খবরঃ “বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা, ইসলামের বিরুদ্ধে যারা ক্রুসেড ঘোষণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। উপমহাদেশ ও পশ্চিমা দুনিয়ার শীর্ষ অপরাধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আপনাদেরকে তারা অবিশ্বাসীদের দাসে পরিণত করতে পারে।”
“একইভাবে তারা দাবি করে ৪০ বছর আগে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা এবং জনগণের মুক্তির জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে বিরাট এক কারাগারে, যেখানে মুসলমানদের সম্মান ও পবিত্র স্থান অপবিত্র করা হচ্ছে। ক্রুসেডার কসাইদের হয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে হত্যা-নির্যাতন।”
------------ জাওয়াহিরি
আল কায়েদার যদি এখনকার কার্যক্রমের দিকে লক্ষ্য করা যায় মানে লাদের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তাহলে দেখা যায় আল কায়েদার এখন প্রধান লক্ষ্য মুসলিম দেশগুলো। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিলো যে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানকে ধ্বংস করা এবং সেই লক্ষ্যে তারা অনেকাংশেই সফল। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের পর তারা এখন বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোকে পঙ্গু করার পায়তারায় আছে। সেই লক্ষ্যে কিছুদিন আগে সিরিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্পষ্ট লক্ষ্যনীয়। আসলে আলকায়েদা তো এখানে শুধু শো অফ আসল কাজ করছে আমেরিকা । আমেরিকা এবং ইউরোপের মাথারা যে এই মহা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা টের পাওয়া গিয়েছিলো সিরিয়ার যুদ্ধে। সেইখানে বিপুল পরিমান ইউরোপের সন্ত্রাসীরা আল কায়েদার পক্ষ হয়ে লড়াই করে(লিংক নিচে)। মূলত আমেরিকার ক্রীড়নকই হচ্ছে আল কায়েদা। সেইজন্যই লেবাননের হিজবুল্লাহের সাথে আল কায়েদার বিরোধ হয়। মিল হয় না তাদের ইরানের সাথে কিংবা ফিলিস্তিনী মুক্তিকামী মানুষের সাথে। তাদের যত যুদ্ধ ,সংগ্রাম সব মুসলিম রাষ্ট্রেই।
আমেরিকা যেকোন মুসলিম দেশে আগ্রাসন চালানোর আগে সবচেয়ে বেশী আমলে নেয় সেই দেশের জাতিগত বিভেদকে। সেই জন্যই আমরা আফগানিস্তানে দেখেছিলাম কুর্দিদের আমেরিকার হয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কিংবা ইরাকের সিয়া সুন্নীর বিরোধের সুবিধা নিতে।প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশেই জাতিগত বিভেদ প্রবল কিন্তু সেই দিক দিয়ে আমরা বাংলাদেশীরা একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট বলা চলে। এই নির্ঝঞ্ঝাট মনোভাবই আমেরিকা কিংবা আল কায়েদার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারন। সেই জন্য এই অঞ্চলে তারা তাদের আগ্রাসন চালানোর জন্য দুইটি বিষয়কে ফোকাস করেছে। ১) আল্লাহ ও নবী রাসুলকে অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ, ২) মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বাধীন হলেও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাই নাই এমন একটা বিষয় মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া।
এখন দেখি এই দুইটার সাথে বর্তমান সময় কতটা অসঙ্গতিপূর্ণ।
প্রথমত , এই দেশে নাস্তিক আছে সত্য , প্রশ্ন হইলো, কোন দেশে নাস্তিক নাই? এই দেশে ধর্ম বিদ্বেষী আছে, প্রশ্ন হইলো কোন দেশে নাই ধর্ম বিদ্বেষী?
সত্য হইলো এই দেশে নাস্তিক এবং উগ্র নাস্তিকের সংখ্যা খুবই কম। যারাও আছে তাদের ভিতরে ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করা ব্যাক্তির সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। বিশেষ করে আইসিটি আইনের পর এই ধরনের কার্যক্রম খুজতে এখন অনুবীক্ষন লাগে। আসলে ব্যাপারটা তাদের নবী রাসূলকে কটূক্তি করা নিয়ে নয় , ব্যাপারটা হইলো ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা।
দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর আমাদের কি অর্জন তা পাকিস্তানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এই দেশ বার বার কোন আমলে পিছিয়ে গিয়েছে তা কারো অজানা থাকার নয়। আর এই দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়ালে কার কষ্ট লাগে তাও আমরা জানি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যারা বিরোধীতা করেছে তারা বার বার আমাদের আঘাত করেছে, বার বার আমাদের উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। হ্যা, এই দেশ একটা কারাগার এবং তা হচ্ছে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির কারাগার।
সরকারের করনীয়ঃ
১) ধর্মের কটূক্তিকারীদের ব্যাপারে যে আইন এবং তার শাস্তির বিধান আছে তা জনগনের কাছে জানিয়ে দেওয়া । যারা ধর্মের নামে কটুক্তি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা । দেখা যায় অনেক জামাত শিবির ফেক আইডি ব্যাবহার করে ধর্মের নামে বিদ্বেষমূলক লেখা লেখে, তাদের ট্রেস করে জনগণের সামনে এইসব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
২) বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের বিবরণ জনগনের কাছে পৌছে দেওয়া। সকল অপপ্রচার খন্ডনের জন্য নেতা কর্মীদের বেশী করে জনসংযোগ এর নির্দেশ দেওয়া। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখা যাতে কোন জঙ্গি সংগঠন কোন অপকর্ম সাধন করতে না পারে।
আমাদের করনীয়ঃ-
১) অনলাইন এবং অফলাইনে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী না তাদের নিজের এই অবিস্বাসকে শ্রদ্ধার পাশাপাশি অন্যের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে হবে, শুধু তাই না তাদের ভিতর কেউ যদি উগ্রবাদী আচরন করে তবে তাদের ভিতর থেকেই এই ব্যাপারে বাধা আসতে হবে। জামত-শিবির যেনো ফেক এক্যাউন্ট ইউজ করে এই ধরনের কাজ যেনো না করতে পারে সেই ব্যাপারে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেকোন অপপ্রচার প্রতিরোধে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
২) সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা রুখতে হবে। কাউকে জঙ্গি বইলা সন্দেহ হলে সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই ব্যাপারে জানাতে হবে। প্রতিবেশী সবার খোঁজ খবর নিতে হবে এবং কারো ব্যাপারে সন্দেহ হলে আবেগের চাইতে বিবেককে গুরুত্ব দিয়ে নিকটস্থ থানায় তাদের ব্যাপারে অবহিত করতে হবে। স্বাধীনতা , মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা বিদ্বেষী কথা কেউ বললে সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করতে হবে। সর্বোপরি বর্তমান সরকারের পাশে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।
মনে রাখবেন আল-কায়েদার এই হুমকি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।এইটা তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। এই প্রসঙ্গে একটা খবরের অঙ্গশবিশেষ দিলামঃ-
“অনেক বিশ্লেষকের মতে, আল-কায়েদা এখন আরও ডালপালা ছড়িয়েছে। তাদের অবস্থান ও তৎপরতা আভাস দিচ্ছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বদলে কেবল ইয়েমেনে নয়, অন্যান্য দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও তাদের যোগসূত্র বাড়ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য অনুসারে, আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির সঙ্গে আল-কায়েদা ইন দ্য অ্যারাবিয়ান পেনিনস্যুলার (একিউএপি) প্রধান নাসের আল উহাইশির যোগাযোগ বাড়ছে।"
খবরের লিংক
“আমার মাটি, আমার মা,
পাকিস্তান হবে না।।”