- আমি পুরো পেমেন্ট ছাড়া কাম করি না , বাজারে আমার নাম ডাক আছে । ট্যাকা নিছি আর কাম হয় নাই এই রেকর্ড মাজু কসাইয়ের নাই ।
- বললাম তো , কাজ হবার পরে আপনাকে আরো ১ লক্ষ টাকা বাড়তি দিবো । এখন পাবেন ১ , আর কাজ শেষে ২ ।
- এক কাম করেন , এহন ২ লাখ দেন , কাম শেষ হইলে বাকী এক লাখ দিয়েন । রাজি হইলে মাল ফেলেন নাইলে রাস্তা মাপেন ।
মুন প্রাইভেট কোম্পানীর ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তার সামনে বসে থাকা মানুষ টি কে লক্ষ্য করছে । শীত পড়ে নি তারপরও মানুষটি মাফলার দিয়ে মাথা ও গলা ঢেকে রেখেছে । চোখ দুটো উজ্জ্বল , বেশীক্ষন তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে , মনে হয় চোখের দিকে তাকিয়ে ভিতর টা পড়ে ফেলবে । তবে মধ্য বয়স্ক মানুষটির আত্ববিশ্বাস স্বস্তিদায়ক ।
- আচ্ছা আজ ১ রাখুন , একটা ঠিকানা দিচ্ছি কাল বেলা ৩ টায় চলে আসুন । যাকে শেষ করতে হবে তার বিস্তারিত ও আরো এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসবেন ।
মাহমুদুল হাসান পকেট থেকে একটা রিসিট বের করে তার পিছনে ঠিকানা টা লিখে মাজু কসাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলো ।
-মনে থাকবে তো , বেলা ৩ টায় ।
-আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন , মাজু কসাই এক কথার মানুষ ।
এপার্টমেন্টের সামনে একটি হলুদ টেক্সি ক্যাব থামলো । মাজু কসাই তার বুক পকেটে থাকা ঠিকানা মিলেয়ে দেখছে , হুম ঠিকানা ঠিক আছে । ফ্লাট নাম্বার লেখা আছে সিক্স বি ।
- কামাল , তুই একটু দূরে গিয়া গাড়ির ভিতর বইসা থাক । আমার বেশীক্ষন লাগবো না ।
এই বলে টেক্সি ক্যাব থেকে নেমে সোজা গেটের দিকে পা বাড়ায় মাজু কসাই । দারোয়ান কে ঠিকানা লেখা কাগজ টা দেখাতেই লিফট দেখিয়ে দেয় ।
বেল বাজাতেই দরজা খুললেন মাহমুদুল হাসান ।
-ভিতরে আসুন , আমরা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি ।
-আমরা মানে ?
- দেখুন , আপনি যে কাজে এসেছেন সেটাই করুন , এরচেয়ে বেশী কিছু জানা আপনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ।
মুহুর্তে নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাজু কসাই বিব্রত বোধ করতে থাকে । চার পাশে চোখ বুলায়, পুরো ঘরে এক সেট সোফা ছাড়া আর কিছুই নেই । তার মানে এইখানে কেউ স্থায়ী ভাবে থাকে না ।
এর মাঝে ভিতরের রুম থেকে এক সুন্দরী ভদ্র মহিলা বের হয়ে এলো । মাজু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে , কত হতে পারে তার বয়েস ৩০ কিম্বা ৩৫ ।
- বসুন , আপনাকে নিশ্চই হাসান সব কিছু বলে দিয়েছে ?
- না , সব কিছু বলে নাই , শুধু বলছে একজন কে খতম করতে হইবো । এহন আপনে কন কিভাবে কি করন লাগবো ?
- আপনি প্রোফেশনাল , আপনিই ভাল বুঝবেন কিভাবে করলে ভাল হয় । আমার দরকার এই মানুষটি কে পৃথিবী থেকে বিদায় দেয়া ।
এই বলে ইয়াসমিন একটি ছবি মাজু কসাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয় । মাজু ছবি থেকে চোখ না সরিয়ে বলে উঠে
- ঘটনা হইবো ছিনতাইকারীর হাতে মৃত্যু , ঢাকা শহরে প্রতিদিন ছিনতাই হয় । পুলিশ এইটা নিয়া মাথা ঘামায় না ।
মাহমুদুল হাসান প্রায় উচ্ছাসে বলে উঠে
- চমৎকার ! ম্যাডাম আপনি এর উপর ভরসা রাখতে পারেন , এই কাজে মাজু কসাইয়ের নাম-ডাক আছে ।
মাজু ইয়াসমিনের দিকে তাকায় ,
- এই লোক এখন দেশের বাহিরে , দুইদিন পর দেশে ফিরবে ।
ইয়াসমিন সব বুঝিয়ে বলে , কথার মাঝে মাঝে মাজু কসাই ও জিজ্ঞেস করে তার প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিচ্ছিল ।
কথা শেষ হবার পর হাসান টাকা ভর্তি একটি খাম মাজু কসাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয় ।
- দশদিন সময় নিলাম , নাকে তেল দিয়া ঘুমান । দশদিনের আগেই কাম হইয়া যাইবো । মাজু কসাই এক কথার মানুষ ।
কাক ডাকা ভোর, হেমন্তের হিমেল হাওয়া বইছে । পূর্বদিকে সুর্যমামা লালচে কিরন বিলাচ্ছে । মাজু কসাই সস্তা সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে আকাশ দেখছে । তার সঙ্গী কুনই দিয়ে খোচা দেয় ।
-ওস্তাদ ঐ যে আইতাছে ।
মাজু কসাইয়ের স্নায়ু জেগে উঠে , সে দেখতে পেল একজন মধ্যবয়স্ক লোক ট্রাকসুট পড়ে জগিং করতে করতে এইদিকেই আসছে । ৩ জনের দল টি হাটা শুরু করে ।
মধ্যবয়স্ক লোকটি কিছু বুঝে উঠার আগেই ৩ জন তাকে ঘিরে ধরে , চেংড়া মত একটি ছেলে ছুরি বের করে বলে
-যা আছে বাইর কর ।
আকস্মিক ঘটনায় যখন মধ্যবয়েসি লোকটি নির্বাক , এর মাঝেই মাজু কসাই চাদরের ভিতর থেকে তার প্রিয় ছুরি টি বের করে লোকটির পেটের উপরিভাগে বিদ্ধ করে দেয় । তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নি ।
মাজু কসাই তার নিরাপদ আস্তানায় এসে মানিব্যাগ টি তার হাতে নেয় , খুলেই একটি সাদাকালো ছবি দেখতে পেল । আজকের খুন হয়ে যাওয়া মানুষটির পাশে লজ্জায় অবনত একটি তরুনী । তরুনী টি কে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে । হটাৎ সে ইয়াসমিন কে চিনতে পারলো ।
বিঃদ্রঃ পরদিন পত্রিকায় আসলো , ছিনতাইকারিদের হাতে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ছুরিকাঘাতে খুন ।