মৃত্যুভয়টা মানুষের জীবনে ঠিক কোন সময়ে আসে? ব্যাপারটা তো এমন না যে হুট করেই একটা মানুষের এমন হলো; সে ঘুমাতেই ভয় পাচ্ছে, যদি ঘুম থেকে উঠে তার আর পৃথিবীটা দেখা সুযোগ না হয়! নিশ্চয় এরকম হবে না। ব্যাপারটা আস্তে ধীরে আসে বটে তবে গ্রাস করে হুট করে। হঠাৎ মনে হবে; কেন করছি এত কিছু, কিসের এত মোহ, আমি তো সবকিছু ছেড়ে চলে যাবো।
সাংঘাতিক একটা ব্যাপার গভীর ভাবে ভেবে দেখলে। মানুষ কেন যা কিছু ভয় পায় তার গভীরে যেতে চায় না? পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী মানুষটাও কি মৃত্যুকে ভয় পায়? কখন আসে এই মৃত্যু ভয়? কোন বয়সে? ১৯ বছর? নাকি ৬০? কেন আসে? দীর্ঘস্থায়ী হয় এইসব চিন্তাভাবনা? চলে গেলেও কত সময় পর যায়?
আমি কি এখন এই মৃত্যু ভয় নামক রোগে আক্রান্ত? মৃত্যু খুব স্বাভাবিক একটা প্রোসেস। আমরা এসেছি, চলেও যাবো। কাছের মানুষ গুলো হয়তো একটু কষ্ট পাবে, একটা সময় ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই কঠিন সত্য নাহয় নাই বা মানতে পারলাম, তবে ভয় কেন? ব্যাপারটা কি এই ভীষণ সুন্দর মানব জীবনের মায়ায় কিংবা পৃথিবীর মোহে হয়? নাকি পরকালে যে জীবনের মুখোমুখি হবো তা ঠিক কেমন হবে এই অনিশ্চয়তায়? কেন মৃত্যু এতটা ভয়ংকর?
যা আমার মূল কর্তব্য, যার জন্য পৃথিবীতে আসা, তাই করতে ব্যর্থ হচ্ছি প্রতিনিয়ত এবং যা করা উচিৎ নয় তাই করে যাচ্ছি, এজন্যই কী ভয়টা কাজ করে? আমি বোধহয় স্পষ্ট করে কিছু না বললেও হালকা ধরতে পেরেছি ব্যাপারটা।
মানুষের আফসোস করার মতো অনেক গুলো ব্যাপারের একটি হলো, সে কখনো জানতে পারে না মৃত্যুর পর কে তার জন্য ঠিক কত ফোটা চোখের জল ফেলেছে। আমার মৃত্যুর পর মানুষজন কী করবে জানতে ইচ্ছে করে মাঝেমাঝে। যারা কখনো আমার একটু খোঁজ খবর নেই নি, আমি কেমন আছি তাও জিজ্ঞেস করার সময় হয়নি যাদের তাদের অনেকেই হয়তো আমাকে ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দিবে ফেসবুকে, তাদের সাথে কোন এককালে হওয়া কোন চ্যাট ইনবক্স থেকে স্ক্রীণশট নিয়ে আবেগী একটা ক্যাপশন নিয়ে পোস্টও করবে হয়তো।
....
আফজাল সাহেব পরের পৃষ্ঠায় না যেয়ে ডায়েরী বন্ধ করে দিলেন। ডায়েরীটা আফজাল সাহেব রেখে দিলেন আসাদের বুক শেল্ফে। শেল্ফ ভর্তি বই। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে হুমায়ূন, সবগুলো বই বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো শেল্ফে। আসাদ বেশ গুছানো ছিল। আফজাল সাহেব জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। মেঘ গুলো কেমন কালো কালো হয়ে বসে আছে। তিনি চশমাটা খুলে রাখলেন আসাদের টেবিলে। জীবনে কত অদ্ভুত ঘটনাই না ঘটে। যেই ছেলে কিছু দিন আগে মৃত্যু নিয়ে ভাবছিলো, সে আজ নেই। তার ভাবনাটাও আছে ডায়েরীর পাতায়, সে নেই।