‘দিল হি তো হ্যায়’ ছবির ‘লাগা চুনরি মে দাগ’, ‘ওয়াক্ত’ ছবির ‘এই মেরে জোহরা জাবিন’, ‘শোলে’ ছবির ‘ইয়ে দোস্তি’ কিংবা ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবির ‘বাবু সমঝো ইশারে’Ñ বলিউডের এই অসম্ভব জনপ্রিয় গানগুলোর গায়ক প্রবোধ চন্দ্র দে, যাকে আমরা মান্না দে হিসেবেই চিনি। কিংবদন্তীসম এই গায়ক গতকাল ভোর ৩টা ৫০ মিনিটে পাড়ি জমিয়েছেন জীবনের অপরপ্রান্তে।
১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন মান্না দে। স্কুলে পড়ার সময়েই ছোট চাচা কৃষ্ণ চন্দ্র দের কাছে গানের তালিম নেওয়া শুরু। ছোট চাচা শুধু গায়কই ছিলেন না, ছিলেন সুরকার, সংগীত পরিচালকও। ফলে অল্প দিনেই চাচার যোগ্য ভাতিজা হয়ে ওঠেন মান্না দে এবং আন্ত কলেজ প্রতিযোগিতায় গানে প্রথমস্থান অধিকার করেন। এই চাচার হাত ধরেই ১৯৪২ সালে বলিউডে প্রবেশ, তাও একেবারে চাচার সহকারী হিসেবে।
১৯৪৩ সালে ‘তামান্না’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করার আগেই বেশ কয়েকটি ছবিতে সংগীত পরিচালনার কাজটি সেড়ে ফেলেন। সে সময়ে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের চর্চা শুরু করেন ওস্তাদ আমান আলি খান ও ওস্তাদ আব্দুল রহমান খানের কাছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম গায়কের আসনে অধিষ্ঠিত মান্না দে গান করেছেন হিন্দি, বাংলা, ওরিয়া, আসামীয়া, পাঞ্জাবি, ভোজপুরি, মারাঠি, গুজরাটিসহ দণি ভারতীয় কান্নাড়া ও মালায়লাম ভাষায়।
১৯৪০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মোহাম্মদ রফি, মুকেশ, কিশোর কুমার, তালাত মাহমুদ, লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোসলে থেকে শুরু করে কবিতা কৃষ্ণামুর্তি, অলকা ইয়াগনিক, সনু নিগমের সঙ্গে গান করেছেন। শুধু বলিউডেই কাজ করেছেন ১০২ জন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে। ৫০ দশক থেকে শুরু করে ৭০ দশক পর্যন্ত বলিউডে সংগীত শাসন করেছেন তিনি। এরপর বলিউড থেকে নিজেকে সড়িয়ে আনলেও কলকাতার ছবিতে গান গাওয়া চলতেই থাকে।
সব মিলিয়ে ১২৬২টি গান করেছেন (রেকর্ডেড) বাংলায়। যার মধ্যে ৬১১টি ছবির গান, আরও ১০৩টি গান রয়েছে যে ছবিগুলো মুক্তি পায়নি, আধুনিক গান ৩৫৬টি, রবীন্দ্র সংগীত ৪৬টি, শ্যামা সংগীত ৮৪টি, দ্বিজেন্দ্র গীত ৩টি, আকাশবানির জন্য ২৩টি, সিরিয়ালের জন্য ৩টি এবং অন্যান্য ৩৩টি।
১৯৭১ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী আর ২০০৫ সালে পদ্মভূষণ। বলিউডের অন্যতম সম্মানজনক পুরষ্কার দাদাসাহেব ফালকে পেয়েছেন ২০০৭ সালে আর ২০১১ সালে ফিল্ম ফেয়ার থেকে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার। ১৯৯২ সালে মুম্বাইয়ে করেছেন সর্বশেষ লাইভ কনসার্ট। এরপর থেকেই শরীর খারাপ হওয়া শুরু করে। গত ৮ জুন বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করলে তাঁবে ব্যাঙ্গালুরু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীায় চেস্ট ইনফেকশনসহ আরো কিছু শারিরীক সমস্যা ধরা পরলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। এরমধ্যেই মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পরলে চিকিৎসকরা জানান, শারিরীক অবস্থা তেমন ভাল না হলেও তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠঠেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তাকে আইসিইউ থেকে বের করে আনা হয়। তবে গভীর পর্যবেণেই ছিলেন তিনি। এরমধ্যে বাড়িও ফিরে যান। গত তিন চারদিন আগে আবারো অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হওয় এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তী মান্না দে।