নাইট সাফারির গেইট
তারিখ ২৬শে জুন ২০২১
খলিল ভাই অনেক্ষন অফিসে বসে থেকে হঠাৎ করেই বল্লেন কোথাও বেড়াতে যাবেন, অনেক হিসাব নিকাশ করে সিদ্ধান্ত হল "সিঙ্গাপুর নাইট সাফারি" দেখতে যাব।
করোনা শুরুর পর কাজ আর বাসা, বন্ধি এক জীবন থেকে একটু বাহিরে আসতে হলে মাঝে মাঝে এদিক সেদিন বেড়াতে যাওয়া দরকার।
অনলাইনে খুজাখুজি করেও টিকেট কাটতে না পেরে দুজন ছুটলাম কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কাটতে।
অফিস থেকে নাইট সাফারি ১৫ কিঃমিঃ এর মত দূরত্ব, ৬টার দিকে একটা টেক্সি নিয়ে চল্লাম একটু নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য।
কউন্টারে আসতেই জানিয়ে দিছে প্রথম এবং দ্বিতীয় গ্রুপের টিকেট শেষ, আমরা চাইলে ৩য় গ্রুপ অর্থাৎ ৯.৩০ মিনিটের গ্রুপে জয়েন করতে পারি। অনেক রিকুয়েষ্টের পর আমাদের ৩য় গ্রুপের টিকিট দিয়ে ছোট্ট একটা কাগজে লিখে দিছে ৮.৩০ এর গ্রুপে প্রবেশ করার জন্য।
হাতে তখনো ঘন্টার বেশি সময় আছে, তাই চারপাশটা একটু ঘুরতে লাগলাম।
পাশেই রিভার সাফারি এবং জু, হেটে হেটে দেখতে লাগলাম আশপাশটা। ৬টার পর যেহেতু এই দুইটা বন্ধ হয়ে যায় তাই ভিতরে প্রবেশ করার কোন অপশন নাই, আমরা বাহিরে ঘুরেফিরে কফি খুজতে লাগলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য সব দোকানই বন্ধ করে ক্লিনিং এর কাজ চলছে।
কি আর করার, টুকটাক করে কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে আসলাম নাইট সাফারির গেইটে। ভাগ্য ভাল ৮.১০ এর দিকেই আমাদের প্রবেশ করতে দিছে। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে শুরু করবো, তারপর আর কোন কিছু চিন্তা না করেই রাইড কারে উঠে বসলাম। এই গাড়িতে করেই রাতের পরিবেশে পশু পাখি দেখবো, প্রতিটা গাড়িতে ৭০/৮০ জন যাত্রী উঠার কেপাসিটি আছে। আমরা মাঝের দিকে বসলাম, ৪ জনের সিটে করোনার জন্য ২ জন বসতে পারা যায়। আমি ডানদিকে আর খলিল ভাই বামদিকে বসছে, শুরু হল আমাদের অন্য রকম এক যাত্রা।
গাড়ি ছাড়ার আগ মূহুর্তে মোবাইল এবং ক্যামেরার ফ্লাশ অফ করে নেয়ার জন্য বল্ল, আমরাও অফ করে নিলাম।
এক এক করে একটা একটা পশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, রাতের মিটিমিটি অন্ধকারে দূরে লাইটের মাধ্যমে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী করার অনেক চেষ্টা করেছে। বলতে গেলে অনেক সফল হয়েছে, রাতের আলোতে পাশুপাখি দেখা অন্য রকম একটা ফিলিং কাজ করে।
দুজন মনযোগ দিয়ে রাতের পশুপাখি দেখছি আর যতটুকু সম্ভব মোবাইলে বন্ধি করছি স্মৃতি হিসাবে রেখে দেয়ার জন্য।
৩৫/৪০ মিনিটের জার্নি শেষ করে আমাদের নামিয়ে দেয়া হল, এতটুকুন সময়ে মন বড়েনা। গাইডের সাহায্য নিয়ে রাস্তাধরে হাটতে লাগলাম জঙ্গলের ভিতর, আসলে এমন একটা পরিবেশ তৈরী করেছে ঠিক যেন জঙ্গল জঙ্গল একটা ভাব। ভয় আর রোমান্চকর এটা ভাব নিয়ে এগিয়ে চল্লাম, ১ ঘন্টার কিছু বেশি সময় হেটে ক্লান্ত হয়ে আবার ফিরে আসলাম এন্ট্রি পয়েন্টে। ততক্ষনে ঘড়িতে ১০টা বেজে গেছে, কিছুক্ষন পর নাইট সাফারি বন্ধ হয়ে যাবে তবে এই সময়ে ইচ্ছা করলে গাড়িতে করে আবার ঘুরে আসাযায়। আমরাও লাইন দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম, আসলে রাতের আধারে পশুপাখি দেখে এতটা ভাল লাগা কাজ করবে না দেখলে অনুভব করাও যাবেনা। সময় হলে একবার হলেও নাইট সাফারি দেখে নতুন এবং ভিন্ন এক এক্সপিরেন্স নেয়ার জন্য সবাইকে নিমন্ত্রন রইল।
এই ছোট্ট কাগজটা দিয়েই আমাদের ২য় গ্রুপে এন্ট্রি করার অনুমতি দিয়েছে, নতুবা ৩য় গ্রুপে প্রবেশ করলে সব কিছু এত সুন্দর করে দেখতে পারতামনা
হাটার পথে এমন ম্যাপ দিয়ে এরিয়াতে প্রাণীর পরিচয় দেয়া আছে, এই ম্যাপ ছাড়া হেটে হেটে বাহির হওয়াটা অনেক কষ্টের। আমার জন্য অসম্ভব বলা চলে
অন্ধকারে এলইডি সাইনের মান্ধমে ডিরেকশন দেয়া আছে
হাটার পথে, হারিকেনে মত করে লাইট দেয়া আছে। অনেকটাই গ্রাম্য এবং অরিজিনাল ন্যাচেরাল পরিবেশ তৈরী করেছে
সাপের খাচার সামনে পাথরের তৈরী অজগর, যদিও আমি ভয়ে হাত দিতে পারছিলাম না কিন্তু পিচ্চিটা কত সুন্দর করেই খেলা করছে সাপটার সাথে
অসাধারন সুন্দর একটা লেক, অনেকটা সময় তাকিরে থেকে কাটিয়ে দেয়া যাবে। যদিও হাতে সময় কম তাই তাকিয়ে থেকে সময় নষ্ট করার মত সময় থাকবেনা
বাদর ঝুলে ঝুলে তরমুজ কলা আপেল খাচ্ছে
মহিষ তার নিজের মত করে ঘুরে বেরাচ্ছে ঘাষ খাচ্ছে
ভাল্লোক, অন্ধকারে খুজে পেতে একটু কষ্ট হলেও একেবারেই সমনেই ছিল
ক্যাঙ্গারো
হরিণগুলি খুব মজার ছিল, গাড়ির পাশ ঘেষেই হেটে চলেছে নিজেদের মত করে।
কিছু হরিণ একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।
লম্বা গলার হাসের মত দেখতে কি যেন নাম, তবে পরিবেশ আর পাখিগুলির মিশ্রনটা চমৎকার ছিল
হাতি তার রাজ্যের রাজা, পরিবেশের সাথে এত সুন্দর করে মিশেছে যে হাতির পরিবারে নতুন একজন অতিথি এসেছে। বাচ্চা হাতিটা বাবা মায়ের পাশে থেকে হেটে বেড়াচ্ছে
এই হাতিটার মতিগতি বুঝলাম না, মুর্তির মত দাড়িয়ে ছিল সব সময়
ইন্ডিয়ান রায়েনা দেখতে পারিনি বেচারা নাকি ঘুমাতে গেছে, অনেক ডাকাডাকি করেও আনতে পারেনি। কি আর করার, ভদ্রলোকের বাড়ির ছবি তুলেই চলে আসলাম
হিমালয় ছাগল হিসাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, সেই দূরে বসেই দর্শকদের নিজেদের চেহারা দেখাচ্ছে
হায়েনা, এমন পরিবেশে কাছ থেকে এদের দেখে একটু হলেও ভয় পাবেন। মনেহয় এইবুঝি দৌড়ে কাছে চলে আসছে
গন্ডার, আশেপাশের কোন খবর নাই। নিজেদের নিয়েই এরা ব্যস্ত
সিংহ, দুজন ভালই মজা করতে পারে। অন্ধকারে আমাদের গাড়ি আর উনারা দুজন প্রেম জমাচ্ছেন আলোতে বস
সঙ্গী আড়ালে চলে গেছেন তাই সিংহ রাজ একা একা বসে দর্শক কে স্বাগতম জানাচ্ছেন
এই প্রাণীটার নাম মনে নাই, তবে নাইট সাফারিতে অনেক আনন্দের খোরাক দেবে এটা। গাড়ির পাশে এসে দাড়িয়ে থাকবে, নিষেধ না থাকলে হাতভুলিয়ে দেখা যেত
দেখতে কিছুটা কাঠবিড়ালির মত, তবে অরিজিনাল নামটা জানা হয়নি
সজারো, ছোটবেলা দাদুর কাছে গল্প শুনতান সজারোর কাটা দিয়ে নাকি কলম বানানো হত
হাটার পথে এইদুই বাঘের সাথে আপনার দেখা হবেই, গ্লাসের পাশ ঘেষে বসে থাকবে। বাচ্চারা নির্ভয়ে গ্লাসে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে
এশিয়াটিক লায়ন, চুপচাপ বসে থাকে। দুইবারে কখনো জায়গা চেইন্জ করতে দেখলাম না
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫