somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (নবম পর্ব)

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন বিরতিতে ছাত্রীর বাসায় পড়াতে গেলাম। পড়ানোর রুমটিতেই ছাত্রী বসেছিল। আমার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাড়িয়ে আমাকে বসতে দিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর কাপড় বদলিয়ে আসলো ছাত্রী। মেয়েলী সেন্টের গন্ধে ভরে গেল রুম। কিছুক্ষণ বসার পর ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম কিছু একটা বলতে চায়। চোখেমুখে চিন্তার আভাস। আমার নিরবতা দেখে এক পর্যায়ে সে বলে ফেললো-
স্যার কি অসুস্থ্য ছিলেন? এতোদিন আসেননি যে?
না মোটেও অসুস্থ্য ছিলাম না। কিছু কাজে আটকা পড়েছিলাম। তাই এতোদিন আসা হয়নি। তা তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে? সবকিছু ঠিকমতো হচ্ছেতো?
জ্বী! ঠিকমতো হচ্ছে, স্যার একটা কথা বলি?
হুমমম। বলো।
আপনার বাসার ঠিকানাটা বলবেন? আমি লিখে রাখি।
হঠাৎ বাসার ঠিকানা? কি কারণে? প্রশ্নটা করে বুঝলাম এই ধরনের প্রশ্ন করা এই মুহুর্তে উচিত হয়নি। বেচারি কিইবা উত্তর দিবে! আমার প্রশ্ন শুনেই হয়তো সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো-
আপনি বলেন স্যার। আমি লিখে রাখছি।
থেমে থেমে বাসার ঠিকানাটা বললাম। ঠিকানা বলা শেষে জানিয়ে দিলাম বেশিরভাগ সময় আমি আসার বাইরে থাকি। এই জানানোর পিছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করেছে তা হলো, ছাত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়া বাসায় খুঁজতে না আসাই ভালো।


বলেই পড়ানোর দিকে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু খেয়াল করলাম পড়াতে ছাত্রীর মন নেই তেমন। সে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও চুপ করে থাকলাম। ছাত্রীর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো সে কিছু একটা বলতে চায়। তবে অবস্থা যা তাতে কিছু বলার সুযোগ না দেওয়াই ভালো। তাই একটার পর একটা নতুন নতুন বিষয় আনতে লাগলাম। একটু সময় থামতেই ছাত্রীর আবদার-
স্যার আপনাকে একটা ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবো যদি কিছু মনে না করেন।
আচ্ছা বলো। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম।
সেদিন শপিং কমপ্লেক্সে আপনার সঙ্গে কে ছিল?
আমি চুপ করে গেলাম প্রশ্ন শুনে। এই মেয়ে বিষয়টা এতোদিন মনের ভিতর রাখছে, কিছুই বলেনি। এতোদিন পরে এসে হঠাৎ করে বিষয়টা নিয়ে বললো কেন ভাবতে লাগলাম। আমার নিরব থাকা দেখেই হয়তো সে বললো-
ঠিক আছে স্যার বলতে হবে না। আজকে আর পড়বো না। আমার ভালো না লাগছে না।
আমি অন্যমনস্ক হয়ে সায় দিয়ে দিলাম। বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়।


ফেরার পথে অবন্তীদের বাসায় গেটে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম। দ্বৈত ভাবনা চাপলো মনে। একটা ভাবনা যাবো ; আরেকটা যাবো না অবন্তীর বাসায়। এ যেন অনেকটা 'মি অ্যান্ড মাইসেল্ফ' ভাবনা। 'মি' বলছে অবন্তীর সাথে দেখা করে যাও আর 'মাইসেল্ফ' বলছে, কি হবে দেখা করে? তোমাদের মধ্যকার সম্পর্কের মাত্রাই পরিস্কার নয়। তারপরেও দ্বৈত ভাবনাকে পিছনে ফেলে গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকে পড়লাম। বড় লনটি পার হয়ে বাগানে চলে গেলাম। বিকালের এ সময়টিতে অবন্তী সাধারণত বাগানের পাশটাতেই থাকে। আমার ধারণা ঠিকই হলো। অবন্তীকে বাগানের মধ্যেই পাওয়া গেল। কবিতার বই পড়ছে। আমাকে দেখেই সুন্দর করে হাসলো।
বসেন। এতোক্ষণে একজন শ্রোতা পাওয়া গেল। কবিতা আবৃত্তি করার ইচ্ছা হচ্ছে খুব, কিন্তু শ্রোতা পাচ্ছিলাম না।
জবাবে কোন কথা না বলে আমি শুধু মুচকি হাসলাম।
অবন্তী কথা না বাড়িয়ে কবিতা বলা শুরু করলো-

Come to me in the silence of the night;
Come in the sparkling silence of a dream;
Come with soft rounded cheeks and eyes as bright
As sunlight on a stream;
Come back in tears,
O memory, hope, love of finished years.

O dream how sweet, too sweet, too bitter sweet,
Whose wakening should have been in Paradise,
Where souls brim full of love abide and meet;
Where thirsting longing eyes
Watch the slow door
That opening, letting in, lets out no more.

Yet come to me in dreams, that I may live
My very life again though cold in death:
Come back to me in dreams, that I may give
Pulse for pulse, breath for breath:
Speak low, lean low,
As long ago, my love, how long ago.

অবন্তীর কন্ঠে কবিতাটি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। ক্রিস্টিনা রোসেটির কবিতাটির নাম ইকো। ক্রিস্টিনা রোসেটির কিছু কবিতা আগেই পড়া আছে আমার। ইংরেজ এই মহিলা দারুন সব রোমান্টিক কবিতা লিখেছেন। কবিতার নামটির মতোই কিছু ভাবনা অনুরণিত হলো মনের ভিতরে। আমি আমার মুখস্থ করা কবিতাটা বলে যেতে লাগলাম। রোসেটির এই কবিতাটির নাম অ্যান এন্ড।

Love, strong as Death, is dead.
Come, let us make his bed
Among the dying flowers:
A green turf at his head;
And a stone at his feet,
Whereon we may sit
In the quiet evening hours.

এইটুকু বলতেই থামিয়ে দিল অবন্তী। মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো-
আরে আপনার দেখি এই কবিতা মুখস্থ!
হুমমম, কবিতাটি নিয়ে একসময় অনেক ভাবতাম। একসাথে বসে থাকার শান্ত বিকালের কথা ভাবতাম।
অবন্তী আমার কথাগুলো শুনে কি ভাবলো সে জানে। হঠাৎ করেই চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পর বললো-
আচ্ছা শুনেন, আমরা আগামীকাল বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছি। বলতে পারেন ফ্যামিলি ট্যুর। বাবা অনেকদিন ধরেই বলতেছিল। কিন্তু আমার ইচ্ছা করছিল না। শেষতক রাজি হতে হলো।
ওহ আচ্ছা। আমি সংক্ষেপে বললাম।
সংক্ষিপ্ত উত্তর শুনে অবন্তী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।তারপর কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বললো,আসলে আপনাকে জানাবো জানাবো করে জানানো হয়নি। আমরা প্রথমে ইংল্যান্ডে যাবো। সেখান থেকে প্যারিস। আপাতত এক মাস থাকার ইচ্ছা আছে। তবে সময় বাড়তেও পারে। ইংল্যান্ডে আমার এক খালাতো ভাই থাকে।


অবন্তীর কথা শুনে যাচ্ছিলাম, নিজে চুপ করে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর সে বললো-আচ্ছা আপনার মোবাইল ফোনের নাম্বারটা দেন। বিদেশ থেকে আপনাকে কল করবো। দেশে ফিরে আসার আগে আপনাকে জানাবো।

নিজের মোবাইল ফোনের নাম্বারটা দিলাম। ফ্যামিলি ট্যুর সমন্ধে আরো কথা শুনে অবন্তীদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাস্তায় হাটার সময় অবন্তীর সাথে সম্পর্কের মাত্রা বিষয়ক ভাবনা আবারো ঝেকে ধরলো। বাসায় ফিরে ভাবলাম রোজনামচার বৈকালিক সময়ের একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এখানেও শুরু হলো দ্বৈত ভাবনা, অর্থাৎ ‘মি অ্যান্ড মাইসেল্ফ’ এর ভাবনা বিষয়ক দ্বন্ধ। ‘মি’ ভাবছে, সামনের অনেকগুলো বিকালে অবন্তীর সাথে কথা হবে না, গল্প করা হবে না। ইচ্ছা করলেই অবন্তীদের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হওয়া যাবে না। ‘মাইসেল্ফ’ ভাবছে, তারপরেও ঠিকই সকাল হবে, মধ্যদুপুর গড়িয়ে বিকাল নামবে। কোন কোন বিকাল করে তুলবে বিষন্ন। ঠিকই সব ছাপিয়ে রাত নামবে। এইতো রোজনামচা। সবকিছু সময়ের সাথে স্বাভাকি হয়ে যায়। প্রকৃতি কি সত্যিই তবে শুন্যতা পছন্দ করে না!

(চলবে......)

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

পঞ্চম পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

সপ্তম পর্ব

অষ্টম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:০৬
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×