ব্লগ পরিসংখ্যান বলে সাত বছর সাত মাস। কিন্তু আমার কাছে কি মনে হয় জানেন? এইতো সেদিন, তখন ক্লাস সেভেন/এইটে পড়ি; হঠাৎ বড়ভাই কম্পিউটারটা খোলা রেখে একটু বাসার বাইরে গেলো। আমি তখন্ও ইন্টারনেটের সাথে সেভাবে পরিচিত না। তবে বাবার গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরীর সুবাদে কম্পিউটার শিখতে কোন সমস্যা হয় নি। কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বলা হয়েছে মন্তব্য লিখতে। আশেপাশে ভাইয়া আছে নাকি সেটা একবার দেখে প্রথম মন্তব্যটা লিখলাম। কি লিখেছিলাম আজ স্পষ্টভাবে মনে নেই, তবে "পোষ্টটি ভালো হয়েছে" এরকম কিছু একটাই লিখেছিলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখেছি একজন নাম না জানা মানুষ এতো সুন্দর করে লিখতে পারে! হ্যা, পোষ্টটা ছিলো রাশেদ ভাইয়ের। সামহোয়ার ইন ব্লগ বলতে আমার কাছে তখন ছিলো বাধন ভাই, আইরিন আপু, কৌশিকদা আর এই রাশেদ ভাই। কোথায় হঠাৎ করে উধা্ও হয়ে গেলো লোকটা। জানি না আমি। আরও অনেক অনেক প্রিয় মানুষ ছিলো, কিন্তু সাত বছর আগের কথা কিভাবে মনে থাকে বলেন?
একসময় পরিচিত হলাম জানা আপু আর তার হাজব্যান্ডের সাথে। বেশ কয়েকবার কথা্ও হলো। অসাধারণ মানুষ তারা। তাদের নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই।
যাই হোক, তখন সামহোয়ার ইন ব্লগ, প্যাচালি, সচলায়তনই বোধহয় ছিলো। প্যাচালি ব্লগেও যেতাম মাঝেমাঝে। কিন্তু সেই ব্লগের রিফাত ভাই হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দিলো ব্লগটা। গুগল চ্যাটে অনুরোধেও কাজ হলো না। চালু করবেই না। এমন সময় তৈরি হলো আমারব্লগ। সামহোয়ারে মডারেশন ছিলো। তার আমারব্লগের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মডারেশন না থাকা। আমি অন্তত ততোটুকুনই বুঝেছিলাম তখন। ঢুকিনি খুব বেশি একটা।
তো... ব্লগটা কেন ছাড়লাম? প্রথমত, ফেসবুক নামক বস্তুটা এতো বেশি সময় নিতে শুরু করলো যে না ছেড়ে কোন উপায় পেলাম না। ব্লগ আর ফেসবুক কখনোই এক না, দ্বিতীয় কারণটা এখানেই আসে। পরিচিত সব ব্লগাররা নানান দ্বন্দে, তর্কে পুরোপুরি অস্থির একটা অবস্থা করে একের পর এক ব্লগ ছেড়ে চলে গেলো। তাদের ছোটভাই হিসেবে আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। কি বলবো তাদের? যেই আমি "হাসির জোক্স" পোষ্ট করতাম সেই আমি তাদের কাছ থেকে সামহোয়ার ইন ব্লগের প্রধান পাতায় স্টিকি করে রাখার মতো পোষ্ট লিখতে শিখেছি। তাদের সিদ্ধান্তের উপরে আমার কিই বা বলার থাকতে পারে? আমি ধীরে ধীরে চলে গেলাম ফেসবুকে। ভালোই লাগলো, বন্ধুরাতো সবাই লেখালেখিতে বেশি উৎসাহী না; ওদের সবাইকে পেয়ে গেলাম ফেসবুকে। ব্লগারদের একটা বিরাট অংশকেও পেলাম। সামহোয়্যারের কথা প্রায় ভুলতে বসলাম।
এর মাঝে আরও অনেক ঘটনা ঘটলো, উত্তাল শাহবাগ, গণজাগরণ মঞ্চ, ব্লগারদের কাছ থেকে সেলিব্রিটিদের পরিচয়ে টাকা নেওয়ার নাম করে না দেওয়া থেকে শুরু করে মোস্তফা জব্বারের ভাষা নিয়ে ব্যবসা নিয়ে যা যা ঘটেছে তাতো দেখেছেনই আপনারা সবাই। চাইলেই ফিরতে পারতাম ব্লগে, কিন্তু ফেসবুকে নিজের কর্তৃত্ব বলে যে একটা ব্যাপার আছে সেটাকে ছাড়ার লোভটাকে সামলাতে পারলাম না। পাশাপাশি যেটা হলো সেটা হলো একটা নির্দিষ্ট গ্রুপ আমাকে শত্রু বানিয়ে ফেললো।
জানি না এইসবের সম্পৃক্ততার কারণেই কিনা, আজকে মধ্যরাত থেকে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছি না। ফেসবুক শুরুতে চাইলো আসল নাম। ওদের "আসল" নামের বৈশিষ্ট্যে দেখলাম ধর্মের নাম এবং পেশার নাম দেওয়া যাবে না। তাজুল "ইসলাম" মুন্না, ইসলাম আমার ধর্মের নাম। উপায়? ্ওহ্, তার আগে বলে নেই। আপনি জীবন্ওে "Kryptoxide" বলতে কোনকিছুর নাম কখনো শুনেছেন? সম্পূর্ণ আমার সৃষ্টি করা একটা নাম। এই নাম তাদের পছন্দ না। আচ্ছা ঠিক আছে, এক ওয়ার্ডের নাম নিয়ে সমস্যাতো? বানিয়ে দিলাম দুইটা ওয়ার্ড। চাইলো ফটো আইডেন্টিফিকেশন, তা্ও দিলাম। তারপর যা বললো তার অর্থ দাড়ায় "কেচকি মাইরা বয়া থাকো, আমরা আলু নিয়া ছানাছানি কইরা কইবানি"। অর্থাৎ তারা আমার প্রোফাইল বিশ্লেষণ করবে, আমি যা দিয়েছি তা চেক করবে এবং তারপর নির্ধারণ করবে যে একাউন্টটিকে আমাকে ফেরত দে্ওয়া যায় কি না।
এই পর্যন্ত কোন সমস্যাই ছিলো না। সমস্যাটা শুরু হলো যখন আমি আমার একজন বন্ধুকে বললাম ইনবক্সে ঢুকে আমার ফেসবুক মেসেজগুলোতে কি লেখা আছে দেখতে। ও আকাশ থেকে পড়লো যখন আমার প্রত্যেকটা মেসেজের স্থানে লেখা "this message is no longer available because it was identified as abusive or marked as spam"। আমি স্প্যামার? তোমার স্বপ্নে!
ম্যাস রিপোর্ট....ম্যাস রিপোর্ট ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারে না, এতোবড় ফ্রেন্ডলিস্ট থাকা এতো পুরনো একটা আইডিকে ফেসবুক নাই করে দেবে; এটা ভাবাও যায় না। এখন উপায়? ফেসবুকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। আর এই সুযোগে ভাবলাম একটু পুরাতন ঘরটাকে দেখে যাই। কেমন অবস্থা আমার বাড়িটার, যেখানে আমি দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা পড়ে থাকতাম।
ওহ্ হ্যা! পোস্টের শিরোনামটা যাদের জন্যে বড় করেছি তাদের কথাটাইতো বলা হলো না। ফেসবুক আপাতত বন্ধ থাকায় আমি কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। আপনারা কেউ অনুগ্রহ করে এই তথ্যগুলো ছড়িয়ে দেবেন। তাজুল ইসলাম মুন্নার সাথে যোগাযোগের জন্যে তার ফেসবুক আইডি চালুর আগ পর্যন্ত ইমেইলে writemunna@gmail.com এবং মোবাইলে 01832081953 && 01672470364 নম্বরগুলোয় পা্ওয়া যাবে। তবে নম্বরের সাথে এটা মেনশন করতে ভুলবেন না যে কল দেবার চেয়ে এসএমএস দেওয়াটাই বেশি কার্যকর হবে। কারণ আমি কল রিসিভ করবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর এভাবে পাবলিকলি নাম্বার দেবার ব্যাপারটা এখনও চলে নাকি জানি না, কিন্তু আমাদের ব্লগারদের মাঝে একসময় একটা আলাদা সম্পর্ক ছিলো। শত্রু হোক বা মিত্র, আমরা কারও ক্ষতি হয় এমন কিছু করতাম না।
যাদের রিপোর্টের ফলশ্রুতিতে আমার আইডিটা গিয়েছে তাদের সবার প্রতি অসংখ্য শুভকামনা রইলো। স্বাধীনতার স্বপক্ষকে দেওয়া সমর্থনটা সেই ফেসবুক থেকে আসে না। সেটা আসে এই আঙ্গুলগুলো দিয়ে। আমি জানি, আপনাদের দৌড় সেই ফেসবুক রিপোর্ট পর্যন্তই। এর বেশি কিছু করার মতোন বুকের পাঠা আপনাদের হয় নি। শুভকামনা কেন জানালাম জানেন? কারণ আপনাদের সময় প্রায় শেষের দিকে। মোমবাতি যেভাবে নেভার আগে একবার দপ করে জ্বলে ওঠে, আপনারাও ঠিক সেভাবেই জ্বলে উঠছেন। এবং এজন্যে অন্য কেউ দায়ী না, দায়ী আপনারা নিজে।
সবাই ভালো থাকবেন। অনেকদিন পরে ব্লগের এই ইন্টারফেসে লিখলাম। বিজয়ে আমি অভ্যস্ত না, ইউনিজয় লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। আর কেউ যদি পারেন তাহলে ফেসবুকের রিভিউয়ে আনুমানিক কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
কষ্ট করে এই ফালতু আলাপটি পড়ার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ।
-হ্যাপী ব্লগিং
