যদি প্রশ্ন করি যে, বংগবন্ধু শেখ মজিব ও তারই কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে কে বেশী বুদ্ধিমান,ঞ্জানী ও বিচক্ষন ?
নিশ্চয়ই একশত জনের মধ্যে একশত জনেরই উত্তর হবে- অবশ্যই বংগবন্ধু । কারন-বংগবন্ধুর সাথে তো কারো তুলনা করাই চলে না । আমিও এই ব্যাপারে সম্পূর্ন একমত ।
এখন তাহলে আসি মূল আলোচনায়, স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধস্ত এই বাংলাদেশে, যখন বংগবন্ধু দেশের দায়িত্বভার গ্রহন করেছিলেন, তখন তাকে শুরু করতে হয়েছিল একদম প্রথম থেকে, একেবারে শূন্যহাতে । কিন্ত তখন সমস্যার কোন অন্ত ছিল না । বংগবন্ধুর মতো অভিজ্ঞ, বিচক্ষন রাজনৈতিক নেতাও তখন সেই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেয়ে গিয়েছিলেন । পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে, তিনি শেষ পর্যন্ত একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে বাধ্য হয়েছিলেন । কিন্ত বংগবন্ধুর নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত, হিতে বিপরীত হয়েছিল । দেশের অধিকাংশ মানুষই, তার এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি । মানুষ প্রকাশ্যে তার জোরালো বিরোধীতা না করলেও মনে মনে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাংখাই তখন এক হয়ে গিয়েছিল । যার ফলশ্রুতিতে ১৫ই আগষ্টের বংগবন্ধুর সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পরও মানুষের মধ্যে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি ।
স্বাধীনতার ৪৩বছর পরের, বর্তমান এই বাংলাদেশের অবস্থার এখন আমূল পরিবর্তন হয়েছে । মানুষ যেমন এগিয়েছে অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি এগিয়ছেে শিক্ষা-দীক্ষায়ও । মানুষের ধ্যান ধারনা ও মন-মানসিকতায়ও এসেছে অনেক পরিবর্তন । প্রযুক্তিতেও দেশ এগিয়েছে অনেক । বর্তমান সরকারই কিন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা । অথচ এই সরকারই কিনা স্বপ্ন দেখছে, আবার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের, যা বর্তমান বিশ্বে কেউ কল্পনাও করতে সাহস পাচ্ছে না । গত একযুগে পৃথিবীর বড় বড় একদলীয় শাসন ব্যবস্থার রুপকাররা, যারা কিনা পরিচিত ছিল স্বৈরশাসক হিসাবে নিন্দিত,সমালোচিত ও ঘৃনীত এবং তাদের মসনদ তাসের ঘরের মতো ভেংগে পড়েছে । যেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশে, প্রয়োজনের তাগিদেও বংগবন্ধুর মতো নেতা টিকিয়ে রাখতে পারেননি এবং যার কারনে বংগবন্ধুকে অত্যন্ত নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছিল পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনসহ, সেইখানে আবার তারই কন্যা শেখ হাসিনা আবার কিভাবে সেই একদলীয় অভিশপ্ত শাসন ব্যবস্থার দিকে পা বাড়িয়েছেন ?
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বংগবন্ধুর নির্মম পরিনতির জন্য একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমই দায়ী-এটাকে বিবেচনায় না নিয়ে, তিনি বরং কি কারনে বংগবন্ধু একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে পারেননি-সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে ,তার নিজের চিহ্নিত কারনগুলি মাথায় রেখে, সেগুলির যাতে পূনরাবৃত্তি না ঘটে, সেইদিকেই পুরাপুরি মনোনিবেশ করে এগুচ্ছেন বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ।
কিন্ত বংগবন্ধুর আমলের চেয়ে বর্তমানে শেখহাসিনার রয়েছে প্রবল প্রতিপক্ষ, যে কিনা বিগত ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনটি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে হলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন থাকার ছিল সমূহ সম্ভাবনা । এমনই একটি প্রবল প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ন নির্মূল করার যে পরিকল্পনা নিয়ে বর্তমান সরকার এগুচ্ছে, তা বুমেরাং হয়ে নিজেদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে ফেলতে পারে শেষ পর্যন্ত । কারন বংগবন্ধুর মৃত্যুর পরে, আওয়ামীলীগকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লেগেছিল প্রায় ২১বৎসর । বর্তমানে ক্ষয়িষ্ঞু জনসমর্থন নিয়ে, শুধুমাত্র আইনশৃংখলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্ন দেখা- আমার কাছে তাই সিড়ি বেয়ে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখার মতোই মনে হচ্ছে ।