somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশব

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার (আমাদের,পুরো পরিবারের ছোটদের) শৈশব ছিল অনেকটা ফিলিস্তিনের শিশুদের মত|যদিও উঠানের উত্তর পাশে কোন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না তবুও সীমানার ওদিকে এক পা ও যাওয়া হতনা|হ্যাঁ!ওদিক ছিল জমিদারদের এরিয়া|যদিও সরাসরি কোন বাক-বিতন্ডা বা মাঝেমধ্যে রক্তপাত হত না তবুও যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ওদের অন্তরে সবসময় ছিল|যা চোখে-মুখে প্রস্ফুটিত হত|এই সীমানা নির্ধারণ হয়ে যায় সেই অবুঝ বয়স থেকেই|এ যেমন,একবার আমার বড় আপু আমাদের এখান থেকে চলে যাচ্ছিল নিজ বাড়িতে|আমি তখন আপু’র ছোট বাবুর জন্য কান্না করছিলাম|তাই আমাকে শান্ত করার জন্য ঐ জমিদারদের ওখানে নিয়ে গেল|উল্লেখ্য ওখানে আপু’র বাবুর মত আরেকটা বাবু ছিল|কিন্তু আমি ঐ বাবু’র দিকে ফিরেও তাকায়নি|সে যায়ই হোক|

তখন নূতন নূতন কারেন্ট আসছিল|কত কথা,কত ভয় তখন প্রচলিত|আমি মোম নিয়ে খেলছিলাম|হঠাৎ মোম এসে পড়ল হাতে|চামড়া তখন সয়ছিল না ঐ মোমের তাপ|এদিকে কারেন্ট নিয়ে ভয় কাজ করত সবসময়|তাই আমি মনে করছিলাম কারেন্টে ধরেছে|আমার তখন হতবুদ্ধি অবস্থা|হঠাৎ মাথায় কাজ করল কারেন্ট নিশ্চয়ই কুকুরকে ভয় পাবে|যেই ভাবা সেই কাজ|কুকুরের ডাক আরম্ভ করে দিলাম|ঘেউ,ঘেউ,ঘেউ…!

সে ছোট বয়সেই আমার গঠনমূলক কাজের হাতেখড়ি|তা শুরু হয় বাড়ির বিশাল এক জনশক্তি থেকে কাসারি দখলের মাধ্যমে|যেখানে আগে গরু রাখা হত সে জায়গাকে আমরা কয়েকজনে মিলে মক্তব ও নামাজের জায়গার উপযুক্ত করে গড়ে তুললাম|এবং সে মক্তব থেকেই আমার কুরআন ও নামাজ শিক্ষা লাভ|

ছোটবেলা থেকেই স্কুল/মাদ্রাসা নিয়ে ভয় ছিল|কারণ শিক্ষকের টেবিলে থাকত বেত|তাই প্রথম এক বছর যাওয়ার সময় একটু কান্নাকাটি করতাম|পরে অবশ্য আর করা হয় নি|স্টুডেন্ট ভালও ছিলাম না আবার খারাপ ও না|ক্লাস ফোরে রোল ছিল ৩|মানে ক্লাস ফোর থেকে মোটামুটি স্টুডেন্টের পর্যায়ে পৌঁছলাম|

ক্লাস ফাইভে আরেকটু এগুলাম|এ এ! এখানে একটু ঝামেলা হয়েছে|ফাইভ থেকে এইট পর্যন্ত আর এগুতে পারলাম না|দূর!কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল|সাথে আমার একশ টাকায় ভাগ বসাল|ও!সাথে একটু একটু মানতে বাধ্যও হলাম,ল্যাডিস ফার্স্ট!

টাকার ভাগ বসানোর কথা|সে হচ্ছে এক পুরস্কার|বার্ষিক পরীক্ষার পর আমার ভাইয়া কর্তৃক আমাকে দেওয়া হত|১ হলে ১শ|২ হলে শ’র অর্ধেক|আর তিন হলে শ’র পাঁচ ভাগের এক ভাগ|

দুই হুজুরকে ভয় পেতাম খুব|একজন অবশ্য পরে বন্ধুর মত হয়ে যায়|আর তা সম্ভব হয় উনার কাছে ক্লাস ফাইভ ও এইটে বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং করার কারণে|না!টাকার বিনিময়ে না|উনি জোর করেই কোচিং করাতেন|

ক্লাস ফাইভের বৃত্তি কোচিং’র প্রথম দিন|আমার কোন কারণে মিস হয়|পরে বন্ধুদের মুখে শোনা-

কিছু আগ্রহী ছাত্রকে সিলেক্ট করে উনি কোচিং শুরু করলেন|প্রথম দিনে কিছু পড়িয়ে আবার তা লিখতে দিলেন|তো আমার এক বন্ধু (গ্রামের তো ক্লাসের সবাই-ই বন্ধু) কিছু মিস করলেন|হুজুরের বলে উঠলেন-

এই হোয়ালেকা দি নে তুই বিত্তি হরীক্কা দিবি?লাল বাত্তি ঝ্বইলব!

সে বন্ধুটির কোচিং যাত্রা সে দিন শেষ|আর আসেনি!আর সে হুজুরটিই কিনা আমরা যারা কোচিং চালিয়ে নিচ্ছিলাম তাদের বন্ধু হয়ে গেল?হ্যাঁ!ঠিক তাই-ই|উনি আমাদের বন্ধু হয়ে গেলেন|এ দু’টো ঘটনা থেকে তাই-ই বুঝা যায়-

ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং চলছে|হুজুর কিছু একটা পড়া শিখতে দিয়ে বাইরে গেলেন|আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলাম|হুজুর পেছন থেকে এসে জিজ্ঞেস করলেন(হেঁসে হেঁসে),

ওদিকে কী?কলা ?ওদিকে কলা নে ?

আরেকবার|আমার কয়দিন কোচিং এ যাওয়া হয়নি|তো একদিন হুজুর আমাদের বাড়ির আরেক ছেলেকে বলল-

ওতে কন্ডেরে ?ওতেরে তোয়ায় (খুঁজে) ধরি লই আনবি !



এদিকে ক্যাপ্টেন (ছেলেদের) হিসেবে কিছু দ্বায়িত্ব ছিল|সে সুযোগে মাদ্রাসার ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রক্সি(হুজুরদেরকে দিয়ে) প্রথা চালু করলাম|কোন হুজুর অনুপস্থিত|সে হুজুরের ঘণ্টায় আরেক হুজুরকে এনে ক্লাসটা করিয়ে নিতাম|সিক্স থেকে এইট পর্যন্ত আট ঘণ্টার ক্লাসকে সাত ঘণ্টার বানিয়ে ফেললাম|!

ক্লাস এইটের শেষ দিকের কথা|ঐ দুই হুজুরের আরেকজন হঠাৎ ক্লাসে ঢুকে পড়ল|যাকে খুব ভয় পেতাম|ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে|ক্লাস ফোরে থাকতে ওই হুজুরের কাছে দুষ্টুমির জন্য গণদোলাই এর মত উত্তম-মধ্যম খাইছিলাম|সে থেকে আজও ঐ ভয় কাটেনি|ও !কথায় আসি|এসেই পড়ার কথা!তো কি পড়া দিল তা আমার পক্ষ থেকে জানালাম হুজুরকে|হুজুর অন্যদের জিজ্ঞেস করল|আমি ছোট্ট একটা পয়েন্ট বাড়িয়ে বললাম|ছোট্ট একটা বইয়ের তিন লাইনের একটা পয়েন্ট|আহা!আমি ঠিকছিলাম*|কিন্তু পশ্চিম(ছেলে) ও পূর্ব(মেয়ে)দুই দিকই আমার বিপরীত অবস্থান নিল|কি আর করা|হুজুর রুকুর মত করতে বললেন|তারপর আমার হাত দিয়ে ঘাড়ে ঠাস ,ঠাস…ধপাস…!|তারপর আবার পড়া নিলেন|ওই আমি যা বাড়িয়ে বললাম সেখান থেকে|কোনমতে এই যাত্রায় রক্ষা পেলাম|!

বিঃদ্রঃ * আমি ঠিকছিলাম|এইতো কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধু বেড়াতে আসল|তো সেদিন নির্ঘুম রাত্রিযাপনের সময় বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম কে ঠিক ছিল ?|সেদিন সে হাঁসতে হাঁসতে বলল যে, আমি-ই ঠিকছিলাম|

এই শেষ ঘটনার রহস্য কোন দিন উদ্ভাবন করা যাবে কি না আল্লায়ই জানে ?তবে এ ঘটনা ওই দিনের সবাইকে মাঝে-মাঝে ফিরিয়ে আনে মনে|হয়ত বা এর কারণেই?!

তারপর এক আকশ্মিক দুর্ঘটনায় শৈশবের ইতি ঘটে|মুখোমুখি হই বাস্তবতার সাথে|বিদায় হয় কান্না-হাঁসি মিশ্রিত আনন্দপ্রধান শৈশবের……|!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×