somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আব্বা ও আমি ( পর্ব- নরসুন্দর)

৩১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলায় চুল কাটাতে চাইতাম না। কানের কাছে চুল আসতে না আসতেই আব্বা চুল কাটানোর জন্য বলা শুরু করতো। আব্বা চুল কাটার স্টাইল বলতে আর্মি কাটিং বুঝতো। এর ব্যাত্যয় সে কোন ভাবেই মেনে নিবে না। তার বদ্ধমূল ধারণা ছিল কোন ভাল ছেলের চুল বড় থাকতে পারেনা। আব্বার আরও কিছু বিশ্বাস ছিল যেমন ভাল ছেলেরা জিন্সের প্যান্ট পরেনা! এবং কোন ভাল মানুষের দুইটা সিম কার্ড থাকতে পারেনা।

শুক্রবার আসলেই সকালে বাজারে যাওয়ার সময় আব্বা জোর করে নিয়ে যেত চুল কাটাতে। রাগে,দুঃখে শেষে আবদার করতাম যেন আমাকে অবশ্যয়ই একটা টেনিস বল কিনে দেয়া হয় চুল কাটানোর পর। বলের নাম ছিল এ্যারোপ্লেন। বলটি সাধারণত সবুজ হতো। সেই বলে একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ ছিল। যতদূর মনে পড়ে বলের দাম ছিল ১৮ টাকা। খেলা শুরু করার আগে বলটি নাকে নিয়ে শুকতাম বেশ কিছুক্ষণ।

যাইহোক, চুল কাটাতে দিয়ে আব্বা জলিল কাকার চায়ের দোকানে বসতো। ছিদাম নামে আমাদের বাজারে নাপিত আছে,সেই আমাদের পারিবারিক নাপিত ছিল। সম্ভবত এখন আর তার দোকান জমজমাট না। তবে তার মত দেশ সম্পর্কে সচেতন মানুষ কম দেখেছি। প্রখর রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন লোক। জনকণ্ঠ পেপার তার মুখস্থ থাকতো। উনার সাথে আমার একটি মজার ঘটনা আছে। যখন আরও ছোট ছিলাম মানে স্কুলে তখনও যাই নাই।তখন আমরা পুরাতন বাড়ীতে থাকতাম, সেটা পাসের গ্রামে। উনি তখন আমাদের বাড়ী এসে চুল কাটিয়ে দিয়ে যেতেন। আমাকে দৌড়ে ঝাপটে ধরে চুল কাটিয়ে দিতেন। এমনি একদিন সবাই মিলে ধরে জোর করে চুল কাটিয়ে দিচ্ছেলেন আর আমি উনাকে রাগ করে বলছিলাম "আপনাকে আর আপনার নানীকে কূপে (আমরা বলতাম কুয়া)ফেল দেব!" সেই গল্প বড় হওয়ার পরেও চুল কাটাতে গেলে সবাইকে আমার সামনে বলতেন হেসে হেসে। ক্লাস নাইন-টেন পর্যন্ত উনার কাছে চুল কাটিয়েছি। লোকটা খুব ভাল একজন মানুষ। ভাবছি বাড়ী গেলে উনার দোকানে যাব একবার চুল কাটাতে। দেখবো এবার সে ওই গল্প করে কিনা।যদি যাই তবে তা হবে প্রায় ষোল বছর পর যাওয়া। উনার কি আব্বার সেই ছোট করে চুল কাটিয়ে দেয়ার কথা মনে আছে?

চুল কাটা শেষে জলিল কাকার চায়ের দোকানে বসে থাকা আব্বা কে দেখাতে যেতে হত ঠিক আছে কিনা সার্টিফিকেট নিতে! খুব কম বারই পাস করতাম একবারে! মানে আব্বা বলতো সামনে তো চুল এখনও বড়! অথচ বিশ্বাস করেন একদম ছোট থাকতো। তারপর আবার হাত ধরে নিয়ে যেয়ে এবার বসে থেকে আমার সবকটি চুল রিমান্ডে নেয়ার মত করে কাটিয়ে ছাড়তো। সেটাকে আর কোন হেয়ার স্টাইল বলা যেতনা। ছিদাম কাকাও নিখুতভাবে আব্বার ইচ্ছে বাস্তবায়ন করতো।

তারপর বড় হওয়ার পরেও, আর বড় করে চুল রাখা হয় নাই। এখন চুল বড় হলেই মাথা ব্যাথায়। এসএসসি দেয়ার পড়ে কলেজে পড়ার সময় রাজশাহী থেকে বাড়ী এলে আব্বা সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতেন শার্টের পকেটে টাকা আছে চুল কেটে এসো আজ।

গত তিন মাস হল চুল কাটা হয় না। প্রায়ই মাথা ব্যাথায় প্রচন্ড। প্রতিদিনই ভাবি আজ কাটবো। চুলে কান ঢেকে গেছে প্রায়। এবার মে মাসে আব্বার মৃত্যুর দশ বছর পূর্ণ হবে। কেন যেন মনে হচ্ছে সকাল হলেই আব্বা বলবে পকেটে টাকা আছে আজ চুল কেটে এসো আব্বা। (আমার আব্বা আমাকে আব্বা বলে ডাকতেন আদর করে)।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৮
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×