somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারপর মৃত্যুর পর

২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ডেথ এন্ড হোয়াট কামস নেক্সট)
মূলঃ টেরি প্রাচেট
অনুবাদঃ তাহমিদ-উল-ইসলাম

একবার এক দার্শনিকের দুয়ারে মৃত্যু কড়া নাড়লো। দার্শনিক তার গাম্ভীর্য নিয়ে মৃত্যুকে বলেন, "এখন তুমি বুঝতে পেরেছ যে আমি একই সাথে জীবিত এবং মৃত।"
মৃত্যু এবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, হয়তো সে জীবিত কিংবা হতে পারে সে মৃত! আবার মনে হয় কোয়ান্টাম থিওরি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। এজন্যে দার্শনিকদের থেকে দূরে থাকতে চায়। এসব ক্ষেত্রে দার্শনিকরা মাথা খাটিয়ে, চালবাজি করে পার পেয়ে যেতে চায়।
মৃত্যু স্থির। সে দেখছে, তার জীবনের মুহুর্তগুলো ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। দার্শনিক বলে, "তুমি দেখছ যে সবকিছুই ছোট ছোট কণা দিয়ে তৈরি। এই কণাগুলো একই সময় একই সাথে অনেক জায়গায় থাকতে পারে। কিন্তু এই ছোট ছোট কণা দিয়ে তৈরি বস্তু কিন্তু একই সময় একই জায়গায় থাকতে পারে না। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকে। এটা কিন্তু কোয়ান্টাম থিওরি সাপোর্ট করে না। ... আমি কি বাকিটা বলব?"
মুহুর্তগুলোর দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে মৃত্যু বলে, "সবকিছু অনিশ্চিত নয় কিন্তু সবকিছুই ক্ষণিকের জন্যে।"
"ধরলাম এরকম হাজার হাজার, অসংখ্য পৃথিবী আছে, সূর্য আছে, নক্ষত্র আছে। তাহলেই কি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? যদি অসংখ্য দুনিয়া থাকে, অস্তিত্ব থাকে, তাহলে এই বিছানাটাও, ঘরটাও একটা নয়। একই সময় হাজার হাজার ঘর আছে, এরকম বিছানাও আছে।"
"এটা কি নড়াচড়া করতে পারে?”
"মানে?”
বিছানাটাকে দেখিয়ে মৃত্যু বলে, "তুমি কি কোনও সময় অনুভব করেছো যে এটা নড়ছে?”
"না। আমার মতন, হাজার হাজার বিশ্বে ঠিক পুরোপুরি আমার মতন আরো অনেকেই আছে। আর তাদের মধ্যেই সবাইই চলে যাচ্ছে না, সবারই মৃত্যু হচ্ছে না! যে কোনও কিছুই সম্ভব।"
মৃত্যু তার মরণাস্ত্রটাতে ইচ্ছে করেই একটা টোকা দেয়। বলে, "তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো যে...?”
"হুঁ, তাহলে আমি তো আসলে মরে যাচ্ছি না? তুমি তো আমার জীবনটা নিশ্চিত নিয়ে যেত পারবে না।"
মৃত্যু এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এক মুহুর্ত ভাবে মহাশূন্যের কথা। আসলে এটাই ছিল বিপদ।
আসলে মহাশূন্য তো পৃথিবীর অসীম মেঘে ঢাকা আকাশে ছিল না... কোনও সময়ই না। কিন্তু যখন মানুষ মহাশূন্যকে দেখলো, অনুভব করতে শুরু করল, তখন তাদের মধ্যে এই শুন্যকে ভরে তোলার একটা ইচ্ছা জন্মালো।
মৃত্যু পথযাত্রী দার্শনিক বলে, “কোনও উত্তর নাই, হাহ? নিজেদের বড্ড সেকেলে মনে হচ্ছে, তাই না?”
মহামতি মৃত্যু বলে, "তুমি একটা ধাঁধায় ফেলে দিলে!”
মৃত্যু খানিক্ষণ ভেবে দেখে, একসময় মানুষ যদিও প্রার্থনা করত। কিন্তু তারা কখনো ভেবে দেখেনি, প্রার্থনা কাজ করে কিনা! মৃত্যু বলে, "আমরা একটু অন্যভাবে আলোচনা করি, আচ্ছা তুমি কি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো না?
"মানে?”
"যে মেয়েটি তোমাকে পরম মমতায় দেখেশুনে রেখেছে সারাজীবন, তাকে কি তুমি ভালোবাসো না?”
"হ্যাঁ, অবশ্যই। অবশ্যই ভালোবাসি।"
"আচ্ছা, তাহলে ধর তোমার জীবনে কি এমন কোনও পরিস্থিতি এসেছে, যখন তোমার অতীতটা বদলে গেছে। তুমি একটা ছুড়ি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছো? হতে পারে না?”
"না। অবশ্যই না। কোনওদিন না।”
"কিন্তু তোমার থিওরি বলছে, এটা নিশ্চিতভাবেই সম্ভব, এটা খুবই সহজেই সম্ভব। পৃথিবীর ভৌত নিয়ম দিয়ে এটা অবশ্যই সম্ভবপর। শুধু একবারই সম্ভব না- বহুবার সম্ভব। প্রতি মুহুর্তই এই মাল্টি ইউনিভার্সের নিয়মে লক্ষ লক্ষ মুহুর্ত। আর এই লক্ষ লক্ষ মুহুর্তে 'সম্ভবত' ঘটনাগুলো 'নিশ্চিতভাবেই' ঘটে গিয়েছে। সব সময়, সেটা এখন হোক বা তখন, সবই একটা মুহুর্ত!”
"কিন্তু আমরা তো এদের মধ্যে কোনও একটাকে বেছে নিতে পারি...”
"এখানে তোমার পছন্দ করার, বেছে নেয়ার সুযোগ আছে? যা ঘটতে পারে, তা অবশ্যই ঘটবে। তোমার থিওরিই বলছে যে, প্রত্যেক ইউনিভার্সে, প্রতিটি ভিন্ন অস্তিত্বে, অনেক অনেক সত্ত্বা আছে, আর এই সত্ত্বাগুলোর মধ্যে এমন কিছু থাকে যেটা তোমার অসম্মতিকে ধারণ করে। আবার একই সাথে এটাও সত্য যে সেটা ঠিক উল্টোটা, তুমি যেটাতে নারাজ, যা তুমি অস্বীকার কর তাও ধারণ করে। কিন্তু তুমি তো বলছ যে তুমি কোনও সময় কাউকে খুন করনি। তুমি আসার আগে এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণাই নিজ ধর্ম অনুসারে কাঁপতো। আর হ্যাঁ, তোমার মৃত্যু অনেক শক্তিশালী। ঠিক পৃথিবীর আকর্ষন বল যতটা শক্তিশালী!” মৃত্যু মনে মনে ভাবলো, আসলে আপাতদৃষ্টিতে মহাশুন্য শুন্য, এর মাঝে কিছু নেই। কিন্তু এই রহস্যময় স্পেসের মধ্যে এমন হাজার হাজার উত্তর আছে।
"এটা কি একধরণে তামাশা হয়ে গেল না?”
"এটা তামাশা নয়। তোমার যুক্তি বা ধারণা আমার ভালো লেগেছে এবং একইসাথে আমাকে খানিকটা কৌতুহলী করে তোলে। তুমি যে থিওরির কথা বলছে সেটা যেন আমাকে দুটি কল্পিত জায়গায় দাঁড় করে। এক জায়গায় এমন একটা পৃথিবী যেখানে সবাই ঠিকঠাক ভাবে, ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত হল নৈতিক সিদ্ধান্ত, যা অন্য যত সৃষ্টি রয়েছে, সবার সুখ-শান্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। এই নৈতিক সিদ্ধান্ত থাকার মানে পৃথিবীতে এমন কোনও জায়গা অবশ্যই আছে যেখানে সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ। আর এই স্থানে কেউ কোনও দিন সিগারেট খায় না...”
"আহা! ননসেন্সের মত কথা বলবে না। আমি স্বর্গ বা নরকের কিছুই বিশ্বাস করি না। গাধা কোথাকার!”
কথা হচ্ছিল একটা রূমে। রূমটা ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে অন্ধকার থেকে অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো। সেই কাস্তেটা, যেটা দিয়ে দার্শনিককে হত্যা করা হবে, সেটা থেকে নীল আলো বিচ্ছুরিত হতে লাগলো। সময় যাচ্ছে, আর সেই মরণাস্ত্রটা ক্রমেই আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগলো।
মৃত্যু বলে, "সত্যিই আশ্চর্য লাগছে। আচ্ছা তোমাকে আরেকটা পরামর্শ দিই, তুমি একটা ভাগ্যবান প্রাণি। কেননা ভাষার সাহায্যে তুমি পৃথিবী, সৃষ্টি- সকল রহস্যময় জিনিষ জানতে চাচ্ছো। তুমি সত্যিই ভাগ্যবান। এই ভাষা, এই ভাষাই ব্যবহার করেই তোমরা আদিমকালে কোথায় খাবার আছে, রসালো ফল আছে, সেই খবর একে অপরকে দিতে!”
বাতাসের অভাবে দার্শনিকের কথা বলতে খুব কষ্ট হতে লাগলো, তারপরও অনেক কষ্ট করে সে বলে, "এই মূর্খ... গাধার মত কথা বলবে না..."
মৃত্যু বলে, “তোমার মন্তব্য শুনে আমি নিজেকে খুব একটা অপমানিত মনে করছি না। এই পরিস্থিতিতেও তুমি অনেক ভালো জিনিষ নিয়ে আলোচনা করার একটা সুযোগ পেয়েছো!”
"আমরা অবশ্যই, নিশ্চিতভাবেই পুরোনো মিথ আর কুসংস্কার থেকে নিজেদের বের করে আনতে পেরেছি!”
মৃত্যু বলে, "ভালো বলেছ, আমি এটাই তোমার মুখ থেকে বের করতে চেয়েছি। আর এটাই আসল সত্যি!”
সে দার্শনিকের একটু সামনে এগিয়ে আসে...
"তুমি কি এই বিষয়টা জানো যে, কয়েকটা কণার গতিবিধি সম্বন্ধে ভালোভাবে না দেখে কোনও সময়ই বলা যায় না? তুমি এটাও জানো যে একটা বেড়ালকে যখন বাক্সে বন্দী করে রাখা হয়, তখন তার গতিবিধি এবং আচার-আচরণও খানিকসময় পর পর দেখা হয়।"
দার্শনিক বলে, "তা জানি অবশ্য...”
মৃত্যু দার্শনিকের জীবনের শেষ বিন্দুটাকে মিলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলে, “ভালো থেকো!”
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×