মানবাধিকারের প্রবর্তক বলে দাবিদার আমেরিকানরা সেদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের ওপর হয়রানি বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই মুসলমানদের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকায় মুসলমানদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা প্রেসিডেন্ট ওবামার ওই প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশেষ করে পবিত্র রমযানে মুসলমানদের উপর উগ্রতাবাদী খ্রিস্টানদের হামলা ও হয়রানির ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ইয়াওমুল আহাদি বা রবিবার আমেরিকার একটি স্কুলে প্রায় ৫০ জন মুসলমান রমযান মাসের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন; যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল শিশু। ওই অনুষ্ঠানে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও প্রচ- শব্দে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পর গত ১৪ আগস্ট আমেরিকার মুসলিম পরিষদ ‘কেয়ার’ এর মুখপাত্র ইব্রাহিম হুপার এই সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘এফবিআই’-এর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছেন। আমেরিকার ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যে এ নিয়ে গত সপ্তায় দ্বিতীয়বার মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। মুসলমানদের স্কুলে ইয়াওমুল আহাদি বা রোববারের বোমা হামলার দুই দিন আগে মসজিদ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার দায়ে ৫১ বছর বয়সি ডেভিড কানারাদ নামে এক উগ্রবাদী খ্রিস্টানকে পুলিশ আটক করে। ওই ব্যক্তি খুব কাছে থেকে একজন মসজিদ রক্ষককে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ওই হামলায় মুসলমান ব্যক্তিটি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান এবং দেয়ালের গায়ে গুলি লাগে।
গত ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার শিগাগোর কাছে মুসলমানদের ওই স্কুলে হামলার পর ইব্রাহিম হুপার বলেছেন, রিপাবলিকান দলের অনেক উগ্র খ্রিস্টান সদস্য জনমনে ‘ইসলাম আতঙ্ক’ ছড়িয়ে দেয়ার কারণে সম্প্রতি আমেরিকায় মুসলমানদের উপর হামলার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে মুসলমানদের উপর হামলা ও হয়রানির ঘটনা বেড়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মার্কিন সমাজে ইসলাম বিরোধী প্রচারণার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
উল্লেখ করা যায়, গত সপ্তাহে ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা গতকাল ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যে একটি অনুষ্ঠানে রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি জু ওয়েলসের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরই মসজিদে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। রিপাবলিকান দলের ওই প্রতিনিধি মুসলমানদেরকে আমেরিকার জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরে দাবি করেছে, মুসলমানরা প্রতি সপ্তায় মার্কিন জনগণকে হত্যা করছে। অথচ দুই মাস আগেও আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে একদল উগ্র খ্রিস্টান একটি মসজিদে ঢুকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান প- করে দেয়। তারা শুকরসহ মসজিদে প্রবেশ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে নানা কটূক্তি করে। (নাউযুবিল্লাহ
শুধু তাই নয়--
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি রাজ্যে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটি মসজিদ। মাসখানেক আগেই এই মসজিদে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিল উগ্রবাদী সন্ত্রাসী খ্রিস্টানরা। সোমবার দিবাগত রাতে জলপিন ইসলামিক সেন্টার নামে ঐ মসজিদে আগুন লাগায় সাম্প্রদায়িকতাবাদী সন্ত্রাসী খ্রিস্টানরা। মসজিদের ইমাম লাহমুদ্দিনের সন্দেহ, এই আগুন বিদ্বেষপ্রসূতভাবে লাগানো হয়েছে।
এফবিআই মুখপাত্র ব্রিজেট প্যাট্টন সাংবাদিকদের বলেছে, “গত ৪ জুলাই রাতেও এই মসজিদে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। তখন ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। এবার মসজিদ ভবনটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
গত ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার দিবাগত শেষরাতে মসজিদে আগুন লাগানো হয়। তখন মসজিদের ভেতরে কোনো মুসল্লী ছিলেন না। ইমাম লাহমুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন দেখে তিনি দৌড়ে এলেও তখন করার কিছু ছিল না। জলপিন এলাকায় বসবাসকারী মুসলিম পরিবারগুলোর উদ্যোগে ২০০৭ সালে গঠিত হয় ‘ইসলামিক সোসাইটি অব জলপিন’।
এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যে মসজিদের সাইনবোর্ডটি পুড়িয়ে দেয় ইসলামবিদ্বেষী কাফির খ্রিস্টানরা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০০