"তোমাদের দেশে সিডর এর তাণ্ডব আমাকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। আমার ভালোবাসার প্রকাশ এ অর্থটুকু গ্রহণ করো।" একটা চিঠি আর কুড়িহাজার ইয়েন বাংলাদেশি একজন ছাত্রের হাতে দিয়ে গেলেন হারুও হিরোসে। সত্তরোর্ধ তরুণ। তাঁর বাসাতেই ভাড়া থাকেন দুজন বাংলাদেশি। গড়পড়তা জাপানিদের তুলনায় পুরোপুরি ব্যতিক্রম এই ভদ্রলোক। বই, ম্যাগাজিন আর ইন্টারনেট ঘেঁটে চলমান বিশ্বের খোঁজই শুধু রাখেননা, বাংলাদেশের কোন খবর পেলেই কাগজে ছাপিয়ে দিয়ে যান ভাড়াটেদের হাতে।
এমনি আরেকজন মায়ুমি সিনদো। পেশায় সাঁতার প্রশিক্ষক। ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনেই ইমেইলে খোঁজ নিলের আমার পরিজনের নিরাপত্তা বিষয়ে। অকৃত্রিম আশংকা ঝরিয়ে ফোন এলো খানিক পরেই। দেখা হলে সলজ্জ ভংগিতে দশহাজার ইয়েন গুঁজে দিলেন হাতে। দুর্গতদের সাহায্য পাঠাতে তার অংশগ্রহণ ছিলো স্বতঃস্ফুর্ত। দুটো ডে-কেয়ার এর প্রধান শিক্ষিকারা দিলেন আরো কুড়িহাজার। চিয়োকো কিমুরা বাড়ি এসে দিয়ে গেলেন তার ভালোবাসা, খামে ভরে।
অর্থসাহায্য সংগ্রহে সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্ররা যখন পাঁচদিনব্যাপী প্রচারাভিযান চালালো, তখন আমাদের সাথী হয়েছেন অনেকেই। দুপুরের খাবারের কথা ভুলে গিয়ে মারিকো, গেশিরো, মাতসুমোতো-রা বিলি করেছেন কাগজে ছাপানো আমাদের কথামালা। সবাইকে প্রাণ খুলে সাহায্য দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
ভিনদেশীদের আন্তরিকতার উষ্ণ স্পর্শ আমাদের সাহস যুগিয়েছে। ভাষা, সংস্কৃতির ফারাক বেমালুম উবে গিয়ে ওদের মনের কোণে দোলা দিয়ে গেছে মানবতা। অন্তরের গহিন কোণে বাংলাদেশ নামের ক্ষুদ্র ভূখণ্ডটির জন্য ভালোবাসা পুষে রেখে এরা সবাই হয়ে উঠেছিলেন আমাদের একেকজন। সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা সেই ভালো মানুষগুলোর জন্য।