ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় শুধু কুখ্যাত আর বিখ্যাত মানুষরাই । যারাই ইতিহাসের পাতায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন তাদের কে পরবর্তি প্রজন্ম হয় শ্রদ্ধা করবে না হয় ঘৃনা । তবে তাদের কর্মফলই তাদের নন্দিত বা নিন্দিত করে ইতিহাসের পাতায় স্বরনীয় করে রেখেছে ।
আজ ২ বিখ্যাত মানুষের কথা বলবো । যাদের সব ধর্ম, বর্ন, জাতির মানুষ স্বরন করে শ্রদ্ধা ভরে ।
সুলতান বায়েজিত (২য়)ঃ অটোম্যান সম্রাজ্যের এই সুলতান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোন ১৪৮১ সালে । সেই সময় অটোম্যান সম্রাজ্যের সুর্য মধ্য গগনে । তবে তিনি বিখ্যাত তার মহানুভবের কারনে ।
১৪৯২ সালে স্পেন এ রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইসাবেলা মুসলিমদের পরাজিত করে সমগ্র স্পেনের ক্ষমতায় বসেন । তারা ক্ষমতায় বসেই আলহামরা ডিক্রি-র মাধ্যমে মুসলিম ও ইহুদীদের বলা হল হয় ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহন কর নতুবা স্প্যানিশ ইনকুইজেশনের মুখোমুখি দাঁড়াও। এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন স্পেনের মুসলিম শাসকগন কিছুটা উদার ছিলেন । যার ফলে নির্বাসিত ইহুদীগন স্পেনে তাদের বিশাল বসতি স্থাপন করেন এবং তারা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারতেন ।
এই কথা সুলতান বায়েজিত এর কানে পৌছায় , এরপর তিনি তার নৌসেনাপতি কেলাম রেইস কে হুকুম দেন স্পেনে যত মুসলিম ও ইহুদী রয়েছে তাদের কে উদ্ধার করে তার রাজ্যে নিয়ে আসার জন্য । নৌবন্দরে তিনি স্বয়ং উপস্থিত থেকে সকল মুসলিম ও ইহুদীদের কে স্বাগত জানান। শুধু তাই নয় সকল কে তিনি তার সম্রাজ্যের সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হবে বলে ঘোষনা করেন ।
তিনি মানুষের ধর্ম নয় সকল কে মানুষ হিসাবে মুল্যায়ন করেছিলেন । কে মুসলিম আর কে ইহুদী তা দেখেন নি ।
সালাদিন আল আইয়ুবীঃ সিরিয়ার , মিশর ও বর্তমানে ইরাকের কিছু অংশ নিয়ে তার সম্রাজ্য । তিনি মুসলিম ধর্মিয় যুদ্ধ জিহাদের নেতৃত্ব দেন । এই জিহাদের ধারাবাহিকতায় ১১৮৭ সালে তিনি জেরুজালেম দখল করেন । তখন পরাজিত খ্রীষ্টানদের ইচ্ছে করলে তিনি হত্যা করতে পারতেন কিম্বা দাস হিসাবে বন্দী করতে পারতেন , কিন্তু তিনি তা না করে সর্বনিন্ম যুদ্ধপন হিসাবে সবাই কে মুক্তির আশ্বাস দেন । যারা তা পরিশোধ করতে পেরেছে তাদের তিনি মুক্ত করে দেন এবং যাদের মুক্তিপন দেবার সামর্থ্য ছিল না তাদের কে তিনি নিজের পক্ষ হতে অর্থ দিয়ে মুক্তিপন পরিশোধ করে মুক্ত করেন । নিঃসন্দেহে সেই সময়ে তা ছিল অবিশ্বাস্য । তিনি মানবতার যে দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত করেছেন যার ফলে ইতিহাসের পাতায় স্বরনীয় হয়ে আছেন ।
বিঃদ্রঃ অনলাইনে ২ ধরনের ছাগু দেখতে পাওয়া যায় । একদল সব কিছুর মাঝে ধর্মের মহিমা খুজে পায় আরেক দল সব কিছুর মাঝে ধর্মের দোষ খুজে বেড়ায় । সাদা কে সাদা আর কালো কে কালো বলা উচিত এটা মনে হয় উক্ত ২ গোত্রের ব্যাক্তিদের মাঝে অনুপুস্থিত ।
যে ২জন শাসকের ঘটনা বললাম, তারা ২জনেই মুসলিম । তারা ধর্মের চেয়ে মানবতা কে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন । যার ফলে তারা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন অন্য রূপে । ধর্মের কারনে অনেক শাসক মানুষের রক্ত ঝরিয়েছেন সেখানে তারা ২ জন কি ব্যাতিক্রম নয় কি ?
যৌক্তিক সমালোচনা অবশ্যই করা উচিত কিন্তু গোড়ামী আর কুসংস্কারের মাঝে যে খুব একটা পার্থক্য নাই সেটা যত তারাতারি মানুষ বুঝতে পারে ততটাই মঙ্গল । মানুষ কে ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে অসন্মান করার মত অমানবিকতা আর কি হতে পারে ? মানুষ কে শুধু মাত্র মানুষ হিসাবেই সন্মান করা উচিত আপনার আমার সকলের । আমাদের বড় পরিচয় আমরা মানুষ আর এই পরিচয়েই সকলে মিলে পৃথিবীটা কে সুন্দর করে গড়ে তুলি .........
ধর্ম নয় জয় হোক মানবতার !!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৩৩