মুসলমান দার্শনিকেরা
অনুবাদকদের শেখ বা নেতা(Sheikh of the Translators-شيخ المترجمين)- এই নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন হুনায়ন ইবন্ ইসহাক(أبو زيد حنين بن إسحاق العبادي ;৮০৯-৮৭৩)। আজীবনের খৃষ্টধর্মাবলম্বী এই জ্ঞানসাধক একজন প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ছিলেন। গ্রীক, সিরীয়, আরবী এবং ফারসী ভাষায় পন্ডিত এই ব্যক্তি গ্রীক বিজ্ঞানের গ্রন্থসমূহ আরবী এবং সিরীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। এদের মধ্যে অ্যারিস্টটল, টলেমী আর গ্যালেনের বিখ্যাত কাজসমূহও অন্তর্ভূক্ত ছিল। ছোট-বড় মিলিয়ে তাঁর অনুবাদ কাজের সংখ্যা ১২৯ বলা হয়। তাঁরই পুত্র ইসহাক ইবন্ হুনায়ন(إسحاق بن حنين بن إسحاق; ৮৩০-৯১০/৯১১) এবং ভ্রাতুষ্পুত্র হুবায়েশ ইবন্ আল হাসান এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন। আব্বাসীয় শাসনামলের শুরু(৭৫০) থেকেই গ্রীক এবং ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুবাদকর্মের শুরু হয় ঠিকই, তবে হুনায়নের হাত ধরে এ কাজ এমন গতি লাভ করে যে, এটি একটি আন্দোলনের(The Translation Movement) রূপ নেয় এবং পরবর্তী প্রায় এক শতক অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকে। এমনকি, এরপরেও কয়েক শতক এই ধারা কম বেশী অব্যাহত থাকে।
হুনায়ন ইবন ইসহাকের আবির্ভাব বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের প্রবেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। একইভাবে, আশ’আরী(الأشاعرة) সম্প্রদায়ের আবির্ভাব দর্শনের জগত সম্পর্কে মুসলমানদের নতুন করে ভাববার অবকাশ দেয়। খৃষ্টীয় অস্টম শতকে কাদ্রিয়া শিক্ষক হাসান আল বসরীর সাথে শিষ্য ওয়াসিল ইবন আ’তার মতদ্বৈততা যেমন করে মু’তাজিলা সম্প্রদায়ের সূচনা ঘটায়, তেমন করেই দশম শতকের শুরুর দিকে মু’তাজিলা শিক্ষক আবু আলী আল-জুবাঈ(أبو علي الزوبعي; ?-৯১৫) এর সাথে শিষ্য আবু আল-হাসান আল-আশ’আরীর(ابو الحسن علي ابن إسماعيل اﻷشعري; ৮৭৪-৯৩৬) মতভিন্নতা আশ’আরী মতাদর্শের সূচনা করে। আশ’আরীরা সে সময় কালে, যুক্তিবাদের উপর মু’তাজিলাদের চরম আস্থা এবং হাম্বলীদের ঐশী প্রত্যাদেশের উপরে পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাসের মাঝামাঝিতে এসে দাঁড়ান। এ সম্প্রদায় মু’তাজিলাদের প্রায় প্রতিটি মতামতের বিরোধীতা করে। মজার বিষয় হচ্ছে, মু’তাজিলারা সবসময় যে যুক্তি-বুদ্ধিকে সব কিছুর উপরে(ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মতত্ত্বেরও উপরে) স্থান দিয়েছেন, আশ’আরীরা কম- বেশী সেই যুক্তির অস্ত্র দিয়েই তাঁদের দর্শনের বিরোধীতা করেন।তবে, তাঁরা সকল কিছুর উপরে ঐশী প্রত্যাদেশকে(ওহী) গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
আল্লাহর গুনাবলীকে আশ’আরীরা আল্লাহর সত্ত্বা হতে আলাদা করেই দেখতেন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, আল্লাহর এই সব গুনাবলীকে মানুষের গুনাবলীর মত করে দেখলেই সমস্যা। এসব গুনাবলী মানবিক গুনাবলীর মত নয় যে, এসবের আরোপ আল্লাহর স্বাধীন সত্ত্বার উপর বহুত্ব আরোপ করবে। আল্লাহর ন্যায়পরায়নতাকে তাঁরা অস্বীকার করেন না। তাই বলে, তাঁরা আল্লাহর উপর কোনরূপ বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে রাজি নন। পাপীকে তিনি শাস্তি দেবেন আর পূন্যবানকে করবেন পুরষ্কৃত। কিন্তু, এটি করতে তিনি বাধ্য- এমন কথা তাঁরা মানতে নারাজ। কুরআনের অনিত্য হবার প্রশ্নে মু’তাজিলারা আশ’আরীদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশী সমালোচনার সম্মুখীন হন। কুরআনকে অন্যান্য গ্রন্থের ন্যায় সাধারণ গ্রন্থ ধরে নিয়ে একে পরবর্তী সময়ের সৃষ্ট মেনে নিতে তাঁরা নারাজ। এটি অনাদি, লওহে মাহ্ফুজে এটি অন্য রূপে সংরক্ষিত ছিল। ফেরেশতাদের বৈঠকে এটি পঠিত হোত। মুহাম্মাদের(স) উপর অবতীর্ণ হবার সময় একে বর্ণে-শব্দে-বাক্যে সুসজ্জিত করা হয়। সেই অর্থে একে সৃষ্ট বলা যেতে পারে, অন্য কোন অর্থে নয়। তাঁরা বলতেন, কুরআনকে অনিত্য এবং সৃষ্ট বলে প্রচার করা হলে, তা মুহাম্মাদের(স) নিজের চিন্তার ফল বলে প্রচারিত হওয়ার আশংকা থেকে যায়। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে তাঁরাও স্বীকার করেন তবে, এমনভাবে নয় যাতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ধারনা ক্ষুন্ন হয়। তাঁদের মতে আল্লাহই মানুষের মাঝে কর্মশক্তি সৃষ্টি করেন, তারপরে সৃষ্টি করেন ইচ্ছা এবং পরিশেষে তাঁর দ্বারা কর্ম সম্পাদন করান।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আশ’আরী এবং মু’তাজিলা উভয় সম্প্রদায়ই ছিল যুক্তিবাদী। কিন্তু, মু’তাজিলারা যুক্তির উপর অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন, পক্ষান্তরে আশ’আরীরা প্রাধান্য দিয়েছেন ঐশী প্রত্যাদেশকে, যদিও তাঁরা যুক্তিকে একেবারে অস্বীকার করে বসেন নি। উভয় সম্প্রদায়ের আলোচ্য বিষয় ছিল মোটামুটি একই, প্রভেদ ছিল কেবল সিদ্ধান্তে। এর বাইরে, আশ’আরীরা পরমাণুতত্ত্ব নামে একটি নতুন ধারনার প্রচার করেন যা আধুনিক বিজ্ঞানের পরমাণুর ধারনার অনেক কাছাকাছি যদিও তাঁদের এই ধারনা নিছক দার্শনিক চিন্তার বাইরে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে গড়ে ওঠে নি।
আশ’আরীদের মাঝে আবু আল-হাসান আল-আশ’আরীর পরে আরো যারা অবদান রাখেন তাঁদের মাঝে আবু বকর মুহাম্মাদ আল-বাকিলানী(?-১০১৩), আবু ইস্হাক ইস্ফেরানী(?-১০৪০), আব্দুল মালিক জুওয়াইনী(১০৪১-১১০০), আবুল ফাতাহ্ আল-শাহরাস্তানী(ابو الفتح محمد الشهرستاني; ১০৮৬-১১৫৩) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জ্যোতির্বিদ ফখরুদ্দীন আল-রাজী(أبو عبدالله محمد بن عمر بن الحسین فخرالدین الرازي ;১১৪৯-১২০৯), বিজ্ঞানী ইবন আল হাইছাম(৯৬৫-১০৩৯), আল-বিরুনী(৯৭৩-১০৪৮) এবং ‘ইতিহাস দর্শনের জনক’ ইবন্ খালদুন(أبو زيد عبد الرحمن بن محمد بن خلدون الحضرمي; ১৩৩২-১৪০৬)ও আশ’আরী প্রভাবিত ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু, এঁরা সকলেই এক মহীরুহের ছায়ার নীচে ঢাকা পড়ে যান আর তিনি হচ্ছেন, আবু হামিদ মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আল-গাযালী(ابو حامد محمد ابن محمد الغزالی; ১০৫৮-১১১১)। সে আলোচনা রয়েছে পরের দিকে।
আবু আল-হাসান আল-আশ’আরীর সমসাময়িক ছিলেন ‘দ্বিতীয় অ্যারিস্টটল’(The Second Aristotle- وأرسطو الثانية) বলে খ্যাত আবু নাসর মুহাম্মাদ আল-ফারাবী(أبو نصر محمد الفارابي; ৮৭২-৯৫০)। অ্যারিস্টটলের দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা দ্বারা প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত এবং এক্ষেত্রে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হওয়ায় তাঁর এই উপাধি। তাঁর রচিত শতাধিক গ্রন্থের মাঝে প্রায় ৫০টিই অ্যারিস্টটলের গ্রন্থাবলীর টীকা-ভাষ্য হিসেবে রচিত। তিনি অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর দর্শনের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। একজন ধর্মপরায়ন মুসলিম এবং সুফীবাদী(সুফীবাদ নিয়ে আলোচনা আমরা পরের দিকের জন্য রেখে দিয়েছি) হিসেবে তিনি দার্শনিক মতাদর্শ এবং কুরআনের শিক্ষার অভিন্নতাকে প্রমানের চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই যুক্তিবিদ, মাত্তা ইবন ইউনুসের কাছে যুক্তিবিদ্যার চর্চা শুরু করে কালক্রমে স্বীয় শিক্ষককেও ছাড়িয়ে যান। ফলে, তাঁকে 'দ্বিতীয় শিক্ষক'(The Second Teacher -المعلم الثاني) বলেও ডাকা হয়। তাঁর মতে, যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে এমন এক বিষয় যা জানা জ্ঞান হতে অজানা জ্ঞানের দিকে ধাবিত হয়। এতে নির্ভুল ধারনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে সুবিধা হয়, গোপন বাস্তবতা উন্মোচিত হয় এবং প্রকৃত জ্ঞান পাওয়া যায়। তাঁর দর্শনের মূল দুইটি আলোচ্য বিষয় ছিল অধিবিদ্যা(Metaphysics) এবং রাষ্ট্রদর্শন। এ বিষয়ে তাঁর বিখ্যাত দুইটি গ্রন্থ ‘পবিত্র নগরীর অধিবাসীদের অভিমত’(The Ideas of the Citizens of the Virtuous City- أفكار للمواطنين من المدينة الفاضلة) এবং ‘আদর্শ নগরী’(The Virtuous City- المدينة الفاضلة)। দার্শনিক জ্ঞানে ফারাবী এমন এক স্তরে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর মতাদর্শ ‘ফারাবীবাদ’(Farabism) নামে পরিচিতি লাভ করে। তাঁর ‘এহইয়া উল উলূম’(Encyclopaedia of Science) পরবর্তী সময়ে পাঁচ খন্ডে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং পাশ্চাত্য রেঁনেসার শুরুর দিকের কান্ডারী রজার বেকন(Roger Bacon; ১২১৪-১২৯৪), আলবার্ট দ্য গ্রেট(Albertus Magnus; ১২০৬-১২৮০), থমাস অ্যাকুইনাস(Thomas Aquinas; ১২২৫-১২৭৪) প্রমুখ ফারাবী দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছেন।
জন্মভূমি আফসানায় ইবন্ সীনার নামে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
ফারাবী তাঁর কাজকে যেখানে রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে পথ চলা শুরু করেন আবু আলী আল হুসাইন ইবন্ আবদুল্লাহ্ ইবন্ সীনা(ابوعلی سینا; ৯৮০-১০৩৭), চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাঁর অমর অবদান নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। প্রথম যৌবনে বিখ্যাত দার্শনিক আবু আবদুল্লাহ আল-নাতালির কাছে অ্যারিস্টটল, টলেমী এবং ইউক্লিডের গ্রন্থাবলী অধ্য্যনের সুযোগ পান তিনি। অতি অল্প সময়েই এক দিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবং অন্যদিকে দর্শনে তিনি সমসাময়িককালের সবাইকে ছাড়িয়ে এমন এক উচ্চতায় উঠে যান যে, প্রধান শায়খ বা ‘আল-শায়খ আল-রাইস’(الشيخ الرئيسية) নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বকে তিনি পুরোপুরি আলাদা করে ফেলেন। তাঁর মতে, প্রত্যাদেশ ও প্রজ্ঞার সমন্বয় সাধন দর্শনের কাজ নয় বরং প্রজ্ঞার সাহায্যে জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর সমাধান দেয়াই দর্শনের কাজ। আল্লাহর সত্ত্বার ব্যাপারে তিনি মু’তাজিলা এবং আশ’আরী উভয়ের বিরোধীতা করে বলেন, আল্লাহ তাই করেন যা তাঁর স্বভাবের মাঝে রয়েছে। যা তাঁর স্বভাবের মাঝে নেই, তা তিনি করেন না বা করতে পারেন না। তিনি প্রাচ্যে অ্যারিস্টটলের শেষ বড় ভাষ্যকার। ফারাবীর মত তিনিও ইসলামী দর্শনের সাথে অ্যারিস্টটলের দর্শনের সামঞ্জস্য বিধানের প্রচেষ্টা চালান। এছাড়া, নব্য-প্লেটোবাদ(Neo-platonic) এবং অ্যারিস্টটলের মাঝে বিরোধ নিরসনেও তিনি কাজ করেন। এভাবে, আল-কিন্দির হাত ধরে গ্রীক দর্শনের সাথে মুসলমানদের পরিচয় এবং পথ চলার যে শুরু হয়েছিল তা আল-ফারাবীর হাতে বিকশিত হয় এবং ইবন সীনা একে পূর্ণতা দান করেন। ফলে, ‘ফারাবীবাদ’ বিবর্তিত হয়ে ‘সীনাবাদ’(Avicennism) এ পরিণত হয়। তাঁর রচিত ১৮ খন্ডের ‘কিতাব আল-শিফা’(كتاب الشفاء- The Book of Healing) এখনো পর্যন্ত দর্শনের জগতে একটি প্রামান্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানে এটি কয়েক শতক রাজত্ব করেছে। রজার বেকন, থমাস অ্যাকুইনাস ছাড়াও ইমানুয়েল কান্ট(Immanuel Kant; ১৭২৪-১৮০৪), স্পিনিজা(Baruch Spinoza; ১৬৩২-১৬৭৭) এবং রেনে দেকার্তের মত বড় বড় চিন্তাবিদ তাঁদের জ্ঞানসাধনার জন্য তাঁর কাছে সরাসরি ঋনী। দর্শনে তাঁর অন্যান্য কাজের মধ্য রয়েছে ‘কিতাব আল ইশারাত ওয়াল তানবিহাত’(The Book of Remarks and Admonitions), ‘কিতাব আল-নাজাত’(كتاب آل نجاة - The Book of Salvation), এবং ফারসী ভাষায় রচিত ‘দানিশনামা’(The Book of Scientific Knowledge)। সবকিছু মিলিয়ে ইবন্ সীনা বিশ্ব দর্শনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী চিন্তাধারার প্রবক্তা যার হাত দিয়ে প্রাচীন পৃথিবীর মতবাদ এবং দার্শনিক মতাদর্শ একটি স্বতন্ত্র ধারায় পরিচালিত হয়। একারনে, তিনি আজো ‘দার্শনিকদের যুবরাজ’ (The Prince of Philosophers- أمير الفيلسوف) নামে সমাধিক পরিচিত।
ইরানের হামাদানে ইবন্ সীনার সমাধি
আমরা আগেই বলেছি যে, মুসলমানদের মাঝে বিজ্ঞান এবং দর্শন একেবারে শুরু হতেই হাতে হাত ধরে পথ চলেছে। ফলে, এ সময়কালে বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এমন প্রায় প্রতিটি ব্যক্তি দর্শনেও কম-বেশী অবদান রেখেছেন। লেখার কলেবর অযাচিতভাবে বৃদ্ধির আশংকায় তাঁদের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না করে শুধুমাত্র নামগুলো উল্লেখ করাই যথার্থ মনে করছি। অস্টম শতক থেকে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত স্পেন, উত্তর আফ্রিকা থেকেশুরু করে পারস্য, তূর্কিস্তান পর্যন্ত বিশাল লোকালয়ে যাঁরা দর্শনে অবদান রেখেছেন তাঁরা হলেন, ইবন বাজ্জাহ্(ابن باجة; ?-১১৩৮), ইবন তুফাইল(أبو بكر محمد بن عبد الملك بن محمد بن طفيل القيسي الأندلسي; ১১০৫-১১৮৫), ইবন মিস্কাওয়া(ابن مسكوويه; ৯৩২-১০৩০), ইবন্ হাজম(بو محمد علي بن احمد بن سعيد بن حزم; ৯৯৪-১০৬৪), ইয়াহিয়া আন-নাহ্বী, আবুল ফারাজ আল-মুফাসসির(), আবু সুলায়মান আল-সাজযী(), সাবিত ইবন ক্বুরা(ثابت بن قرة; ৮৩৬-৯০২), মুহাম্মাদ আল-মুকাদ্দেসী(محمد بن أحمد شمس الدين المقدسي; ৯৪৫-১০০০), ইউসুফ বিন মুহাম্মাদ নিশাপুরী(),আহমাদ ইবন সাহল আল-বলখী(৮৫০-৯৩৪), আহমাদ ইবন তাইয়িব আল-সারাখসী, তালহা ইবন মুহাম্মাদ আল-নাফ্সী, ইয়াহিয়া ইবন আদী আল-যুমাইরী, আবুল হাসান আল-আমরী প্রমুখ। এছাড়া, ইহুদী ধর্মাশ্রিত কয়েকজন দার্শনিকও এ সময় অবদান রাখেন যাঁদের মাঝে সাদিয়া ইবন ইউসুফ(سعيد بن يوسف الفيومي; ৮৮২-৯৪২) এবং মুসা ইবন মায়মুন(موسى ابن ميمون; ১১৩৭-১২০৪) সমাধিক পরিচিত।
লক্ষ্যনীয় যে, এতে দর্শনের জগতের আরো দুই মহীরুহ আল-গায্যালী এবং ইবন রুশদের নাম উল্লেখ করা হয় নি। এই দুইজন যখন অবদান রেখেছেন ততদিনে বিজ্ঞানে মুসলমানদের পতনের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই, তাঁদের দর্শন ও অন্যান্য অবদানের আলোচনা পরবর্তীতে সে সময়ের বাস্তবতাতেই করা উচিৎ বলে মনে হয়েছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে অবদানের বর্ণনার এই হচ্ছে শেষ পর্ব। এই সুদীর্ঘ আলোচনা থেকে এটুকু অন্ততঃ পরিষ্কার হওয়া উচিৎ যে, বিজ্ঞানে মুসলমানেরা যে পরিমান অবদান রেখেছেন তা সে সময়ের নিরিখে তো বটেই আজকের বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও একেবারে ফেলে দেবার মত নয়। এরপর থেকে আমরা এই অবদানের পেছনের কারন এবং নিয়ামকগুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
চলবে.....
আগের পর্বগুলোঃ
১. ভূমিকা পর্ব
২. বিজ্ঞানের দর্শন
৩. প্রাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস
৪. মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
৫. ব্যবহারিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
৬. রসায়নবিজ্ঞানে অবদান
৭. আলোকবিজ্ঞানে অবদান
৮. জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান- প্রথম পর্ব
৯. জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান- দ্বিতীয় পর্ব
১০. গণিতে অবদান
১১. ইসলামে বিভিন্ন দর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ
১২. ইসলামে বিভিন্ন সম্প্রদায়গত দর্শনের সারসংক্ষেপ
১৩. মু’তাজিলা দর্শন এবং স্বাধীন দার্শনিকদের উদ্ভব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১০ বিকাল ৩:৪৫