দুনিয়ার পাশাপাশি আখেরাতেও যুলুমের কারণে যেসব ভয়াবহ অবস্থা হবে, তাহলো:
ক) আল্লাহ তা‘আলা যালেমদেরকে আখেরাতে ভয়ানক শাস্তি দিবেন। সূরা বুরুজের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَتَنُواْ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَتُوبُواْ فَلَهُمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمۡ عَذَابُ ٱلۡحَرِيقِ ١٠﴾ [البروج:10]
নিশ্চয়ই, যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে নির্যাতন করে, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে, আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব।’’[ সুরা বুরুজ ১০]
সূরা ফুরকানের ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿ وَأَعۡتَدۡنَا لِلظَّٰلِمِينَ عَذَابًا أَلِيمٗا ٣٧﴾ [الفرقان:37]
‘‘আর আমি, যালেমদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি’’। [ সুরা ফুরকান ৩৭]
খ) যালেমের জন্য কিয়ামতের দিন বিরাট মুসিবত রয়েছে, তার জন্য শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার ।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.), আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
অর্থ: যুলুম-অত্যাচার যালিমের জন্য অন্ধকারের কারণ হবে। অর্থাৎ হাশরের ময়দানে যালিমের চারপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার থাকবে। [বুখারী:২৪৪৭; মুসলিম:২৫৭৮]
গ) যুলুম করে সাময়িক আনন্দ, কোন প্রাচুর্য বা কোন পদোন্নতি হলেও, যালেমের মত হতভাগা আর কেহ নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : «أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ» ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ».
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান গরীব কে?
সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই, সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [তিরমিযী:২৪১৮]
ঘ) যে নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত বা দুনিয়া উপার্জন করার জন্য কারো উপর যুলুম করলো, কিয়ামতের দিন সে হবে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। ইবনে মাজাহ আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সে হবে সর্বাধিক নিকৃষ্ট, যে নিজের আখেরাতকে অন্যের দুনিয়ার কারণে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ঙ) আখেরাতে যালেমের ভাল আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে । আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি কারো মানহানি বা অন্যকোন বিষয়ে অত্যাচার করে, তাহলে সে যেন জীবিত থাকতেই তা ক্ষমা চেয়ে নেয় অথবা অত্যাচার পরিমাণ বিনিময় পরিশোধ করে দেয়। কেননা সে দিন (কিয়ামত) তার নিকট কোন দীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবেনা। যদি তার ভাল কোন আমল থাকে, তাহলে অত্যাচার অনুপাতে তার থেকে ভাল আমল ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যদি কোন নেক আমল না থাকে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ ইবন হিব্বান:৭৩৬১]
আবু মূসা আল -আশ‘আরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না। [বাইহাকী: ৬/৯৪]
লেখক : হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ