ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির প্রভাবশালী সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধির সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বৈঠক শুধু এক কাপ চা খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বলেই মনে করেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকায় নিজ বাসায় কালের কণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওই বৈঠকের খবর পত্রিকায় দেখে তিনিই গত সপ্তাহে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিলিস্তিন দূতাবাসে গিয়ে বলেন, বিএনপির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই সাক্ষাৎ ব্যক্তিগত। ফিলিস্তিনের দূত যখন বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শুধু এক কাপ চা খাওয়ার জন্য ছিল না’, তখন মির্জা ফখরুলও বিস্মিত হন। তিনি হয়তো বিষয়টি জানতেন না।
ফিলিস্তিনের দূত কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই তাঁর দেশের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এ দেশের নাগরিকরা ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করতে গেছে। অথচ এ দেশের একজন নাগরিক ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করবেন—এমন খবর আমাদের জন্য হতাশার। এর প্রভাব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পড়বে।
তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিষয়টি এখন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে নীরব দৃষ্টি রাখব। আমি মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করি, তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উঠেছে তা ভুল প্রমাণিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বৈঠকের কথা যদি সত্য প্রমাণিত হয় তবে নিশ্চয়ই এর পেছনে আরো কেউ না কেউ আছে। তবে যারা এ বৈঠকটি আয়োজনের জন্য ভারতকে বেছে নিয়েছে তারা খুব বোকা। কারণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক। ভারতের গোয়েন্দারাও শক্তিশালী। ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্ক—এটি সত্যি, কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী। তাই এখানে প্রভাব ফেলে এমন কিছু তারা হতে দেবে না।
আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের খবর কখন জানতে পারেন—জবাবে ফিলিস্তিনি দূত বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন এবং এ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নজরে আসার পর তিনি তাঁর দেশের কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে তাঁর দেশের কর্তৃপক্ষও নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে তারা এ বিষয়ে আগে থেকেই অবগত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি সহায়তা চায় তাহলে আমরা আমাদের যা আছে তাই দিয়ে সহযোগিতা করব।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের খবর দেখার প্রতিক্রিয়া কী ছিল জানতে চাইলে ফিলিস্তিনি দূত বলেন, প্রথমে প্রতিবেদনটি দেখে আমি হেসেছিলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইহুদিদের একটি কূটনৈতিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে নিপীড়িতদের সহযোগিতা করবে। ইসরায়েল নিজেই যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তখন এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে? প্রথমে মনে হয়েছিল, বিষয়টি রাজনৈতিক। পরে বুঝেছি, এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়ও জড়িত।
প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অসম্ভব কিছুই নয়। কারণ ইসরায়েল চাচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে। বাংলাদেশ বড় মুসলমান রাষ্ট্র। এ দেশ যদি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে যারা বাকি আছে তারাও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। তা ছাড়া ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ সর্বত্র জোরালো অবস্থান নেয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শুধু নিজেই ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেন না, অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে একাধিকবার বলেছেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে যেকোনো বিষয়ে তাঁর সায় রয়েছে। তাই এ ধরনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) সম্মতি নেওয়ার অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
মেন্দি এন সাফাদি সম্পর্কে ফিলিস্তিন দূত বলেন, একজন কূটনীতিক হিসেবে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না। বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চাইলে ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তাঁর ধারণা, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর আগেও বৈঠক হয়েছে কি না সে বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না। তবে তিনি আন্তরিকভাবে আশা করেন, বাংলাদেশ প্রকৃত সত্য বের করতে সক্ষম হবে।
তিনি বিশ্বাস করতে চান, বৈঠকের এজেন্ডাগুলো যদি সত্যিও হয়, তার পরও এর সঙ্গে খুব বেশি বাংলাদেশি জড়িত নন।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:৩৪