কিশোর বয়েসেই কচি মনে একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল ।
" পৃথিবীতে যে সব স্থানে সভ্যতার ছোয়া লাগে নি , তারা জানেই না ধর্ম কি , ইসলাম , আল্লাহ , শেষ নবী মুহাম্মদের নাম ও তারা জীবনে শুনে নাই । তারা মারা গেলে কোথায় যাবে ? বেহেস্তে নাকি দোজখে ? "
সত্যি বলতে কারো কাছেই এই প্রশ্নের জবাব পাই নি । কেউ কেউ বলেছেন তারা দোজখে যাবে , কারন তারা মুসলিম নয় । যখন পাল্টা প্রশ্ন করি " তারা তো ইসলামের দাওয়াতই পায় নাই , মুসলিম হবে কিভাবে ? এখানেই উত্তরদাতা নিরব । সবারই শেষ উত্তর টি ছিল " আল্লাহই ভাল জানেন"
সেই সাথে সবার একটাই পরামর্শ ছিল , এই সব প্রশ্ন করতে নেই তাতে করে ইমান হালকা হয়ে যাবে ।
সে সময় আজকের মত গুগল ছিল না , চাইলেই যে কোন তথ্য মুহুর্তে হাতের মুঠোতে চলে আসবে । একমাত্র ভরসা ছিল বই । আর অনেকেই মনে করতেন পাঠ্য বই ছাড়া আউট বই মানেই ছেলে উচ্ছেন্যে গেছে ।
( সব পরিবারে হয়তো এটা মনে করে না কিন্তু বেশীর ভাগ পরিবার গুলোতেই এই ধারনা পোষন করে )
প্রিয় লেখক হেনরী রাইডার হেগার্ডের "মন্টিজুমার মেয়ে" পড়েই ধারনা ধারনা আসে মায়ান সভ্যতার । যার সূচনা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে । কি আশ্চর্য পৃথিবীর মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও ল্যাটিন আমেরিকায় গড়ে উঠেছিল মৌলিক এক সভ্যতার ।যাদের ছিল নিজস্ব সাংস্কৃতি, ভাষা , স্থাপত্য কলা , ধর্ম । ছিল নিজস্ব লিখন পদ্ধতি, শুধু তাই নয় জ্যোতির্বিদ্যা ও গনিতেও তারা বেশ উন্নতি সাধন করেছিল ।
এখানেই প্রশ্ন আসে, বলা হয়ে থাকে ইসলামই একমাত্র সত্যি ধর্ম , আর আল-কোরান পৃথিবীর সব মানুষ ও সর্বকালের জন্য এবং এটা নির্ভুল !
মজার ব্যাপার হচ্ছে কোরান বা হাদিসের কোথাও সেই মায়ান সভ্যতা নিয়ে একটি বাক্য পর্যন্ত নেই । বহু বার কোরানে বলা হয়েছে আল্লাহ সর্বজ্ঞানী , আর সেই সর্বজ্ঞানীর চোখ এড়িয়ে গেল বিশাল একটা সভ্যতা ।
১৫১৯ খৃষ্টাব্দে স্প্যানিশ আগমনের পূর্বে মায়ানদের কাছে সেটাই ছিল তাদের পৃথিবী যেমন টা মুহাম্মদ মনে করেছিলেন চীন পৃথিবীর শেষ প্রান্ত । যে কারনে জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি চীন যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
জ্ঞান অর্জনের কথা থাক , আসুন বিশাল এক জনগোষ্ঠী নিয়ে ভাবি । ইসলামের জন্মলগ্ন থেকে ১৫ শতক পর্যন্ত কত মায়ান কালেমা বিহীন কাফের হয়ে মারা গেছে ? আমার এই ছোট্ট মাথায় সেই হিসেব করা অসম্ভব । তবে নিশ্চই আল্লাহ নামক সর্বজ্ঞানী এটার সঠিক হিসেব জানেন ।
এই আধুনিক যুগে জিব্রাইল ফেরেস্তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে , সর্বজ্ঞানীর কাছে প্রশ্ন করার উপায় নেই । তাই নিজেই ভাবছি শেষ বিচারের দিন যখন সর্বজ্ঞানী আল্লাহ মায়ানদের জিজ্ঞেস করবে " কেন ইসলাম গ্রহন কর নাই , কেন কাফের অবস্থায় মারা গেলে ? তখন যদি মায়ানরা উত্তর দেয় আমরা ইসলামের দাওয়াতই পাই নি , ইসলাম গ্রহন করবো কিভাবে ?
আল্লাহ কি তখন মুহহামদ কে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবেন ? কারন ইসলাম প্রচারের দায়ীত্ব তো তার কাছেই ছিল । নাকি মুহাম্মদ বলবে হে আল্লাহ তুমি তো নিজেই ল্যাটিন আমেরিকার কথা জানো না , তাহলে সেটা আমি জানবো কিভাবে ?