তোমাকে যদি বলা হয় ইমেইল কাকে বলে?
তুমি হয়তো বলবে, 'ইমেইল হলো ইলেকট্রনিক ডাকযোগাযোগ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে দূরদূরান্তে খুবই অল্পসময়ে বার্তা লিখে পাঠানো যায়। এটি আধুনিক কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর...'
হ্যাঁ, আজকালকার দিনে ইমেইলকে দেখে মনে হয় 'দূরদূরান্তে', 'পৃথিবীর অপরপ্রান্তে' যোগাযোগের এক শক্তিশালী মাধ্যম। ইমেইলের শুরুটা কিন্তু এভাবে হয়নি। প্রথম ইমেইল পাঠানো হয় যে কম্পিউটারে ইমেইলটা কম্পোজ করা হয়েছে, তার ঠিক পাশের কম্পিউটারে। ১৯৭১ সালে শুরুর এই কাজটা করেন রে টমলিনসন। তিনিই প্রথম ইমেইল পাঠান বলে ইমেইলের জনক তাঁকেই বলা হয়। এর আগেও যে ইমেইল পাঠানো যেত না, তা নয়। তবে সেটা ভিন্ন কম্পিউটারে পাঠানো যেত না। যে কম্পিউটারে লেখা হয়েছে, সেই কম্পিউটারেরই অন্য ব্যবহারকারী পেতো।
টমলিনসনের জন্ম নিউইয়র্কের আর্মস্টারডামে। আরপিআই থেকে তড়িৎপ্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরে তিনি এমআইটি থেকে লাভ করেন মাস্টারস ডিগ্রি। কর্মক্ষেত্রে তিনি একটি কোম্পানিতে মেইনফ্রেম কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপের জন্য কাজ করেন।
সেখানে কাজ করার সময় তাঁকে বলা হলো, টাইমশেয়ারিং কম্পিউটারের মধ্যে মেসেজ আদানপ্রদান করে, এমন একটা প্রোগ্রামকে পরিবর্তন করার জন্যে। তিনি করলেন কি, ঐ প্রোগ্রামটাকে এমনভাবে পরিবর্তন করলেন, যেন তার মাধ্যমে শুধু একটি টাইম শেয়ারিং কম্পিউটার নয়, আরপানেটের মাধ্যমে পুরো ভিন্ন কম্পিউটারেও যেন মেসেজ পাঠানো যায়।
প্রথম পাঠানো ইমেইল মেসেজটি কী ছিল, তা টমলিনসন নিজেও ঠিকঠাক বলতে পারেন না। কারণ এটা অর্থহীন কিছু ছিল, যা মনে রাখার কোনো দরকার তিনি বোধ করেননি! প্রথমদিকে এই ইমেইলটাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আর যেহেতু তাঁর এমপ্লয়েয়ারের পক্ষ থেকে এসব করার নির্দেশ ছিল না, তিনি তখন তার সহকর্মী জেরি বার্চফিলকে বলেন, 'এবিষয়ে কাউকে কিচ্ছু বোলো না; ওপর থেকে আমাদের কিন্তু এসব করার কোনো নির্দেশ ছিল না!'
বর্তমানে আমরা @ চিহ্ণটি অহরহই ব্যবহার করছি। ইমেইল ছাড়াও ফেসবুকে বা টুইটারে কাউকে মেনশন করার জন্যে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এর প্রচলনও করেন টমলিনসন। তার আগে বেশ বিদঘুটে ইমেইল ঠিকানা লিখতে হতো। (যেমনঃ ami!tumi!maa!baba!golperboi!school!porashona!games)
পরবর্তীতে এই যুগান্তরকারী আবিষ্কারের জন্যে তাঁকে বহু পুরষ্কার দেয়া হয় এবং ২০১২ সালে 'ইন্টারনেট হল অব ফেমে' জায়গা করে নেন টমলিনসন।
গত মার্চ মাসের ৫ তারিখে আমেরিকার ম্যাসাচুয়েটসে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান এই মহান উদ্ভাবক, গবেষক, পথিকৃৎ।
ইমেইল! ইমেইল!!
* সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায় রে টমলিনসন ইমেইল উদ্ভাবক হলেও বাস্তবজীবনে তিনি বেশ কমই ইমেইল পড়তেন।
* বিল ক্লিনটন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি থাকাকালে পুরো সময়ে (১৯৯৩–২০০১) মাত্র দুটো ইমেইল করেন।
* ইংরেজিতে '@' চিহ্ণটাকে বলে 'অ্যাট সাইন', 'অ্যাট সিম্বল', 'অ্যাট দ্য রেট', 'অ্যাম্পারসেন্ড' ইত্যাদি। ডাচ ভাষায় একে বলা হয় 'ছোট বানরের লেজ'। চায়নিজ ভাষায় বলে 'নেংটি ইঁদুর'। স্প্যানিশ আর পর্তুগিজ ভাষায় একে ভর মাপার একক 'অ্যারোবা' বলা হয়। (এক অ্যারোবা প্রায় ২৫ পাউন্ডের সমান।)
* আজকাল যেমন লোকে পাঁচ মিনিট পর পর ফেসবুক নোটিফিকেশন বা টুইটার চেক করে, ঠিক তেমনি কিছুদিন আগে ইমেইল চেক করার ভয়াবহ আসক্তি ছিল। এর ওপর ভুরি ভুরি গবেষণাও হয়েছে বৈকি!
* ২০১০ এর প্রথম অর্ধেক সময়ে ইন্টারনেটে পাঠানো প্রায় ৯২% মেসেজই হলো স্প্যাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৮