গত ১১ ফেব্রুয়ারি-২০১২ ঈসায়ী তারিখে পত্রিকান্তরে খবরটি ফলাও করে পত্রস্থ হয়েছে। ‘ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আপন সন্তান হত্যার বর্ণনা দিয়েছে লিজা।’ তার ভাষায়-
পর পুরুষের মনোরঞ্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আড়াই বছরের শিশুপুত্র মাহিন। তাই দ্বিতীয় স্বামীর পরিকল্পনায় দু’জনে মিলেই গলাটিপে হত্যা করেছি তাকে।’ গতকাল মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এভাবেই নিজ গর্ভের সন্তান হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পাষ- মাতা লিজা আক্তার। আদালতের কাছে সে বলেছে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার সামনেই আমার দ্বিতীয় স্বামী হৃদয় হোসেন ওরফে মামুন বাচ্চাটিকে হত্যা করেছে। প্রথমে সে প্রচ- জোরে মাহিনের মুখ-ম-লে থাপ্পড় মারে। ওই আঘাতে বাচ্চার নাক ও কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর তাকে গলাটিপে হত্যা করে দরজায় তালা লাগিয়ে দু’জনেই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এর আগে ডেমরা থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লিজা জানায়, আমার প্রথম স্বামী মিন্টু। তার সঙ্গে ঘর করেছি পাঁচ বছর। ওই সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিল মাহিন। কিন্তু নানা অপবাদ দিয়ে মিন্টু আমাকে তাড়িয়ে দেয় তার সংসার থেকে। এরপর পরিচয় হয় হৃদয় হোসেন ওরফে মামুনের সঙ্গে। বুক বাইন্ডিংয়ের চাকরির কথা বলে সে আমাকে বউ হিসেবে ঘরে তোলে। আগের স্বামীর সন্তানকেও গ্রহণ করে। কিছুদিন পরেই বেরিয়ে পড়ে তার আসল চেহারা। বুঝতে পারি- সে আসলে বুক বাইন্ডার নয়, কলগার্লের দালাল। এরপর শুরু হয় অন্ধকার জগতের পালা। মাঝে-মধ্যেই নিয়ে যায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। আমাকে বাধ্য করে পর পুরুষের মনোরঞ্জনে। তার নির্যাতন ও প্ররোচনায় শুরু করি টাকার বিনিময়ে শরীর খাটানোর কাজ। রাতভর পর পুরুষের মনোরঞ্জনে সময় কাটাই। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিশুপুত্র মাহিন। তার কারণে মাঝে-মধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাকে বাসায় রেখে গেলেও বিপদ। সঙ্গে নিয়ে গেলেও বিড়ম্বনা। বাচ্চা সঙ্গে থাকলে খদ্দেরের মন পাওয়া যায় না। নিজের কদরও থাকে না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো আমার স্বামী। নির্যাতন করতো সন্তানকে। এ সন্তান কাছে রাখলে আমাকেও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় সে। সে আরও বলে- মাহিনকে সরিয়ে দিলে তাদের সংসার ভাল চলবে। বেশি টাকা আয় করা যাবে। তাই তাকে হত্যার জন্য নানাভাবে প্ররোচনা দিতে থাকে। লিজা পুলিশের কাছে আরও বলে- ঘটনার আগের রাতে আমার স্বামী তার পরিকল্পনা জানায়। বলে, শিশুটিকে গলাটিপে হত্যার পর দরজায় তালা লাগিয়ে বাইরে বের হয়ে যাবি। পরে বিকালের দিকে ঘর খুলে তাকে দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবি। বলবি- খাট থেকে পড়ে গিয়ে আমার বাচ্চা মারা গেছে। ডেমরা থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর তার বাবা হৃদয় হোসেন ওরফে মামুন ও মা লিজা আক্তারকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলার আসামি হিসেবে লিজা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নিজের বাচ্চাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। পরে আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আদাবরের শিশু সামিউলের কাহিনী এখনো যেকোনো মানুষের মনে নাড়া দেয়। সামিউলকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেছিলেন তার মায়ের কথিত প্রেমিক। মানুষকে যতই নাড়া দিক এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলছে। গত ৩ জানুয়ারি-২০১২ ঈসায়ী তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের সাথে এসে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় আড়াই বছরের শিশু ইশরাত। পরে হাসপাতালের তৃতীয় তলার সিঁড়িঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় ব্যাপক তদন্ত শেষে গত ৮ জানুয়ারি ইশরাতের মা রোজিনা ও তার প্রেমিক সুলতানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সুলতানের দাবি- মা রোজিনার পরিকল্পনায় শিশুটিকে হত্যা করা হয়। রোজিনার সাথে সুলতানের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে রোজিনা তাকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু সুলতানের দাবি ছিল মেয়েসহ সে রোজিনাকে বিয়ে করতে পারবে না। আর এ কারণেই রোজিনা নিজের চিকিৎসার কথা বলে ইশরাতকে নিয়ে ঘটনার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে কৌশলে সুলতানের হাতে তুলে দেয় ইশরাতকে। গ্রেফতারের পর সুলতান পুলিশ ও সাংবাদিকদের বলেছে, দেড় বছর আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। এরপর থেকেই অনৈতিক সম্পর্ক।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার পূর্ব গোড়ানের ১০ নম্বর রোডের এক দোকানের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছে আজিজুল হাকিম (৮) ও সাদিয়া (৩) নামের দুই শিশুর লাশ। শিশু দু’টি ভাই-বোন। যে দোকান থেকে লাশ উদ্ধার হয় সেটি তাদেরই জন্মদাতা পিতা শফিকুলের দোকান। ঘটনার পর থেকেই লাপাত্তা শফিকুল। স্থানীয় সূত্র জানায়, মা বীনা আক্তার অনৈতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত। সম্প্রতি বীনা ওই এলাকায়ই দামি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। এর আগে তারা বস্তিতে থাকতো। কিন্তু ওই দামি ফ্ল্যাটে শফিকুল ও তার দুই সন্তানের স্থান হয়নি। সেখানে যাতায়াত ছিল অচেনা লোকদের। শফিকুল স্ত্রীকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনি। প্রতিবেশীরাই এসব তথ্য দিয়েছে। আর স্ত্রীকে ওই পথ দিয়ে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েই শফিকুল এমন নৃশংস কা- করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত: আমরা মনে করি উপরোক্ত ঘটনাগুলোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্র এড়িয়ে যেতে পারেনা।
প্রথমত: রাষ্ট্রযন্ত্র সবার মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে ইজ্জত বিক্রি করতে হচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ!)
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রযন্ত্র নাগরিকদের মাঝে জীবনের প্রকৃত দর্শন ও মূল্যবোধ প্রতিফলিত করতে পারেনি। ‘টাকাটাই সবচেয়ে বড় এবং মুখ্য’ এ বোধই রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবেশ নাগরিক মনে করছে। টাকার কাছে হার মেনেছে সন্তানের মতো অপার্থিব সম্পর্কও। (নাঊযুবিল্লাহ!)
তৃতীয়ত: রাষ্ট্র এমন একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশের পৃষ্ঠপোষকতা করছে যাতে অবাধে তৈরি হচ্ছে পরকীয়া এবং বল্গাহারা লালসা। এ কুপ্রবৃত্তি এতই প্রবলতর হচ্ছে যে, এর কাছে সন্তানও বড় বাধা বলে গণ্য হচ্ছে এবং অহরহ সন্তান হত্যার মতো অপরাধ হচ্ছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
চতুর্থত: দেশে আসলে ভদ্র মানুষেদের মুখোশের আড়ালে, শার্ট-প্যান্টের ভেতরে তৈরি হচ্ছে বিপুল সংখ্যক হায়েনা। যারা সব সময় লোলুপ দৃষ্টিতে নারীদের প্রতি তাকায়। নারীরা তাদের কাছে ভোগ্যপণ্য ছাড়া আর কিছু নয়। সামান্য পয়সা দিয়ে তারা এখানে সেখানে নারী দেহ ভোগ করে চলছে এবং দিন দিন এই নারী-দেহ বিকিকিনির হাট তারা বাড়িয়ে চলছে। আর এর সরব পৃষ্ঠপোষকতা করে চলছে রাষ্ট্রযন্ত্র। (নাঊযুবিল্লাহ!)
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রযন্ত্র প্রগতিশীলতার দাবিদার। কিন্তু প্রগতিশীলতা পথের পরিণতি যদি হয় এরূপ নারকীয় অবস্থা তবে সে কথিত প্রগতিশীলতার পথ থেকে প্রত্যাবর্তন করাই রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। সেই সাথে সত্যিকারের ভাল পথ তথা ‘সিরাতল মুস্তাক্বীমের’ পথে চলাই আবশ্যকীয় কর্তব্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তবে কী উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিসই তোমাদের পছন্দ?” (নাঊযুবিল্লাহ!)
মূলত রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বীকার করতে হবে ইসলামী মূল্যবোধই অনিবার্য। ইসলামী মূল্যবোধ মানুষকে সংযত করে। মানুষকে ইহলৌকিক জীবনের সাথে পরকালীন ধারণার সাথে সম্পৃক্ত করে। ‘সিরাতল মুস্তাক্বীমে’ উৎসাহিত করে। ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষা মানুষকে পর্দা শিখায়, নারীদেরকে হিফাযত করে। সম্মান করে। সন্তানের প্রতি নারীর মমতাকে অপরিসীম করে। সন্তানের লালন-পালনে উৎসাহিত করে। পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুসংহত করে।
তার বিপরীতে আজকে রাষ্ট্রযন্ত্র যে ইসলামী মূল্যবোধ বিহীন ধারণার পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাতে একে একে ¯স্রোতের মতো পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র বিপর্যস্ত হবে। ভয়াবহ হবে সমাজ ও মানুষের অবস্থা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি তাই ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।” তাই ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশের জন্য পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করাই হবে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ পালন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবী অর্জনের পথ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৭