আরাকান রাজ্যে মসজিদে তালা, ঈদের নামায বাড়িতে
মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর সরকার জরুরি অবস্থা আরও ১ মাস বাড়িয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শহরে ও গ্রামগঞ্জের মসজিদগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গা মুসলমানরা এবারের ঈদের নামায মসজিদে আদায় করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে বাড়িতে ঈদের নামায পড়েছেন তারা। এছাড়া তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায় করারও খবর পাওয়া গেছে। আর এ অপকর্ম করছে যালিম সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। মিয়ানমারের মংডু শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম, রফিক উল্লাহ মোবাইল ফোনে জানান, সাম্প্রতিক সহিসংতার পর পরিস্থিতি শান্ত হতে না হতেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ফের নিপীড়ন শুরু হয়েছে। নাসাকা, লুন্টিং বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ৮ বছর বয়স থেকে শুরু করে উঠতি তরুণদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্ত করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার আরাকান প্রদেশের মন্ডুচারু কম্বুর লম্বাঘোন গ্রামে গভীর রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে আবদুস সালাম ইয়াসিনের (৫৫) ৩ মাস বয়সী শিশু রহমত উল্লাহ ও স্ত্রী খাদিজা বেগমকে (৪৫) হত্যা করে। এসময় আরও ৬ গ্রামবাসী গুরুতর আহত হয়েছে।
এসব কারণে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আরাকান রাজ্য। এর মধ্যে সরকার রাজ্যে পূর্ব ঘোষিত জরুরি অবস্থা আরও ১ মাস বৃদ্ধি করেছে। লোকজনের চলাফেরার ওপর নজরদারি বাড়ানোয় এলাকাজুড়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আরাকান প্রদেশের মুসলিম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের নামায আদায় করার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। কিন্তু জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকায় মসজিদে নামায পড়তে পারেনি কেউ।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতি গ্রামের চেয়ারম্যানদের মাঝে একটি করে ফরম বিতরণ করেছেন এবং ওই ফরমে প্রতিটি গ্রাম থেকে কমপক্ষে ৫০ জন মুসল্লির নাম ও স্বাক্ষর নিয়ে সরকারি বিশেষ দপ্তরে বাধ্যতামূলকভাবে জম দিতে হয়েছে।
এছাড়া শিশুদেরকে জোর করে ঘরের বাইরে এনে কিস্কুট দেয়ার নামে তাদের ঈদের খুশি দেখানোর জন্য ভিডিও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়-গত ১৭ আগস্ট (শুক্রবার) মংডুর উত্তরে নাকপুরা এলাকায় চার পাঁচটি মসজিদে জোর করে মুসল্লিদেরকে ঢুকিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঈদ উদযাপনের প্রমাণ হিসেবে এসব ভিডিও মিয়ানমার সরকার বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এদিকে নাফ নদীতে বাংলাদেশি জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে রোহিঙ্গা মুসলমানদের লাশ উঠছে। দেশটিতে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় উগ্র মগ ও বৌদ্ধদের হাতে এসব মুসলমান শহীদ হন।
গত বুধবার কক্সবাজার সীমান্তের টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চত করে জানান, এ কারণে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামায মসজিদে আদায় করতে পারেনি রোহিঙ্গা মুসলমানরা। আকিয়াব শহরের ফকির আহমদ বলেন, “মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ না করলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। আরাকান রাজ্য রোহিঙ্গা মুসলমানশূন্য করতে চাচ্ছে যালিম বর্মী সরকার।”
আচ্ছা যদি ৭৫ এর পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় না পেতেন, যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হতো রোহিঙ্গাদের মতো তখন তাঁর কাছে কতটুকু কষ্ট লাগতো?