somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপার হিট বাংলা সিনেমা কিংবা আমাদের চলচ্চিত্র-শিল্পরক্ষার সহজ দাওয়াই

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘পাঠকের মৃত্যু’ নামে একটা লেখা ছোট গল্প পড়েছিলাম। সেভাবে বলতে হয় ১০ বছর আগে আপনার যে বইটা ভালো লাগতো, এখন তা রাবিশ মনে হতে পারে। তেমনি নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ভিসিআর-ভিসিপি ভাড়া এনে আমরা দল বেঁধে রাত ভর বাংলা সিনেমা দেখতাম। তখন আমাদের কাছে প্রধান আকর্ষণ নায়ক রুবেল, ভিলেন ড্যানি সিডাকের দ্বৈরথওয়ালা বাংলা ছবি। এখন সেসব ছবি দেখলে হাসি পায়; ফাইট, ডান্স, পোশাক, মেকআপ সবকিছু উদ্ভট লাগে। রনি, বুকে হাত দিয়ে উত্তর করুন, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমাটা এখন দেখলে আগের মতো ভালো লাগবে? একসময় সালমান শাহর সিনেমার পাগল ছিলাম, তার অভিনয় তো বটেই নাচা-গানাও কম টানতো না। কিন্তু এখন টিভি রিমোটের বোতাম চাপতে চাপতে কোনো চ্যানেলে ছায়াছন্দ টাইপ অনুষ্ঠানে সালমান শাহর কোনো সিনেমার গান হঠাৎ চোখে পড়লে নাচ দেখে মনে হয় বাদর-নাচ, কোরিওগ্রাফিক কি শ্রী (এর দায় অবশ্য অশিক্ষিত নৃত্যু পরিচালকের) তার মানে সাহিত্য পাঠক হিসেবে আপনার, আমার উৎকর্ষতার কারনে আমরা এখন সাহিত্য-নির্ভর সিনেমা খুঁজি; কিন্তু তৈরিপোশাককর্মী, মুদি-দোকানকর্মী, সেলুনকর্মীরা এখনও ঈদের ছবির খোঁজ নেন। তারা যে বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা দেখেন, তার মানও যে পড়ে গেছে, তা-ও ঠিক; এছাড়া সামাজিক-অ্যাকশন ধারার ছবির তারকা সাবানার সরে যাওয়া, জসিমের মৃত্যু প্রভৃতি কারণেও এক ধারার দর্শক কমেছে। আবার সালমান শাহ, মান্নার মৃত্যুর (যদিও মান্নার ছবিতে একঘেয়েমি চলে এসেছিল, শাকিব তখন আস্তে আস্তে তার জায়গা নিচ্ছিলেন) কারণেও মূলধারার সিনেমার দর্শক কমে গেছে।
একটা বিষয় বলে রাখি মূলধারা বলতে আমরা যা জানি, সেই মারদাঙ্গা, অতি-প্রেম মার্কা ছবি কিন্তু আবার বলিউডে রাজত্ব করছে সালমান খান, অজয় দেবগনদের কল্যাণে (তাদের ছবি এখন ১০০ কোটি রূপির উপরে ব্যবসা করছে, আজই পত্রিকার খবর শহীদ কাপুরও নাকি এ ধারার ছবির করছেন)। আবার ভিসিডি-ডিভিডির কল্যাণে পাড়ার চায়ের দোকান, বাজারের হোটেলও মিনি সিনেমা হলে পরিণত হওয়ায় আমজনতার একটা অংশ হলবিমুখ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ডিশ এন্টেনার জোয়ারে ঘরে বসে দিনে দেশ-বিদেশের গন্ডা গন্ডা ছবি দেখার সুযোগ থাকায় শহুরে শিক্ষিত-সংস্কৃতিমনা পারিবারিক দর্শকরা (মধ্যবিত্ত, নিম্মমধ্যবিত্ত) হলবিমুখ। এর একটা কারণ অবশ্য আমাদের সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ, প্রযুক্তির যাচ্ছেতাই অবস্থা। এ যুগে এসেও ঝা-চকচকে শপিং মলের আদল পায়নি আমাদের সিনেমা হলগুলো, সেই ছারপোকাওয়ালা আসন-মার্কা রয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি জেলা শহরে অন্তত একটা করে স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো অত্যাধুনিক প্রেক্ষাগৃহ দরকার। রাজধানী ঢাকার উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ির দিকেও এমন প্রেক্ষাগৃহ দরকার। অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো অত্যাধুনিক একাধিক প্রেক্ষাগৃহ দরকার। এগুলোয় দুই বাংলার সিনেমা, হলিউড, বলিউডসহ সারা পৃথিবীর সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসা (প্রদর্শক) এদেশে টিকবে বলে আমার কাছে মনে হয় না, হল ভেঙ্গে আধুনিক বিপনিবিতান নির্মাণের জোয়ার থামাতে এর বিকল্প নেই।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে সাহিত্যভিত্তিক সিনেমা-তো দরকারই (এজন্য নূরুল আলম আতিক, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, গিয়াসুদ্দিন সেলিম, অনিমেষ আইচ, অমিতাভ রেজা, রেদওয়ান রনি, মোস্তফা কামাল রাজরা-তো একটা ধারা তৈরি করে চলেছেন; আমার মতে তাদের মূলধারায় নেমে তাদের এফডিসি দখল করা উচিত, ঝেটিয়ে বিদায় করা উচিত যাত্রাপালা মানসিকতার নির্মাতাদের [এর মানে যাত্রাপালাকে খাটো করছি না, যাত্রাপ্যান্ডেলে যাত্রাপালা মানায়, সিনেমার নামে যাত্রাপালা টাইপ কিছু বিরক্তিকর, বিশেষ করে মূলধারার বাংলা সিনেমার পোশাক, মেকআপ, সেট ডিজাইন, অ্যাকশন])।
আমাদের সিনেমাকে শিল্প হিসেবে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই হলিউডি-বলিউডি টাইপ রোমান্টিক, অ্যাকশন ছবিও দরকার (আমাদের সিনেমার কিন্তু শুরু থেকেই কিন্তু হলিউড-বলিউডের অনুসরণ-অনুকরণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে; ষাট-সত্তর দশকের বাংলা সিনেমার রাজ্জাক-কবরী, আনোয়ার হোসেনদের পোশাক-আশাকের সাথে উত্তম-সুচিত্রা, রাজেশ খান্না, হেমা মালিনীদের মিল তো আর কাকতালীয় নয়; বাংলা সিনেমার সোনালি দিনের অনেক জনপ্রিয় গানের সাথে আজকাল ডিশের কল্যাণে ভারতীয় চ্যানেলের পুরনো সিনেমার গানের কথা-সুরের মিল পাই; আমার অজ্ঞতার কারণেই কিনা কে জানে এ বিষয়টা নতুন জানছি, তবু সে সময় প্রযুক্তি কাছাকাছি ছিল, নির্মাতাদের মেধার কারণে নকল হলেও এখনও যাট-সত্তর-আশির দশকের সাদাকালো যুগের ঢাকাই সিনেমা এখনও ভালো লাগে)। এখন হলিউড-বলিউডের অন্ধ, আধা-অন্ধ অনুকরণ থাকলেও গল্প, ক্যামেরার কাজ, পোশাক, সেট ডিজাইন হয় মান্ধাতা আমলের নয়তো, যাত্রাপালা মার্কা। তার মানে শিল্প-ভাবনায়, প্রযুক্তির আধুনিকতায়, গল্পের বুনটে আমরা হয় দুর্বল নয়, পিছিয়ে আছি। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি যেমন জরুরি, তেমনি মেধাবী নির্মাতাদের মূলধারার সিনেমার প্রতি নাক সিটকানোর ভাব ত্যাগ করে কাজে নামা উচিত (ভালো খবর হচ্ছে এ প্রজন্মের কেউ কেউ আসছেন)। সিনেমার কেউ নই আমি, স্রেফ একজন দর্শক; সে হিসেবে বকবক বেশি হয়ে গেল; ক্ষমা করে দিও আমায়!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×