদতেই হাঁটতে শুরু করলাম, ড্রাইভারের অপেক্ষা না করেই। আমাদের বাসা থেকে ১৫ মিনিটের পথ। আমার মা আমরা পৌঁছানোর অল্প পরে পৌঁছেন বাবার সাথে, ঠিক স্বপ্নের মত করে তারা সবাই আমার মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি চলে গেলাম ঘোরে……। কেন হল, কিভাবে হল, আমার স্বপ্ন কিভাবে এত সত্যি হল!
আমার নানুর মৃত্যর আগের রাত আমি ঘুমাতে পারিনি, এত খারাপ লাগছিল যে, আমি ভাবছিলাম আমি বোধহয় স্ট্রোক করব, এত বুক ব্যাথা… কোথাও কি যেন হয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন একটা অনুভূতি, ইচ্ছে করছিল কান্না করি… অবশেষে সকাল হবার আগেই এল ফোনটা… নানুমণি নেই।
খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এ বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলির ব্যাখ্যা !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৩৭