আমার বন্ধু তালিকায় মোটামুটি ভিন্ন ভিন্ন আইডোলজি ধারন করে এমন মানুষ আছে। মূলত একই বিষয় নিয়ে নানাধরনের মানুষের নানা রকম বক্তব্য পড়তে ভালোই লাগে তাই অনেক ত্যাক্ত বিরক্ত হলেও সব ধরনের বন্ধুকেই লিস্টে রেখেছি। আক্রমনাত্বক না হলে সাধারনত কাউকেই ব্লক করি না। যাই হোক মূল কথা আসি,
গ্ণজাগরন মঞ্চ ইস্যুর ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। এই ইস্যুর ব্যাপারে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মতামত দেখে মনে মনে প্রবোধ গুনেছি। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আওয়ামী লীগ করি তাই আমি সঙ্গত কারনেই এই ইস্যুতে মঞ্চের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি এবং যারা আমার সমমনা তাদেরকেও দেখেছি এই ইস্যুতে মঞ্চের বিপক্ষে অবস্থান নিতে। এখন কথা হইলো কি সেই সঙ্গত কারন? গত এক বছরে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ গণজাগরন মঞ্চের জন্য কতোকি করেছে তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানে, তা নতুন করে বলে দেওয়ার কিছু নাই। আওয়ামী লীগ সেইসব কোন প্রাপ্তির আশায় করেনি শুধুমাত্র আদর্শিক জায়গায় এক জায়গায় মিল ছিলো তাই মঞ্চকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এর বিনিময়ে মঞ্চ থেকে কখনো আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ তো দেওয়া হয়ই নি বরং বিভিন্নভাবে সবসময়ই আওয়ামীলীগ এবং বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আসুন দেখি তা কিভাবেঃ-
• মঞ্চকে নিরেপক্ষ রাখার নামে জয় বাংলার সাথে জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান রাখেনি।
• মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানের নামে সব স্লোগান দেওয়া হলেও বাদ দেওয়া হয় “ তোমার নেতা , আমার নেতা, শেখ মুজিব ,শেখ মুজিব” স্লোগানটি।
• মঞ্চকে নির্দলীয় রাখার নাম করে তোফায়েল আহমেদ, সাজেদা চৌধুরীর মতো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
• আওয়ামীলীগকে অহেতুক কারনে দোষ দিয়ে স্লোগান দেওয়া “ আওয়ামী লীগের সরকার , রাজাকারের পাহারাদার”।
• স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ না নিলে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন আখ্যা দেওয়া ।
• কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তার জন্য বারবার নিষেধ করা সত্বেও গুলশানে গণজাগরন মঞ্চ জমায়েত হলে তাদের উপর চড়াও হলে সরাষ্ট্র মন্ত্রানলয়ের অধীনে থাকা পুলিশ এবং সরকারকে নিয়ে বিভিন্ন বাজে কথা বলা।
• সর্বশেষ ২৬ শে মার্চে লাখো কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পোগ্রামে প্রথমে ইসলামী ব্যাংকের উছিলা দিয়ে এবং পরে বিএনপি জামাতের সুরে বিভিন্ন উছিলা দিয়ে মূলত ১৬ই ডিসেম্বরে নিজেদের অপারগতা জিইয়ে রেখে হীনমন্যের মতো তাতে অংশ না নেওয়া।
৫ই ফেব্রুয়ারীর গণজাগরনে সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিয়েছিলো যখন ছিলো না কোন মঞ্চ বা মুখপাত্র। গণজাগরনকে সঠিক পথে রাখার জন্যই মূলত মুখপাত্র পদের আবির্ভাব হয়। যা দেওয়া হয় ইমরান এইচ সরকারকে। মূলত এখানেই ঘটে আসল গলদ কারন ইমরান এইচ সরকার একটি সুবিধাবাদী চরিত্র ভিন্ন কিছু না। আসুন এখন আমরা ইমরান এইচ সরকারের কিছু ব্যাপার আলোকপাত করিঃ-
• রংপুর মেডিক্যাল এ ভর্তি হওয়ার পর ইমরান এইচ সরকার প্রথমে হলে উঠে এক ছাত্রদলের নেতার কাছে/ মতান্তরে শিবিরের নেতার কাছে।
• তত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে।
• তার ধান্দাবাজ আর সুবিধাবাদী চরিত্রের জন্য রংপুর মেডিক্যালে ছাত্র লীগের রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পেরে ঢাকায় স্বাচিপের সাথে রাজনীতি শুরু করে ।
• এই সময় সে আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের নাম যত্রতত্র ভাবে ব্যাবহার করতো বলে শোনা যায়।
• ৫ই ফেব্রুয়ারীর গণজাগরন শুরু হওয়ার পর তিনি জোর পূর্বক “শাহাবাগে সাইবার যুদ্ধ “ সহ সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পেইজের কো –এডমিন হোন।
• জামাতি পণ্যের বর্জনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান থাকলেও অদৃশ্য কারনে এই ব্যাপারে তিনি সহ মঞ্চ চুপ হয়ে যায় কিন্তু যখনই সরকারের ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থপ্রাপ্তির কথা শোনে তখনই আবার এই উছিলায় আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু করে।
• বানিজ্য মেলার পারম্ভিকে এবারের বানিজ্য মেলা পাকিস্তানি পণ্যমুক্ত ঘোষণা দিলেও বানিজ্য মেলায় পাকিস্তানী পণ্য পাওয়া যায় এবং এই ব্যাপারে অদৃশ্য কারনে চুপ থাকেন তিনি।
• কর্নাইয়ের ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য দেওয়ার কথা বলে তিনমাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে সাহায্য না করা যখন এই ইস্যুতে অনেক টাকা চাঁদা নেওয়ার কথা শোনা যায় এবং একই সময়ে তাদের দেখা যায় বিশাল পতাকা অবমাননাকারী মঞ্চ বানিয়ে কনসার্ট আয়োজন করতে।
এখন গত ৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটা ঘটনা সাদা চোখে দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় মঞ্চ তথা ইমরান কিভাবে চুল পরিমান দোষ পেলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সবসময় নমনীয় আচরণ করেছে।যেখানে সবাই জানে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সেখানে মঞ্চের এই ধরনের আচরন ছিলো খবই রহস্যজনক। প্রায়শই দেখা গিয়েছে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বিএনপিকে তাদের সাথে আসার জন্য আহবান জানিয়েছে যদিও বিএনপি এই গণজাগরণকে নিয়ে অনেক আপত্তিকর কথা বলেছে। বিএনপির এতো লাত্থি গুতা খাওয়ার পর কেনো ইমরানের এতো বিএনপি ভক্তি।আসুন নিচে এর কিছু কারন দেখিঃ-
• মঞ্চ পুরোপুরি চৈনিক বামদের দখলে চলে গিয়েছিলো আর বলা হয়ে থাকে চৈনিক বামেরা জামাতের থেকেও আওয়ামী লীগকে বড় শত্রু মানে।
• মঞ্চের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায় এবং মাঠ পর্যায়ে এমন কিছু লোক ছিলো যারা আগে বিএনপি করতো কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী ইস্যুর কারনে তা বলতে পারে না। আর এইটা জানাই যে যারা একসময় বিএনপি করেছে তাদের ভিতর একটু হলেও আওয়ামী বিদ্বেষ থাকে।
• মঞ্চের এমন কিছু লোক ছিলো যারা শুধু বিএনপি না একসময় শিবিরের রাজনীতি করতো এবং তারা স্বাভাবিক ভাবেই আওয়ামী বিদ্বেষ ধারন করে।
এই ধরনের লোক এবং দলের কারনেই মঞ্চ তার প্রধান দাবি থেকে দূরে গিয়ে সব বিষয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া শুরু করে। এতো কিছুর পরও আওয়ামী লীগ তার স্বভাব সুলভ স্বাভাবিকতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা বজায় রেখে চলেছে। এমনকি সর্বশেষ সরাসরি কিছু ব্যাপারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করলেও আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোন উস্কানীমূলক কিছু করা হয় নাই।
ইমরান এইচ সরকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নামে যেইভাবে মিথ্যাচার করেছে তা বেঈমানের ইতিহাসে তার আসন পাকাপোক্ত করে দিলো।আসুন ঘটনা গুলো দেখিঃ-
• ২৬শে মার্চ এ চারুকলার সামনে মঞ্চ তৈরি করতে চাইলে কিছু বৈশাখী উদযাপন কমিটির সদস্যরা (শেখ আসমান সহ) ইমরান এইচ সরকারকে জিজ্ঞেস করে মঞ্চ তৈরি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা এবং তাদের অনুরোধ করা হয় চারুকলা থেকে একটু দূরে গিয়ে মঞ্চ করার জন্য কারন এতে বৈশাখী উদযাপনের প্রস্তুতির ব্যাঘাত ঘটার হাত থেকে বাঁচবে।
• ২৬শে মার্চের মঞ্চ লাল সবুজের আদলে করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়লে তারা মানব বন্ধন করে যেখানে শেখ আসমান সাধারন ছাত্র হিসেবে অংশ নেয়।
• ইমরান এইচ সরকার নিজেদের পতাকা অবমাননার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়ানোর জন্য অভিযোগ করে শেখ আসমান তার কাছে চাঁদা চেয়েছে। এতো লোক থাকতে ইমরান এইচ সরকার শেখ আসমানের নাম বলার কারন একটাই শেখ আসমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আর ইমরান ও তার সাথের বেশীরভাগই হচ্ছে ছাত্রলীগ তথা আওয়ামীলিগ বিদ্বেষী।
• গত পরশু দিন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাথে চেয়ারে বসা নিয়ে হাতাহাতি করলে তিনি এর জন্য দায়ী করেন ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আসমান এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নাসিম রুপককে যা পুরোটাই ষড়যন্ত্রের একটা অংশ কারন সেই সময়ে শেখ আসমান নিজের রুমে অবস্থান করছিলেন এবং নাসিম রুপক রিকশা করে বাসায় যাচ্ছিলেন।
• কালকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এবং গণজাগরণ মঞ্চ একই জায়গায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকলে শাহাবাগ থানা সমাবেশ করার ব্যাপারে দুই পক্ষকেই নিষেধ করেন। কিন্ত গণজাগরণ মঞ্চ তারপরও সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং গ্রেফতার করে। এই ব্যাপারে ইমরান এইচ সরকার এবার সরাসরি সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে যে সরকার নাকি পরিকল্পিত ভাবে হামলা করেছে।
আচ্ছা আসুন দেখি এটাকে পরিকল্পিত হামলা নাকি পুলিশের রুটিনওয়ার্ক। এমন উদাহরন ভুরি ভুরি দেওয়া যাবে যে একই জায়গায় দুই গ্রুপ সমাবেশ করতে চাইলে প্রশাসন সেখানে সমাবেশ নিষিদ্ধ সহ ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমরা যদি মঞ্চের ব্যাপারেই একটু পিছনের দিকে ১৩ই মার্চ , ২০১৩তে। সেই দিন লালদীঘি ময়দানে গণজাগরন মঞ্চের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হেফাজত ইসলাম পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ডাকে। সেই সময় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন মঞ্চকে ফেনী থেকে ফিরিয়ে দেয় । মজার ব্যাপার হইলো তখন হেফাজতের বিরুদ্ধে না ইমরান না অন্য কর্মীরা এতো আক্রমনাত্বক হয়েছিলো। উলটো প্রশাসনের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের কথায় সায় দিয়েছিলো। তবে আজকে কেনো সরকারকে অভিযুক্ত করা??
জানি এই প্রশ্নের সদুত্তর কোন দিনই দিতে পারবে না ইমরান এইচ সরকার কারন তার অতীতের কর্মকাণ্ড থেকে বুঝা যাচ্ছে টানা সে যেই ধরনের বিদ্বেসমূলক কথা ছড়াচ্ছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নামে তা নিশ্চয়ই কোন এক গোষ্ঠীর ইশারাতেই হচ্ছে।
পরিশেষে বলবো গণজাগরন চিরভাস্বরই থাকবে, গুটিকয়েক কীটের কারনে গণজাগরন মলিন হতে পারে না। জনগণই এই গণজাগরনের গতি নির্ণায়ক , কোন মুখপাত্র নয়!!!
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩