চিলেকোঠার ছোট্ট বারান্দায় পা মুড়ে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকাই। এক চিলতে নীল মুহুর্তেই আমায় ছুঁয়ে দিয়ে যায় । নীল হওয়া হৃদয়ে নীলপরী হয়ে ভর করে একটি স্বত্তা। অস্তিত্বে ধরা দেয়, স্পর্শ দেয়। ক্রমশ একটি চরিত্র হয়ে উঠে। সেই চরিত্র মায়ার মাদকতায় ভুলিয়ে দেয় অনেক জাগতিক আয়োজনকে। বেঁচে থাকার অভিনয় নিয়ে যে জীবন তা মুহুর্তেই আনন্দময় হয়ে উঠে । তখনই উপলব্ধি হয় যদি মৃত্যু আলিঙ্গন করে তবে পাওয়া হবে না তোমাকে, তোমার সঙ্গে জাগা হবে না খোলা আকাশের নিচে পূর্নিমাস্নাত রাত। পাশের গজিয়ে উঠা উচু ভবনের এক চিলতে বারান্দা থেকে চোখ চলে যায় আকাশের দিকে।
অভিমানে তোমার চলে যাওয়া
তোমার জন্য সব ভুলে থাকা
জীবন মানে বাঁচার অভিনয়
মৃত্যু মানে তোমায় না পাওয়ার ভয়
তুমি চরিত্র রং, রূপ বদলে দেয় মনে মনে। মন থেকে মনে, নিউরনে শিহরন জাগিয়ে প্রহর ভাঙে। অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষার। কতোকিছুইতো দেখি, কতো রূপ, বর্ণ, গন্ধ। সব কিছুতেই তোমার প্রচ্ছন্ন ছায়া আমায় তাড়িত করে। তোমার মতো আর কোন কিছুকেই ভালো লাগে না।
কাচের দেয়ার ভাঙার মতো
তোমায় ভাঙি ইচ্ছেমতো
আমার কেন ভালো লাগে না
কোন কিছু তোমার মতো
না দেখা সৌন্দর্য্য যা উপলব্ধির শিয়রে মাথা পেতে দেয়, তা অস্তিত্বের কাছে অপ্রকাশিত। এইসব অপ্রকাশিত বোধগুলো আলোকিত হয়ে তোমাকে চিনিয়ে দেয়, বাতাসের মিহি গন্ধের মতো তোমার গন্ধকে মিশিযে দেয়। তুমিতে-তোমাতে আমার আটপৌরে স্বপ্নগুলোও তোমার মতো হয়ে গেছে।
যখন তুমি একা থাকো
আগুন জ্বলে আলোর মতো
নিজের কাছে লুকিয়ে রাখি
স্বপ্নগুলো তোমার মতো
অবচেতন সত্ত্বার সাথে কথা হয়, হাসি ঠাট্টা হয়, কথা হয় কাটাকাটি। চেতন সত্ত্বা তখন ঠোট বাকিয়ে বিদ্রুপ করতে চায়। শরতের মেঘের মতো গাঢ় হয়ে উঠা অভিমানগুলোকে তখন ঘুরে বেড়াতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে নীড় খুঁজতে থাকে। নদীটি তবে ঠাই দেয় শেষে! শুকিয়ে যাওয়া নদীপথ এগিয়ে চলে। চলতে চলতে নাগরিক রাস্তায় ইটপাথরে ঠুকোঠুকি লাগে। পথ বাড়তে বাড়তে বারান্দায় গিয়ে থামে। সেই চিলেকোঠার বারান্দা। বৃষ্টিটা তখনই নামে।
আমার শরীরজুড়ে বৃষ্টি নামে
অভিমানের নদীর তীরে
শুধু তোমায় বলতে ভালোবাসি
আমি বারেবার আসবো ফিরে
পুনশ্চ : আনিলার একটি গান আছে ‘স্বপ্নগুলো তোমার মতো’ নামে। গানটি শুনে যে অনুভুতি হলো তা ধরে রাখার প্রয়াস চালালাম। সবারই মনে হয় একটি করে কল্পিত তুমি চরিত্র থাকে। জাগতিক স্বপ্নের অনেকটা অংশজুড়ে সেই তুমি চরিত্রের বসবাস।