দুনিয়াতে আমি যেসব যায়গা সবচেয়ে বেশী অপছন্দ করি, হাসপাতাল তার মধ্যে অন্যতম । যদিও বাবার চাকরীর কারনে গত ১২ বছর একটা হাসপাতাল এরিয়াতেই থাকি । কোন আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে তো যাই ই না, নিজের অসুখের জন্যও আমার হাসপাতালে যেতে ভাল লাগে না । কিন্তু গতকাল কোনভাবেই বাচতে পারলাম না । ছোট ভাইয়ের অসুখ, বাবা যাইতে পারবে না । তাই আমাকেই যাইতে হল । হাসপাতালের অবস্থান ধোলাইখালে । আমি আবার ঢাকার জ্যামের হিসাব করে অনেক আগেই রওনা দিছি । ভাগ্যদেবী যে হঠাত্ আমার প্রতি এত সদয় হবে সেইটাতো আগে জানতাম না । রাস্তায় নামার পরে দেখি গাড়ির পিছে যেন জেট ইঞ্জিন লাগাইয়া দিছে । ফাঁকা রাস্তা আর পিছে জেট ইঞ্জিন, ড্রাইভারের আর কি লাগে !
ডাক্তার আসার দুইঘন্টা আগেই আমি হাসপাতালে উপস্থিত । নতুন টেনশন । এই দুইঘন্টা আমি কিভাবে খরচ করি ! আমার কোন গার্লফ্রেন্ডও নাই যে মোবাইলে লুতুপুতু মার্কা কথা বলে টাইম পাস করব । আবার ঐ এলাকায় এমন কোন পরিচিতও নাই যে আড্ডা দিব । ভাবলাম নিচে গিয়া দুইটা সুখটান মাইরা আসি ।
এত বড় হাসপাতালের সিড়ি দুইহাত চওড়া । আমি আবার দৈর্ঘ্য প্রস্থে একটু বেশী, তাই দুইহাত সিড়ির সোয়া একহাত আমার দখলে । উঠা নামায় তিনজনের সাথে ধাক্কা খাইছি আর প্রতিবারই লোকগুলা ঘাড় ঘুরিয়ে যেন এলিয়েন দেখছে এমনভাবে তাকাইছে আমার দিকে । মনে মনে এই সিড়ির কারিগর আর বিল্ডিং এর মালিকরে কয়েকটা চ-বর্গীয় গালি দিলাম ।
ভাগ্যদেবীর নজর কালকে আমার উপর ভালভাবেই পড়ছিল । সিড়িতে দেখলাম দুইটা মেয়ে, বসন্তের শাড়ী পড়া আর বেসম্বভ রকমের সুন্দর সাথে অসাম টাইপের .......... । ( ) আমি নিচে নামতেছি, তারা উপরে উঠতেছে । দুই জোড়া চোখ আমার উপর, আর আমার চোখ এলোপাথারি ঘুরতেছে । তাদের দিকে তাকাইতে পারতেছি না । তবে এইবার চিপা সিড়ির কারিগরকে আগে দেওয়া সকল গালি উইথড্রো করে কয়েকবার ধন্যবাদ দিলাম । কারণ ? বেসম্বভ সুন্দর টু দি পাওয়ার ফোরের সাথে হালকা একটা ধাক্কা যে খাইছিলাম । ( :!> )
সুখটান শেষে তিন তলায় উঠছি । দেখি যে সেই দুই মেয়ে আমার ছোট ভাইয়ের পাশে বসা । আহা ! কপাল আমার এত ভালো ! আমিও চুপচাপ আরেক সাইডে বসছি । তারা আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলতেছে, আমি গম্ভীর মুখে মোবাইল টেপার ভান করে তাদের কথা শুনতেছি । কী সুমধুর কন্ঠস্বর ! যাক দুই ঘন্টা সময় ভালই কাটবে । একটু পরপর আড়চোখে তাদের দিকে তাকাই, তারাও আমার দিকে তাকায় । ছয় চোখের মিলনে রোমান্টিক পরিবেশ । হঠাত্ শুনি একজন আমাকে ডাক দিল । ভাগ্যদেবী ! তুমি এতদিন কোথায় ছিলে ? ( )
নামধাম পরিচয় শেষে জানলাম তারাও একই ডাক্তারের কাছেই আসছে । উতলা মন কি করি এখন ! কথা খুঁজে পাইনা । ঝোপ বুঝে কোঁপ মারলাম, 'শাড়ীতে আপনাদেরকে অনেক সুন্দর লাগতেছে । তবে কপালে একটা টিপ থাকলে আরও সুন্দর লাগত ।' ( ) দুইজনেই দেখলাম একটু লজ্জা পাইল । আরও কিছুক্ষণ এমন রোমান্টিক কথা বলার পর বরফ গলছে । চারিদিকে খালি রোমান্টিকতা । একঘন্টা পাস করছি । তবে মেয়ে জাতি বাচাল, একবার শুরু করলে থামতে চায় না । থাক, সুন্দরীদের দোষ ধরতে হয় না । তাদের সবকিছুই সুন্দর । শুরুটা আমি করছি, শেষ করাটা তাদের হাতে । শেষ না করুক, আমার আপত্তি নাই । অলরেডী আপনি থেকে তুমিতে নাইমা গেছি । তবে ছোট ভাই যেন একটু বিরক্ত । মোবাইল নাম্বার চাইব কিনা ভাবতেছি, এর মধ্যে একজন নিজ থেকেই আমার নম্বর চাইল । ওরেএএ ! এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল । প্রেম বুঝি হয়েই গেল । যাক এইবারের ভ্যালেন্টাইনে আমিও লুতুপুতু মার্কা ষ্ট্যাটাস দিব । কোলবালিশ এর দিন শেষ । ( ) তবে ভাবতেছি কোনজনেরে প্রপোজ করব । এরমধ্যেই একজন জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা তুমি কিসে পড় ?' আমারও কনফিডেন্ট উত্তর, 'এইবার অনার্স ফার্ষ্ট ইয়ারে, তোমরা ?' 'তাই নাকি ? আমরাতো তাইলে তোমার সিনিয়র । আমরা এইবার সেকেন্ড ইয়ারে ।' ( )
হায় ভাগ্যদেবী ! এই ছিল তোমার মনে ? এখন আমাকে কে দেবে আশা, কে দেবে ভরসা ? গত একঘন্টার সব স্বপ্ন এক কথাতেই ধূলিসাত্ হয়ে গেল । ধরণী তুমি দ্বিধা হও, এই মুখ আমি কই লুকাই!
গত ভ্যালেন্টাইনে ষ্ট্যাটাস দিছিলাম "সবার আছে গার্লফ্রেন্ড, আমার আছে কোলবালিশ । আজকে সারাদিন তারে বুকে নিয়া ঘুমাব ।" আজকে সেই কোলবালিশও ছোট ভাই দখল করে নিছে । নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে আমার জন্য কিছুই নাই । ( )
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৯