ধর্ষণ, পরকিয়া এখন আর সামলে চলার কোন বিষয় নেই। গ্যাং রেপ থেকে শুরু করে উপমহাদেশে ঘরে ঘরে চলছে পরকিয়া বা প্রতারণার যৌন সর্ম্পক। তেমনি নাইজেরিয়া বা আফ্রিকা মহাদেশে নারী কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে পুরুষ। এর পিছনে বস্তুত কি এমন কাজ যে দিন দিন অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটে চলছেই?
জানি না বিজ্ঞান বা ধর্ম কি বলে। তবে যৌনতা মানুষের আর পাঁচটা স্বাভাবিক আচরণের মতই। আপনি দেখবেন স্বাভাবিক স্রোতকে আটকে দিলে এমন একটা পর্যায় আসে যে বাঁধ ভাঙ্গার টর্নেডো আসে। তখন তাকে রোখা দায়। তেমনি আমাদের চারপাশে যে হারে পরকিয়া বা ধর্ষণ ঘটছে তাতে সত্যি বলতে ভয় লাগে যে, কে কার সন্তান। তাহলে এ থেকে উত্তরণের উপায় কি? এমন প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। আমার মতে উপমহাদেশে যৌনতাকে অযৌক্তিকভাবে বন্দি করে শুধু শুধু সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনা হচ্ছে। খর্ব করা হচ্ছে স্বাধীন মনোবৃত্তি। যার মারাত্মক প্রভাব পরছে আর্থ-সামাজিক ও সৃষ্টিশীল জগতে। চিকিৎসাশাস্ত্র মতে বীর্যপাত না হলে মানুষ অস্বাভাবিক হয়ে যায় ও জটিল রোগ দেখা দেয়। সুতরাং যৌনাচার মানবদেহের জন্য একটি প্রত্যাহিক বিষয়। কিন্ত কিছু সামাজিক প্রথা এটাকে আটকে দিয়েছে। ফলে সমাজটা মত্ত পাগল হয়ে যাচ্ছে। ধরুন একটা ১৮ বছরের মানুষ কামচাহিদা পূর্ন। কিন্ত অর্থ বা সমাজের জন্য তিনি যৌনকর্ম করতে পারছেন না। ফলে অস্বাভাবিক অপরাধ সংগঠিত করবে তা তো জটিল কোন ধারনা নয়। এতে বাড়ছে ধর্ষন, পরকিয়া বা বেশ্যাবৃত্তি। একটি উন্মোচিত বিষয়কে প্যাকেটজাত করলে যা হয় আরকি !
আমার মতে অন্য দশটি প্রত্যাহিক কাজের রুটিনে যৌনকর্মটা অবমুক্ত করা হোক। এর কারনে সমাজে অনেক অস্থিরতার হয়তো সমাধান আসবে। বেশ্যাবৃত্তি বা ধর্ষণ নয় শ্রেফ যৌনকর্ম। যে চাইবে যৌনকর্ম করতে পারবে। কারন এটিও আর দশটি কাজের মত স্বভাবিক এবং অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। এইযে যে কারও সাথে দেখা হলে করর্মদন করি ঠিক একই ভাবে সেক্সের আদান প্রদান করেও পরস্পরের উপকারে আসতে পারে। কারন স্বাভাবিককে স্বাভাবিক হতে দেয়া উচিত। গন্ডিবদ্ধ হলে তা বিকৃত হবে নিশ্চয়ই।
যদি ধর্মের বর্ননায় যেতে চান তাহলে দেখা যাক ইসলাম কি বলে। যদিও সরাসরিভাবে কখনোই অনুমোতি দেয়নি। তবে কিছু হাদিস পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ক্ষণস্থায়ী যৌনকর্ম করতে অনুমতি দিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ পতিতাপল্লি বা বেশ্যালয়। এখানে ক্ষণস্থায়ী যৌনকর্ম করা হয়ে থাকে। আর ইসলামে তেমনি ক্ষনস্থায়ী যৌন সর্ম্পক স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে মূতা বিয়ের মাধ্যমে। যদিও ইসলামের দুই অনুসারীদের (সুন্নি ও শিয়া) মধ্যে একাংশে মূতা বিয়ে নিষিদ্ধ হলেও অপরাংশে আজও চলমান। আর মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইরানে মুক্ত যৌনকর্মের কারনে হালাল পতিতালয়ের অনুমতি দিয়েছে এবং স্থাপন করেছে। মূতা বিবাহ কী তা আমরা অনেকেই জানি না, এমনকি ইসলামী শরীয়তে এ বিবাহের বিধান কী তাও জানি না। নিম্নে মুতা বিবাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
মূতা বিবাহের সংজ্ঞাঃ মূতা বিবাহ একটি স্বল্প সময়ের বিবাহ। অর্থাৎ কোন নারী ও পুরুষ অল্প কিছু সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ বিবাহ করতে পারে। তবে এই সময় সম্পর্কে কোন সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ সময় বাধা ধরা নাই।
যেমন: ১ ঘণ্টার জন্য ও চাইলে কোন পুরুষ/নারীর সাথে বা কোন নারী/পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
সহজ ভাষায়, এক রাত্রির বিয়ের ইসলামি পরিভাষায় নাম হলো মূতা বিবাহ। এই বিয়ের প্রথা হলো একজন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য বিয়ের চুক্তি করে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে।
সুন্নি ইসলামে মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে শিয়া ইসলামদের মধ্যে এটা এখনো প্রচলিত আছে। একসাথে একজন মুসলিম চার স্ত্রীর বেশি রাখতে পারে না কিন্তু মুতা বিয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। মুতা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান ইচ্ছে করলে যে কোন নারীর সাথে সঙ্গমসুখ লাভ করতে পারবে। মুতা বিবাহে কোন কাজী বা সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না। কয়েকটি আয়াত পাঠের মাধ্যমে এ বিবাহ সম্পন্ন করা হয় এবং এ বিয়ের কোন তালাক নেই।
মুতা বিবাহ সম্পর্কে কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। হাদীসগুলো হলোঃ
১ .সালামা ইবনে আল আকবা ও জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিত: আল্লাহর নবী আমাদের কাছে আসলেন ও সাময়িক বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন। [সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ৩২৪৭ ]
২. ইবনে উরাইজ বর্ণিত: আতি বর্ণিত যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ উমরা পালনের জন্য আসল এবং আমরা কিছু লোক তার কাছে গেলাম ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন- আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করে আনন্দ করতাম ও এটা আবু বকর ও ওমরের আমল পর্যন্ত চালু ছিল। [সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ৩২৪৮]
৩. জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিত: সামান্য কিছু খাদ্য বা অন্য কিছুর বিনিময়ে আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করতাম, এটা আবু বকরের আমলেও আমরা এটা করতাম তবে ওমর এটা নিষেধ করে দেন। [সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ৩২৪৯]
৪. রাবি বিন ছাবরা হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সময় তার পিতা রাসুলুল্লাহর সাথে এক যুদ্ধে শরীক হয়। আমরা সেখানে পনের দিন অবস্থান করি। আল্লাহর রাসূল আমাদের অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দেন। আমি আমারই গোত্রের এক লোকের সাথে মেয়ে খুঁজতে বেডড়য়ে পড়ি। আমার সঙ্গীর চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম, পক্ষান্তরে সে ছিলো কদাকার। আমাদের উভয়েরই পরনে ছিল একটি উত্তরীয়। আমার উত্তরীয়টি ছিলো জীর্ণ অন্যদিকে আমার সঙ্গীর ছিলো একবোরে নতুন। শহরের একপ্রান্তে একটি মেয়ে দৃষ্টি গোচর হলো আমাদের। অল্প বয়সী মেয়ে, ঠিক যেন মরাল গ্রীবা চটপটে এক মাদী উট। আমরা বললাম আমাদের মধ্যে একজন তোমার সাথে অস্থায়ী বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই। তা কি সম্ভব? সে বলল তোমরা আমাকে কী দিতে পার। আমরা উভয়েই আমাদের স্ব স্ব উত্তরীয় মেলে ধরলাম। সে আমাদের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। আমার সঙ্গী মেয়েটির উপরও দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো এবং বললো পুরাতনটি গ্রহণ করায় ক্ষতি নাই। সুতরাং আমি তার সাথে অস্থায়ী বিয়ে সম্পন্ন করলাম। [ সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩২৫৩]
উপরোক্ত হাদীসগুলো কিতাবুল নিকাহ (৮নং বই)তে উল্লেখ করা আছে।
যাদের জন্য মুতা বিবাহঃ আগেই বলা হয়েছে যে, সুন্নী ইসলামে মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহানবী (স)-এর মক্কা বিজয়ের কিছু সময় পর এটি নিষিদ্ধ করা হয় এবং খলিফা হযরত ওমর (রা)-এর রাজত্বকালে এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে শিয়া ইসলামে এ বিবাহ আজো প্রচলিত রয়েছে। তবে শিয়া ইসলামে এ বিবাহ প্রচলিত থাকলেও সকল শিয়াদের জন্যই মুতা বিবাহ প্রযোজ্য নয়। তবে বিবাহকৃত মহিলা/পুরুষ অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। এছাড়া যারা বিবাহিত, তারা মুতা বিবাহ করতে পারবে না। আল্লাহ যাদেরকে বিবাহ করার সামর্থ্য দেয়নি, তারাই সম্মান বাঁচানোর জন্য মুতা বিবাহ করতে পারবে। আর যারা বিবাহ করে নি কিন্তু যৌনতৃপ্তির প্রয়োজন, কেবলমাত্র তাদের জন্যই মুতা বিবাহ জায়েজ বা বৈধ।
২০১৩ সালে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান সরকার সে দেশে মূতা বিবাহের আড়ালে বৈধ বেশ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে।
যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু অপব্যখ্যা দেশের সর্ম্পকগত সামাজিক প্রেক্ষাপটকে ভয়ানক অপরাধে ঠেলে দিচ্ছে। যেহেতু ইরানের মত একটি দেশ বৈধ বেশ্যালয় নির্মান করেছে সুতরাং বাংলাদেশে মুক্ত যৌনতা কি অযৌক্তিক?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬