গতকাল থেকেই দেশের যে অশান্ত পরিস্থিতি তাতে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। এই জটিল পরিস্থিতির পিছনের কারন হিসেবে গতকাল থেকে যা কিছু জেনেছি তাতে আর সকলের মতই আমার অবস্থান বিডিয়ার এর জওয়ানদের পক্ষেই ছিলো। তাদের দাবিগুলো যুক্তিযুক্তই মনে হয়েছে। সেইসাথে সরকারের সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র আন্তরিকতার অভাব ছিল বলে মনে হয়না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা আরও ভাল হওয়া উচিত ছিলো এবং সে গতকাল রাত্রেই সকল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও তার যোগ্যতা প্রমাণের এবং সর্বোপরি জাতীকে একটি জটিল সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার চরম সুযোগ হারিয়েছেন। তিনি বিডিআর সদর দফতর থেকে বের না হয়ে নিজে থেকে গিয়ে সকলের অস্ত্র জমা নিয়ে সকল ঘটনার পরিসমাপ্তি করতে পারতেন। কিন্তু সেটা তিনি কোন পরিস্থিতিতে করতে পারেননি সেটা জানার ইচ্ছে আছে।তবে সেটা নিয়ে আমি এখন আর সময় নষ্ট করতে রাজী নই। এরপর সকাল থেকে সম্পূর্ণ দেশ থেকে এবং বিডিআর সদর দফতরের ভিতরে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের খবর যখন আসতে থাকে তখন থেকেই ধীরে ধীরে বিডিআর জওয়ানদের ওপর আমার সহমর্মিতা কমতে থাকে। কোনভাবেই আমি ১০৭ কিংবা ১৫০ জন আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারিনা (যদিও এই খবর সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত নয়, এবং আমি চাই যাতে এটা মিথ্যে হয়)।এমতাবস্থায় অনেকেই আর্মির মুখোমুখি অবস্থান ও পালটা আক্রমনের বিরোধীতা করেছেন। আমিও তাদেরত সাথেই আছি।কোনভাবেই রক্তপাত কাম্য নয়। অনেকেই এই সরকার ও তার মন্ত্রীপরিষদ বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্য খুবই বাজে মন্তব্য করেছেন এবং অনেকেই তাঁর চারিত্রিক ও চেহারার বিভিন্ন দিক নিয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করেছেন,যা আমকে খুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।সেই সাথে আর্মির দুর্ণীতি নিয়ে কথা উঠেছে যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় এবং আমি মনে করি এই সকল পরিস্থিতির মূল কারন। কিন্তু এটা একদিনের সমস্যা নয় আর একদিনেই এর সমাধান সম্ভব নয়। কথা উঠেছে আর্মি কেন সরে যাচ্ছেনা তাদের অবস্থান থেকে কিংবা সরকার কেন আর্মিকে ব্যারাকে ফেরত পাঠাচ্ছে না বিডিআর এর দাবী মেনে নিয়ে। আমি এই বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত নয়। বর্তমানে বিডিআর জওয়ানদের যে কর্মকান্ড তা একদল সন্ত্রাসীদের মতই। এইঅবস্থায় সরকারকে অবশ্যই জনগন ও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে।ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছেন বিডিআর এর এলোপাথারি গুলিতে নিহত হয়েছেন অনেক বেসামরিক মানুষ। এবং এদের হাতে আছে যুদ্ধা করার মত অস্ত্রসস্ত্র ।সেইসাথে গতকালই তারা সংসদ ভবন সহ অনেক কিছুই গুঁড়িয়ে দেবার কথা বলেছেন। আর সেই সাথে আছে সুযোগসন্ধানী মানুষজন।এমতাবস্থায় সেনাবাহিনীকে কিভাবে সরকার ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে? এই অবস্থায় সরকার যা করেছে, সেনাবাহিনীকে কিছুটা পিছনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে তা আমি মনে করি সম্পূর্ণ সঠিক। আর সেইসাথে সকাল থেকে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিডিআর-আর্মির সরাসরি সংঘর্শের যে সংবাদ এসেছে তা ভুল বলেই প্রমাণ হয়েছে ও এটা আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরে আলু পোড়া করে খাওয়ার মত সুযোগসন্ধানীদের গুজব ছাড়া আর কিছু যে নয় তা সকলেই বুঝেছে।
কিছুক্ষন আগেই প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিলেন। প্রথমে কিছুটা বিরক্ত ছিলাম, কিন্তু পরে তিনি যা বলেছেন তা আমার মনে হয়না কোন ভুল ছিল।এইঅবস্থায় এর থেকে বেশি কিছু আপাতত করা সম্ভব না।কেন না তা আমি আগেই ব্যাখ্যা করেছি। বিডিআর এর সকল দাবি সরকার পূর্ণ করবে এই আশ্বাস দেয়াছাড়া আর তেমন কিছুই করার নাই কারণ চাইলেই একদিনে বিডিআরকে নতুন কমান্ডের আওতায় আনা সম্ভব নয়। তাদেরকে চেইন অফ কমান্ড মেনে নিয়ে আপাতত সেনাবাহিনীর অধিনেই থাকতে হবে। আর তা যদি তারা না মানেন তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য। এবং তা যে কোথায় গিয়ে থেকবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন....।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি বিরোধীদলের আরও অংশগ্রহন আশা করলেও তা না দেখে হতাশ ।তবে সেই সাথে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে এখন পর্যন্ত তারা নেগেটিভ রাজনীতি করছেন না।
দেশের এই চরম পরিস্থিতিতে আমি মনে করি দেশের সকল জনগনকে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরী ....
সেই সাথে সকলকে অনুরোধ , ঘোলা পানিতে যারা মাছ শিকারে নেমেছেন, তাদের চিহ্নিত করুন ও তাদের প্রতিরোধ করুন। মনে রাখবেন এরা দেশ প্রেমিক নয়, এরা ভন্ড ও প্রতারক......
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৬