দ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদার মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ভারতের টাকি ও বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেয়া কে এম নূরুল হুদা মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ নম্বর সেক্টরের আওতায় পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়ে মুক্ত করেছেন একাধিক থানা ও জেলা শহর। পটুয়াখালী জেলার বাইরে বরিশালেও একাধিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি।
এছাড়া তিনি ঊনসত্তর ও সত্তর সালের উত্তাল দিনগুলোতে ছাত্রনেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খ-ে মুক্তিযুদ্ধকালীন তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী সময়ে তিনি কমান্ডার হুদা নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। পটুয়াখালী জেলার বহু মানুষ এখনও তাঁকে এ নামেই চেনে। পটুয়াখালী জেলার পাকসেনা, রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি, আলশামসসহ দালালদের কাছে একাত্তরে এ নামটি ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম ছিল। পাকসেনা ও তাদের সহযোগীরা বহু জায়গা থেকে কমান্ডার হুদার নাম শুনে পালিয়ে গেছে, এমন অনেক ঘটনা এখনও এলাকায় প্রচারিত।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের নগরেরহাট গ্রামে জন্ম নেয়া কে এম নূরুল হুদা ২০১৩ সালের মার্চ মাসে জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদককে ঘরোয়া পরিবেশে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, নেতৃত্ব দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ সাক্ষাতকার দেন। গ্রামের বাড়িতে বসে দেয়া ওই সাক্ষাতকারে তাঁর জীবনের নানা কথা উঠে আসে। ওই বছরের ২৩ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে তাঁর ছবিসহ সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় কে এম নূরুল হুদার ওই প্রতিবেদনটি আজ নানা কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ওই প্রতিবেদনে কেবলমাত্র পানপট্টি যুদ্ধ প্রাধান্য পেয়েছিল। পানপট্টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল পাকসেনা ও রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে। এটি পটুয়াখালী জেলায় পাকসেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র দীর্ঘ সন্মুখ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে পাকসেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কয়েকজন পাকসেনা মারা গিয়েছিল। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ আহত পর্যন্ত হননি। ওই যুদ্ধের পরে বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধের গোটা প্রেক্ষাপট পাল্টে গিয়েছিল।ওই সাক্ষাতকারে কে এম নূরুল হুদা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জানান, একাত্তরের শুরুতে তিনি তখন ২৩ বছরের যুবক। একাত্তরের সাত মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষে হলে ফিরতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোঃ মনিরুজ্জামান তাকে ঢাকা ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন। তৎক্ষণাত তিনি হল ছাড়েন।
তাঁকে নিয়ে গর্বিত বাউফলের মানুষ ॥ বাউফলের সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করায় তাঁর এলাকার মানুষ দারুণ খুশি হয়েছেন। তারা মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছেন। একজন সৎ, সাহসী, দেশপ্রেমিক ও অতি সাধারণ পরিবারের এই ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করায় বাউফলের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
নূরুল হুদা দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করলেও এলাকার প্রতি ছিল তার অদম্য টান। সময় পেলেই ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়িতে। বিভিন্ন সামাজিক কাজেও তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তাঁর বাবা আবদুর রশিদ খানের নামে একটি ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজ থেকে এলাকার ছেলেমেয়েরা এখন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিকালীন সময় কখনও তার মধ্যে কোন ধরনের অহমিকা তৈরি হয়নি। সদা হাসোজ্জ্বল মানুষ হিসেবে তিনি এলাকায় পরিচিত। মতাদর্শের বাইরে থেকে তিনি কাজ করেছেন। তার সময় দেশের মানুষ যাতে নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, এ প্রতাশা করেছেন এলাকার মানুষ। বাউফলের এমপি ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, একজন সৎ, যোগ্য, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ও বাউফলের সন্তান কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করায়, এলাকার মানুষের মতো তিনিও আনন্দিত। তাঁকে নিয়ে বাউফলের মানুষ এখন গর্বিত।
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার বাড়ি নওমালা ইউনিয়নের নওমালা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুর রশিদ খান। তিনি পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে কে এম নূরুল হুদা হলেন চতুর্থ। তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তাঁর ছেলে ড. কামরুল খান ইঞ্জিনিয়ার। দুই মেয়ের মধ্যে ড. শাহিদা পারভিন লুনা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, তার বসবাস আমেরিকায়। অপর মেয়ে সাজিয়া পারভিন ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছেন। তিনিও ভাইয়ের সঙ্গে কানাডায় বাস করছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী হোসনেয়ারা হুদা ঢাকার উত্তরা এবং তাঁর আমেরিকা প্রবাসী বড় ভাই আবু তাহের খান ও ছোট ভাই নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম নাসির উদ্দিন খান সবুজ গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।
সূত্র
বিএনপির নতুন চিৎকারের শিরোনাম 'বিতর্কিত ব্যক্তিকে সিইসি করা হয়েছে! কারন তিনি জনতার মঞ্চের সঙ্গে ছিলেন। আওয়ামী লীগ, সিইসি সবাই মিলে এখন সেই সময়ের উত্তাল গণ আন্দোলনের সাফল্য সৃষ্টির মঞ্চ, জনতার মঞ্চকে অস্বীকার করে যাচ্ছেন! অথচ ১৯৯৬ সালের সেই উত্তাল গন আন্দোলনের সেই সময়ে সেই মঞ্চে যখন সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সব অফিস আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন এর পরপরই
খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন। এমনটি এর আগে এরশাদের পতনের আগেও হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও হয়েছিল। জনতার স্বার্থেই ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ সন্ধিক্ষণে এমন আমলা-কামলা সব যখন এক কাতারে এসে দাঁড়ায় তখনই একটা দেশে এক ধরনের বিপ্লব সংঘটিত হয়। জনতার মঞ্চ ছিল তেমন একটি বিপ্লব সৃষ্টির প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট করতে গত কয়েক বছর বিএনপি-জামায়াততো কম চেষ্টা করে নাই। কিন্তু পারেনাই কারন এসব দল কখনোই জনতার আন্দোলনের দল না। ক্যান্টনমেন্টে সৃষ্ট দল দিয়ে আর যাই হোক জনতার আন্দোলন হয়না। এখানে সমবেত নেতাকর্মীরা এসেছেন নানা স্বার্থ ধান্ধায়। জনতার স্বার্থে না। জাতির বিশেষ সন্ধিক্ষণে জনতার মঞ্চে এসে জনতার কাতারে দাঁড়ানো মুক্তিযাদ্ধা নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করাকে তাই আমি প্রশংসা করি। শুধু রাজাকার প্রেমীরাই এর বিরোধিতা করতে পারে। বিএনপিকে আরেকটা প্রশ্ন, তাদের কাছে বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিরপেক্ষতার মানদন্ড কী? সে কী বিচারপতি আজিজ?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩১