হরিরামপুর ইউনিয়নের তুরাগ থানার অন্তর্গত বাউনিয়া এলাকা ভৌগলিকভাবেই একটু অপরাধপ্রবন। পাঠকদের সুবিধার জন্য বাউনিয়ার একটু বিবরন দেওয়া প্রয়োজন। বাউনিয়া এমন একটা এলাকা যার পূর্ব পাশেই বিমানবন্দরের বাউন্ডারি লাগানো, পূর্ব পাশে বিস্তীর্ণ জলাভূমি(বর্তমানে বালি ফেলানো হয়েছে), উত্তর পাশে উত্তরার সেক্টর লাগোয়া, দক্ষিন পাশে ক্যান্টনম্যান্ট। আরো বিস্তারিত বললে বাউনিয়ার পশ্চিম দিক একেবারে এয়ারপোর্টের দেয়ালে লাগানো আর বিমান বাহিনীর এলাকা সংযুক্ত , আবার পূর্বদিকে পূরবী, আশুলিয়া এবং বিস্তীর্ণ খালি এলাকা সংযুক্ত, আবার উত্তর দিকে উত্তরা আর আশুলিয়া সংযুক্ত। এই বাউনিয়া একাধারে ৫টি থানার ভিতর আওতাভূক্ত। এই এলাকা এয়ারপোর্ট, উত্তরা, তুরাগ, ক্যান্টনম্যান্ট এবং পল্লবী থানার ভিতর পড়েছে। এমন ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এই এলাকা একসময় অপরাধীদের জন্য অভয়ারন্য ছিলো। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের অপরাধীদের জন্য এই এলাকা একসময় ছিলো নিরাপদ আশ্রয়। অস্রের ঝনঝনানি শোনা ছিলো একেবারেই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। কালের শ্রোতে এই এলাকায় অপরাধকর্ম একেবারে শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এই কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র এই এলাকার অধিবাসী এবং যুব সম্প্রদায়রা। অনেক রক্ত ঝরার পর এই এলাকার অধিবাসীরা বুঝতে পেরেছেন যে ধংসের ফল কখনই ভালো হয় না অপরদিকে এই এলাকার যুব সম্প্রদায় তাদের উত্তরসূরিদের করুন পরিনতি দেখে এই শিক্ষা পেয়েছে যে সন্ত্রাসের পরিনতি খারাপ ছাড়া ভালো কিছু হয় না। এই এলাকায় রাজনৈতিক মতামত নিয়ে তর্ক হয় কিন্তু কখনোই কোন্দল হয় না। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই প্রগতিশীল চিন্তার বাহক তাই নির্বাচনপূর্ব সময়ে সারা দেশ অস্থিতীশীল থাকলেও এই এলাকা ছিলো শান্ত এমনকি নির্বাচনের দিনেও ভিন্ন মতাদর্শ নিয়ে থাকা ব্যাক্তিরা কাধে কাধ মিলিয়ে ভোটারদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলো।
এমন অদ্ভুত শান্তিময় এলাকায় এখন শান্তি নাই। এর কারন কিছু দস্যু যারা ডাকাত নামে পরিচিত। গত এক সপ্তাহের ভিতর বাউনিয়া পাবনারটেক নামক এলাকায় দুইবার এবং উলুদাহা নামক জায়গায় একবার ডাকাতি হয়েছে। প্রত্যেকটি ডাকাতিই হয়েছে গভীর রাতে এবং ডাকাতরা বিনা বাধায় ডাকাতি করে পালাতে পেরেছিলো।
ডাকাতির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে কিছু ব্যাপার সামনে আসে। তা হলোঃ-
• ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত প্রতিটা বাড়িরই অভ্যন্তরীনিরাপত্তা বেশ জোরদার ছিলো।
• প্রতিটি বাড়িই জনবসতির একেবারে শেষসীমায় অবস্থিত।
• প্রতিবারই ডাকাতেরা পালানোর জন্য আর্মি ডিওএইচএস এবং বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানী দ্বারা ভরাটকৃত বালুময় অঞ্চল দিয়ে পালিয়েছে বলে ধারনা করা যায়।
• ডাকাতি চলার সময় আশেপাশের কেউই টের পায়নি এবং নূন্যতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই।
কেনো এখন এই অঞ্চল ডাকাত প্রবন হয়ে গেলোঃ-
ডাকাতেরা সেই জায়গাতেই ডাকাতি করতে ভালোবাসে যেখান থেকে সহজেই পালিয়ে যাওয়া যায়। সেই হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই এখন বাউনিয়া ডাকাত প্রবন হয়ে গিয়েছে। কারন একসময় বাউনিইয়ার পূর্ব পাশের পুরোটাই ছিলো বিস্তীর্ণ বিল এবং এই বিলের বিভিন্ন অংশ স্থানীয় মানুষেরা লিজ নেওায়ায় বিলটি সবসময়ই এলাকার অধিবাসীতে জমজমাট ছিলো ।আর ওই সময় এতো লোকেদের ফাঁকি দিয়ে এলাকায় ডাকাত দলের প্রবেশ ছিলো কার্যত অসম্ভব। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, এখন সেই বিশাল জলাভূমির পুরোটাই বালির পেটে। আর্মি ডিওএইচএস এবং বিভিন্ন হাউজিং বালু দিয়ে ভরাট করে রেখেছে। ভরাট করে খালি রাখাতে এই এলাকায় বিনা বাধায় একটি এক্সিট এবং এন্ট্রি রুট তৈরি হয়েছে। যা দিয়ে ডাকাত সহ বিভিন্ন দুষ্কৃতিকারীরা অনায়াসেই বাউনিয়া এলাকায় প্রবেশ এবং বের হতে পারছে।
বাউনিয়া এলাকাবাসীর করনীয়ঃ-
• প্রথমেই এলাকাবাসীর নিজেদের ভিতরে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। সবার ভিতর এমন তাগিদ তৈরি করতে হবে যাতে অন্যের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে হয়। যে কোন একজনের বিপদে সবার ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
• ডাকাতদের এক্সিট এবং এন্ট্রি রুটগুলোতে এলাকাবাসীর নিজেদের উদ্যোগে পাহাড়া বসাতে হবে।
• বালি ফেলা বিস্তীর্ণ খালি জায়গায় বাড়ি ঘর কিংবা বাউন্ডারি কিংবা নিরাপত্তার ব্যাবস্থা রাখার জন্য সশস্র বাহিনী এবং স্ব স্ব হাউজিং কোম্পানীগুলোকে চাপ দিতে হবে।
• লাঠি বাশি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যেতে পারে যার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যাক্তি অথবা তার আশেপাশের বাড়ীর লোকেরা বাশি বাজিয়ে সবাইকে সতর্ক করতে পারে।
• সবচেয়ে ভালো হয় যদি পুরো এলাকা জুড়ে একটা নিরাপত্তা জাল তৈরি করা যায়।
সত্যি বলতে এতোদিন পেপার পত্রিকায় দেখছি গণপিটূনিতে ডাকাতদের মৃত হবার ঘটনা আর এখন বুঝতেছি কতোটা আক্রোশে সাধারন মানুষ এই সব ডাকাতদের প্রানে মেরে ফেলতে চায়। তাই কিছুদিনের ভিতর কোন ডাকাতের গনপিটূনিতে মারা যাওয়ার ঘটনা শুনলে অবাক হবো না।