শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারের মূল বেদির সর্বোচ্চ ধাপে উঠে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠার নিয়ম না থাকলেও খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নেতারা মূল বেদিতে উঠে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ মূল বেদির নিচে দাঁড়িয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দলটির সিনিয়র নেতারা শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে পড়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করা হয়েছে।
একুশের প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদদের বেদিতে ফুল দেন। তারপর ফুল দেন স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এরপর ফুল দিতে আসেন ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান। কূটনীতিকদের পর ফুল দেয় ক্ষমতাসীন ১৪ দল। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, এ্যাটর্নি জেনারেলও ফুল দেন প্রথম প্রহরে।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর পরে শহীদ মিনার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার অমর একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথ দিয়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান। রাত ১টা ২৮ মিনিটের দিকে তারা শহীদ মিনারের মূল বেদিতে যান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটের সদস্যরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাদের শহীদ মিনারের মূল বেদির কাছে নিয়ে যান। এ সময় তারা বিএনসিসি সদস্যদের বাধা সত্ত্বেও মূল বেদির ওপরে উঠে যান এবং কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ সময় আরও ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেকে। ফুল দিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ দিকের পথ দিয়ে বের হয়ে যান খালেদা জিয়া।
রীতি অনুযায়ী খালি পায়ে দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে মূল বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি রেখে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান সবাই। কিন্তু খালেদা জিয়া দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারের মূল বেদির সর্বোচ্চ ধাপে উঠে শ্রদ্ধা জানান। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান কাজল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন- ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই মূল বেদির নিচে দাঁড়িয়ে মূল বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং এটাই নিয়ম। আর বিএনপির চেয়ারপার্সনসহ তাঁর দলের সবাই সেই মূল বেদি, যেটিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়- সেটির ওপর দাঁড়িয়ে ফুল দিলেন! আসলে তাঁরা কি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল? নাকি তাদের অপমান করতে এসেছিল?’
পল্লব হোসাইন ফেসবুকে লিখেছেন- ওরা কেন লোক দেখানো শ্রদ্ধা জানাতে যায়? যাদের মনে শহীদদের জন্য শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারা কিভাবে শহীদ মিনারকে সম্মান করবে?
সাইদুর রহমান উজ্জ্বল তাঁর ফেসবুকে লিখেন- ভাষা শহীদের অপমান করার জন্যই শহীদ মিনারে গিয়েছেন খালেদা। কারণ ম্যাডামের মনের ভাষা তো উর্দু।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দলটির নেতারা শহীদ মিনারের মূল বেদিতে উঠে পড়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন এবং যারা নিজেদের জাতীয় নেতা বলে দাবি করে, তাদের কাছ থেকে শহীদ মিনারের অবমাননা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি শহীদদের অবমাননার শামিল। শহীদ মিনারে এসে কিভাবে ফুল দিতে হয় এবং শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করে ফুল দিতে আসা উচিত।’
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২০