আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাসে আসি । একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়ে যায় । ছেলেটা আমার সাথে দুইদিন খালি ইংরেজিতে কথা বলেছে । আমি বাংলা শুনি নাই । ভেবেছিলাম, এখানে আমার কোন বন্ধু জুটবে না তা সিউর । সবাইকে আমি দেখতাম , সবাই খুব স্মার্টলি কথা বলে যাচ্ছে। অনেকেই নতুন বান্ধবীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে । আমি কোন বান্ধবীর সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, পাশাপাশি বসার সাহসও করতে পারি নাই । বাসায় ফিরে রিয়াজকে বললাম,না বন্ধু পড়া মনে হয় এখানে আর হবে না । সেই ইংলিস বলা ছেলেটাই আজ আমার প্রিয় বন্ধু । অদ্ভুত ।
' আমরা চার দেহ,একি প্রাণ'
পেন্সিলে - আমি
-
- আরেকটা মেয়েকে দেখতাম কারো সাথে কথা বলত না । আলাদা থাকত । তাঁর সাথে কথা বলার সাহসও কেউ করতো না । দুই একজন গ্রুপিং করেছিল তারাই বলতে পারবে কেমন ছিল তাদের প্রথম পরিচয় । আমি কোনদিন মেয়েটির সাথে কথা বলার সাহসই করি নাই। অসহায় তীর্থের কাকের মত যেতাম আর আসতাম। কারো সাথে কথা বলার মতই কেউ ছিল না । মেয়েটির সাথে পরে আমার ইংলিশ বন্ধুর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তাঁরা একি গ্রুপে তখন গ্রুপিং করছে,প্রাকটিস করছে । আর আমি ফাঁকা । খালি ভাবি, কোথায় আসলাম । সেই আলাদা চুপ চাপ থাকা মেয়েটাই আজ আমার বন্ধু 'পাউঠার' । মানে তাঁর ডাকনাম করে দিলাম 'পাউঠার' ।
- কদিন পর আরেক নতুন জন দেখলাম । আমার এই চুপচাপ থাকা বান্ধবীর নতুন বান্ধবী । আমাদের ব্যাচমিট। সে দেখতে প্রথমে জাপানিজ মনে হলো । ভাবলাম উপজাতি হবে । কথা বলার বিন্দুমাত্র সাহস হয় নাই । বলিও নাই । ভাবলাম, একবার সাহস করে জিজ্ঞেস করি । এই তুমি কি উপজাতি ? সাহস আর হয় নাই । দিন গেল কয়দিন। সবাই বন্ধু পাতায় নিছে। আমি আর ইংলিশ ম্যান একসাথে থাকি । চুপচাপ বান্ধবীর সাথে দুই একটা কথা হয় মাঝে মাঝে । বাকিদের বন্ধু সার্কেল হয়েই গেছে । একদিন উপজাতি মেয়েটাকে বলেই ফেললাম জাপানীজ নামে। সেও আজ আমার বন্ধু ।
- এখন বাকি আমি। আমি ভাবিনি এই চারজন একি সাথে চার দেহের একটা বন্ধুত্বের সংসার গড়ে ফেলবে । আমি আজও অবাক । এটা হয়ত হয়ে যায় চলার পথে। আমাদের প্রথম হওয়ার প্রতিযোগীতায় কারা পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়ে যাবে সেটা মনে হয় সৃষ্টিকর্তা লিখেই রাখেন । আমরা আপসেট হই যখন আশেপাশে কাউকেই না পাই। খুঁজে দেখি না, অনেক বন্ধুই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে আমাদের ভেতরে,সুখে,দুখে। এদের নিয়েই জীবন সংসার ।যেমনটা আমাদের চারজন।