কিছু অন্ধ আওয়ামীলীগার এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া এই দেশের সকল মানুষ সাধারন ছাত্রছাত্রীদের কোটা আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। পুলিশের গুলিতে যে সকল ছাত্র মারা গেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, সকলেই তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এবং মানুষকে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করেছে। আমার একজন আত্মীয় আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন - আমরা বিজয়ের দারপ্রান্তে, সরকার আমাদের সাথে বসতে রাজি, কোটা সংস্কার হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম।
কিন্তু পরবর্তীতে শুরু হলো ভয়াবহ এবং সুনির্দিষ্ট প্যাটার্নের ধ্বংসযজ্ঞ। সরকারী গাড়ি, দপ্তর, রাস্তা ঘাট তো আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করার পর আক্রমণ শুরু হলো পুলিশ ফাঁড়িতে, পুলিশের বিভিন্ন বুথে এবং জেলখানায়। একটি জেলখানায় আক্রমণ করা মানে বুঝেন? সাড়ে ৮০০ কয়েদী এবং ৮৫ টি অস্ত্র প্রায় কয়েক হাজার রাউন্ড তাজা গুলি লুট করা হলো। এই গুলো ছাত্রদের কাজ নয়, আমাদের ছাত্ররা ধ্বংসযজ্ঞ চালায় নি, তারা রাস্তাঘাট অবরোধ করেছে, নিজের জীবন দিয়ে। যারা এই কাজগুলো করছে তারা সংঘবদ্ধ এবং রাজনৈতিক দুস্কৃতিকারী। তারা জানে কিভাবে কি করতে হয়। সাধারন ক্ষুব্ধ জনগন এইভাবে হামলা চালায় না।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে মিথ্যে প্রপাগান্ডা। বলা হয়েছে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনারা ঢুকে এই সব ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে সাহায্য করতে এসেছে। দেশে একটা লম্বা সময় সাংবাদিক পেশার সাথে জড়িত ছিলাম। ফলে বিভিন্ন জ্বালাও পোড়াও ও অবরোধ কর্মসূচী কাভার করেছি। ক্ষুব্ধ জনতা কি কি করতে পারে এবং প্রপাগান্ডার ছক সম্পর্কেও ধারনা রয়েছে। তাই বাজি ধরে বলা যায় - মেট্রো রেলে হামলা, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়েতে হামলা, যাত্রাবাড়ি টোল প্লাজায় হামলা, পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা এবং নরসিংদির কারাগারে হামলা ছাত্র জনতার কাজ নয়।, এই গুলো রাজনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ এবং এই ধরনের রাজনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে কারা সিদ্ধ সেটা আমরা জানি।
গত কয়েক বছরে এই দেশের যে কোন যৌক্তিক আন্দোলন, দাবি ও মানুষকে জামাত শিবিরের অযুহাত দেখিয়ে দমন করা হয়েছে। জামাত শিবিরের ইতিহাস আমরা জানি, তাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে এই দেশের তরুন প্রজন্ম এখনও কিছু জানে না ( আমি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বলছি না, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা বলছি)। তাই ধর্মীয় মুখোসের আড়ালে হয়ত অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন। সরকার প্রতিপক্ষ হিসাবে গত কয়েক বছর শুধু বিএনপিকেই চিহ্নিত করেছে। গত কয়েক বছরের টানা নির্যাতনে, দমন,পীড়নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে দুর্বল করে সরকার হয়ত ভেবেছে তারা নিজেরা শক্তিশালী হয়েছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকার এতে শক্তিশালী হয় নি বরং সমর্থনহীন একটি দানবে পরিনত হয়েছে।
ফলে আজকে যখন সরকার চিৎকার আর আকুতি করে বলছে, এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ জামাত শিবিরের কাজ, তখন মানুষ আর বিশ্বাস করছে না। আজকে মানুষের কাছে সরকার একটি মিথ্যেবাদী রাখাল। আমি বিশ্বাস করি, ভোটের অধিকার হারানো, দুর্নীতিবাজদের সাহায্য, বিরোধীমতের উপর রাজনৈতিক নিপীড়ন ইত্যাদি কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের উপর এই দেশের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুব্ধ।
কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য পাবলিক প্রোপাটির উপর এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য না। এই সরকারের কাছে কিছু চাওয়াটাও স্ববিরোধীতা হয়ে যায় তাও আমার দাবিঃ
১। সকল নিহিত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপুরন দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেটা সামান্য দুই চার পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে নয় বরং একটা মানুষের স্বাভাবিক জীবনকাল বিবেচনা করে, সরকারি বেতন কাঠামোর প্রথম স্তরের সাথে ব্যালেন্স করে তা প্রদান করতে হবে।
২। এই আন্দোলনে নিহত যাদের বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মধ্যে পড়ে না এবং যারা সংশ্লিষ্ট স্কুল বা কলেজের নিয়মিত ছাত্র নয় - তাদেরকেও ক্ষতিপুরনের আওতায় আনতে হবে এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাদের পরিচয় উল্লেখ্য করতে হবে।
৩। যে সকল আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অন্যায়ভাবে, অতি উৎসাহীভাবে ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশজুড়ে ধ্বংসজজ্ঞের কারনে এই বিচারের দাবিটি শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যেতে পারে।
৪। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে, তাদের কমিটি ভেঙ্গে দিতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
৫। যাদের মাধ্যমে এই ভয়াবহ নৈরাজ্যকর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে তাদেরকে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
আমি জানি না, এই দেশের ভবিষ্যত এ কি আছে, আমরা কবে গণতান্ত্রিক পথে হাঁটতে পারব। এই দুঃসময়ে আমাদের সকলের উচিত একতাবদ্ধ থাকা। আমার দেশটা ভালো থাকুক এই প্রার্থনা করি।