ত্যাল কি?
ত্যাল!! ইহা একটি অতিমাত্রায় তৈলাক্ত শব্দ। মানব জীবনে ত্যালের গুরুত্ব অপরিসীম। ত্যাল ছাড়া একটি দিনও আমরা কল্পনা করতে পারি না। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর থেকে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ত্যালের প্রয়োজন।
মানব জীবনে ত্যালঃ
মানব জীবনে ত্যাল একটি অতি আবশ্যিক উপকরণ। আপনি যত ভালোমত ত্যাল মারতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনার উন্নতি হবে। নিম্নে ত্যাল ও তার অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পারিবারিক ত্যালঃ
সকালে চা এর জন্য বউকে ত্যাল মারা দিয়ে দিন শুরু। তারপর সময়মত নাস্তা পেতে হলে আরো একবার ত্যাল মারুন। এক্ষেত্রে আপনি হলেন ত্যাল দাতা। আবার বউ যখন বাজারের ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে আদুরে গলায় বলবে, "জানপাখি, আজকে গরুর মাংস এনো। তোমার শালা মাংস খেতে চাইছে" তখন আপনি হবেন ত্যাল গ্রহীতা। ঘরের এই ত্যালকে পারিবারিক ত্যাল বলা হয়। পারিবারিক ত্যালে যে কেউ দাতা কিংবা গ্রহীতা হতে পারবেন।
ব্যবসায়ীক ত্যালঃ
বাজারে গেলেন গরুর মাংস কিনতে। কসাই আপনাকে দেখে ডাক দিল,
"স্যার, এইদিকে আসেন। এক্কেবারে সিনার মাংস।"
"গরুর নামে মহিষের মাংস দাও না তো?"
"কি যে বলেন না স্যার, আপনার মত মানুষের কাছে কি আমি ভেজাল জিনিশ বেচতে পারি! নিয়া যান স্যার, আপনে কমায়া দিয়েন, ২০ টাকা আপনের লাইগ্যা ছাড় দিলাম।"
বুঝতে পেরেছেন কি, কসাই আপনাকে কি সূক্ষ্নভাবে ত্যাল মেরে দিল।
কর্পোরেট ত্যালঃ
চাকরীর প্রমোশন দরকার? বসকে ত্যাল মারা ছাড়া উপায় নাই। কাজের ফাঁকে হঠাং হঠাত্ বসের সাথে দেখা হলে, বলে ফেলুন, "হলুদ শার্টে আপনাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে বস।" অথবা "আপনার রুচির প্রশংসা করতে হয়, হলুদ প্যান্ট আর লাল শার্টে আপনাকে বলিউডের হিরোর মত লাগছে বস!!" কর্পোরেট ত্যালে সবসময় কর্মচারীরা দাতা এবং বসেরা গ্রহীতা হয়ে থাকেন। একজন কর্মচারীর বেতন-প্রমোশন তার বসের তৈলাক্ততার উপর নির্ভর করে। বস যত তৈলাক্ত থাকবেন প্রমোশন তত তাড়াতাড়ি হবে।
রাস্তাঘাটে ত্যালঃ
আজকাল ঘর কিংবা অফিসের গন্ডি পেরিয়ে ত্যাল রাস্তাঘাটেও অবদান রাখতে শুরু করছে। এক্ষেত্রে তৈলাক্ত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। ত্যাল দাতারা ভাব জমানোর নামে আপনাকে কিছুক্ষণ ত্যাল মারবে, তারপর আপনাকে কিছু খাইয়ে ত্যালের দাম উসুল করে নেবে।
প্রেমিকাকে ত্যালঃ
এই ত্যাল মূলত অবিবাহিত পুরুষদের জন্য। বউয়ের বেলায় কথার ত্যালে পার পেয়ে গেলেও এ ক্ষেত্রে তা এত সহজ না। এক্ষেত্রে চকলেট, শো-পিস, বা থ্রি-পিস কে প্রভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়।
ঘুমের আগে আগে ত্যালঃ
এক্ষেত্রে তৈলমর্দন সকলের চক্ষুর আড়ালে হয়ে থাকে। এবং............................................................................. স্যরি, ১৮+ কথাবার্তা। লেখা গেল না।
রাজনৈতিক ত্যালঃ
ইহা এমন এক জিনিশ, কে কখন কাকে মারে তা বোঝা মুশকিল। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট পাতি নেতারা মধ্যম সারির নেতাদের তৈলাক্ত করার প্রয়াসে লিপ্ত থাকে। আবার মধ্যম সারির নেতারা বড় নেতাদের ত্যাল মারে। বড় নেতারা নিজ নিজ নেত্রীকে ত্যাল মারে । তবে রাজনৈতিক ত্যাল সবসময়ই ভেজালযুক্ত হয়ে থাকে। যেমন, মগবাজারী ছাগু সমিতি সবার সামনে নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করলেও গোলাপী বেগমকে নমঃ নমঃ করে থাকে।
আন্তর্জাতিক ত্যালঃ
এই প্রকারের ত্যালের সাথে সাধারণ মানুষের কোন সম্পৃক্ততা নাই। এছাড়াও এই ত্যাল এর পিছনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ পায় না। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে দেশের প্রধানদের করমর্দনরত হাস্যোজ্জল ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়ে থাকে।
বইয়ের বান্দর এবং তার তৈলাক্ত বাঁশঃ
মানব জীবনে ত্যাল মারা শেখা হয় এই বান্দর ও তার তৈলাক্ত বাঁশের মাধ্যমেই। "পাঁচ মিটার লম্বা বাঁশে একটি বানর মিনিটে এক মিটার উঠে আধা মিটার পিছলে নামে। বাঁশের মাথায় পৌছুতে বানরের কতক্ষণ লাগবে?" এই টাইপের অংক করতে করতেই ত্যালের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে থাকে।
ত্যালের প্রভাবকঃ
মূলত ত্যাল অনেক প্রকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হল কথার মাধ্যমে যে ত্যাল দেয়া হয়ে থাকে তা। তবে আজকাল মুখের কথায় আর চিড়া ভিজে না। ঘরের গিন্নির বিস্বাদ রান্না খেয়েও সেটাকে অতিসুস্বাদু সার্টিফিকেট দিতে হয়। তার উপর তাকে রান্না শেখার বই, শাড়ি, গয়না ইত্যাদি উপঢৌকন না দিলে সম্মান থাকে না।
অফিসের বসের বেলায়ও বর্তমানে একই অবস্থা। সব ক্ষেত্রেই উপঢৌকন দেয়া রীতি হয়ে গেছে। এইসকল ত্যাল ছাড়া আপনার কাজ কখনোই হবে না।
পরিসংহারঃ
এত এত ত্যালের ব্যবহারের জন্য মাঝে মাঝে সরকার ত্যালের দাম বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে বাস ভাড়া, রিক্সাভাড়া, ও মাছ-সব্জির দাম বেড়ে যায়। এতকিছুর পরও ত্যালই শক্তি, ত্যালই বল। জয় বাবা ত্যালানাথ, জয় বাংলা, জয় শেখ হাসিনার পোলা।