বহুদিন পর সামুর কথা মনে পড়লো। আমার জীবনের গল্পটা যদি এখন লিখতে চাই; ঘটনাবহুল কিংবা খুব সাসপেন্স আছে এরকম কিছু হইতো লিখতে পারবো না। মনে কেবল কিছু কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুক্ষণ ধরে। অনেকসময়, অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়; একজন মানুষ বুঝতেই পারে না, জীবন নিয়ে, নিজের পৃথিবীটাকে নিয়ে তার কিছু বলার আছে।
সাহিত্যিক ভাষায় কিছু বলবো না, সাহিত্য আমার দ্বারা হবে না। নর্মালিই কিছু কথা বলি। এখন ব্লগে ঢুকলে দেখা যাবে আমি ব্লগ লিখছি প্রায় ৩ বছর হলো। একদম প্রথম দিকের কথা। ক্লাস নাইনের শেষের দিকে হইতো। কীভাবে মনে নেই, সেই সময়টাতে ধীরে ধীরে লেখক হবার ভয়ঙ্কর একটা ভূত আমার ঘাড়ে চেপে বসলো। এরকম কিছু ব্যাপার থাকে না; আমি কিছু একটা এখন চাইছি, এখনই পেতে হবে, এরকম অনেকটা।
সময়ের কাটা ঘুড়তে লাগলো। আমি হাটছি, বসছি, খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি। যা করতে হয় তাই করছি, এর বাইরে কিছু না।
একদিন জন রাসেল ভাইয়ের কাছ থেকে সামুর কথা শুনলাম। এভাবেই ব্লগে আসা। লিখবো। সবার সাথে পরিচয় হবে। স্বপ্নের পেছনে ছুটা। এমন ভাব যেন তখনই স্বপ্নটা হাতের মুঠোয় বন্দী করে খেয়ে ফেলবো। বই বের হবে, একদিন আমি ঢাকা বইমেলায় দাঁড়িয়ে অনেক গুলো মানুষকে অটোগ্রাফ দেব। খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবো, ভাই কেমন লেগেছে বই টা? অনেক কষ্ট করেছি স্বপ্নটাকে বাস্তব করার জন্য।
তারপর দিন গেল, মাস গেল, বছর গেল। আজকে আমার কলেজ লাইফ পুরোপুরি ভাবে শেষ হলো। মানে টেস্ট এক্সাম শেষ। সামনে কি হবে জানি না। এখনই বেশির ভাগ সময় মনে থাকে না, আমি একজন লেখক হতে চেয়েছিলাম, একটা সময় আমি লিখতাম। যত ইম্যাচুর্ড হোক না কেন, কিছু না কিছু লিখতাম। অবস্থাটা এমন; ঠিক শেষ কবে আমার এসব মনে ছিল তাও জানি না। হঠাৎ গান শুনতে শুনতে মনে পড়লো সামুতে একসময় আমি ব্লগিং করতাম। একটা সময় আমার ভীষণ লেখক হওয়ার ইচ্ছে ছিল।
সবাই সবার স্বপ্নের পিছু ছুটতে পারে না। হাজার মানুষের হাজারটা মোটিভেশনাল উক্তি পড়ে অনেকরকমের ভান ধরা যায়। কিন্তু দিনশেষে, পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছে, যারা আসলেই তাদের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পেরেছে এবং একটা সময় জীবনের চূড়ান্ত কোন পর্যায়ে ছুতে পেরেছে স্বপ্নটাকে।
কোন এক বিষণ্ণ বিকেলে, আপনার মন খারাপ হবে। আপনি বিষণ্ণ একটা সময়ের প্রান্তে একা দাঁড়িয়ে ভাববেন একটা সময় জীবনে কিছু একটা হতে চেয়েছিলেন। তারপর কীভাবে যেন কী হয়ে গেছে বুঝতেই পারেননি। কীভাবে যেন কিসের গোলকধাঁধায় ধাঁচ হারিয়ে ফেললেন, পথচলা ঘুড়ে গেল। চারপাশে খুব সুক্ষ একটা দৃষ্টিতে দেখবেন। একটা মুহূর্তের জন্য মনে হবে এই জীবনটা আপনি চাননি। অন্যরকম একটা জীবন চেয়েছিলেন।
কোন একদিন খুব জোছনা হবে, আপনার বাসার ছাদ জোছনার চাদরে ঢেকে থাকবে। আপনি আনমনে একটা মুহূর্তের জন্য হলেও চাঁদটার দিকে তাকিয়ে ভাববেন হইতো জীবনটা আরো সুন্দর ভাবে কাটানো যেত।
যেই ছেলেটার বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন ছিল সে হইতো বুয়েট ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় একটা মুহূর্তের জন্য ভাববে, "ইশ যদি সময় টাকে কাজে লাগাতাম, যদি একটু কষ্ট করে কয়েকটা মাস ভালমতো পড়তাম।"
নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। তারপর চলে যেতে হবে। নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য জীবনটাকে আমাদের দেয়া হয়। আফসোস, এই সময়টা আমরা আমাদের মতো করে কাটাতে পারি না। আমাদের ইচ্ছেটাকে নিজেদের মতো করে প্রকাশ করতে পারি না, মনের ভেতর রেখে দিতে হয় দিনের পর দিন। সমাজ, টাকা পয়শা, পৃথিবীতে বড় হওয়ার "অফিশিয়াল নিয়ম", অনেক কিছুতেই স্বপ্ন গুলো চাপা পড়ে ধুলো হয়ে যায়। ধুলো গুলো বাতাসে উড়তে উড়তে হারিয়ে যায়, আমাদের জীবন বৃত্তের বাহিরে।