সে
ছেলেটা নাকি পড়াশোনাতে বেশ ছিলো,
কবিতা আর গানেও সুরের রেশ ছিলো,
সেই যে এক নতুন প্রাণের দেশ ছিলো,
সেই খানেতেই থাকতো সে,
ফোয়ারা হাসির তুলত যে,
ফেসবুকেতে সেলফি দেবার পাগলামি তার ছিল বেশ,
আব্বা তাকে বকা দিলেও মায়ের আদর পেতই বেশ।
এমনি করেই কাটছিলো দিন দিনগুনে,
প্রেমের প্রহর আসত যেত তাল গুনে,
জানি না কোন আষাঢ় এলো সেই কালে
নৌকা যেমন আঁধার রাতে পাল তুলে
কোন পথে যায় নিরুদ্দেশে, পথ ভুলে,
এমনি করেই হারিয়ে গেল হাসির রেশ,
যুগের পাগল ছেলেটা হল নিরুদ্দেশ।
বাবা খোঁজেন সবকটা দিক, কাঁদেন মা।
ধোঁয়ার মতোই হারিয়ে গেল ছেলেটা,
যেন সে আর কোনোকালে ছিল-ই না।
কেঁদে কেঁদে অশ্রু যখন প্রায় হারা
টিভির খবর ছেলেটা হয়েই দিল সাড়া।
মায়ের রঙিন স্বপ্নগুলো রুধির হয়ে
কান্না হয়ে বন্যা হয়ে গেল বয়ে,
ছেলের ছোড়া বুলেট গুলো
বেধেনি তো লোকের বুক
মিটিয়ে দিলো মায়ের সকল গর্ভ সুখ।
কান্না ছিলো চোখ ছুঁয়ে তার অভিমানে
হদ্দ বোকা ছেলেটা কি আজ জানে ?
বলবে লোকে হাসবে লোকে
মায়ের চোখে জল দেখে,
‘কুমির অশ্রু দেখাতে হয়
লোকে তাই দেখে।’
একটা গুলি ছিনিয়ে নিল
মায়ের চোখের অশ্রুজল
সন্তানকে ভালোবাসার এই তো ফল!
তুমি
তুমি তখন রাস্তার মোড়ে,
চাঞ্চল্য গোটা শহরটিতে,
গোটা দেশটিতেও।
চারিদিকে ভয়ার্ত চাহনি,
কি ঘটেছে পরিষ্কার ভাবে
জানা যাচ্ছে না কিছুতেই।
তবে আরো কিছু যে একটা ঘটতে চলেছে
এটা তুমি বেশ পরিস্কার বুঝতে পারছ,
চারিদিকে মানুষের ছোটাছুটি,
তবে মিলিটারিদের বেশি।
অদম্য কৌতূহল চেপে
কিম্বা অদম্য কৌতূহল মেটাতে
তাদের পাশে পাশে চলেছ তুমিও,
বিনা পয়সায় একটা সিনেমাটোগ্রাফি বিনোদন।
একটা গুলি এসে তোমার মাথাতেও লাগতে পারে,
একটা গ্রেনেড এসে তোমাকে এমন ঝাঁকুনি দিয়ে যেতে পারে
যাতে করে তোমাকে আর চেনবার অবকাশ টুকুও থাকবে না।
তুমি বীর, মরতে ভয় পাচ্ছ না- এমনটা নয়
তবে ঝুঁকিটা নিচ্ছ অদম্য কৌতূহলে,
কৌতূহল তোমাকে ঝুঁকিটা নেওয়াচ্ছে,
বাড়িতে ফিরে এর জন্যে তোমাকে বৌয়ের কাছে
বিস্তর গাল শুনতে হবে,
তবু তুমি পাত্তা দিচ্ছ না।
আসলে তুমি ঘোরের মধ্যে,
পূর্বাপর কিছু না ভেবেই
মাথা বাঁচিয়ে শরীর বাঁচিয়ে
মনের নেশা চোখের নেশা মিটিয়ে নিচ্ছ
গোলাগুলির তুমুল চিৎকারে।
রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত গুলো তোমার চোখের সামনে
কেমন ভাবে কাটছে,
যখন তুমি সুস্থতায় ফিরবে-
পারবে না দিতে তার বিন্দুমাত্র বিবরণ।
কিন্তু মস্তিষ্কের হার্ড ডিস্কে সেটা অক্ষত।
শুধু ওভারলোডে হ্যাঙ করে গেছে তাই।
আমি
মহা সমারোহ, তাই অফিসেতে যাই নি,
চুমুক চায়ের কাপে, তবু নাস্তাটা খাই নি।
চ্যানেল গুলো সব মহা ধড়িবাজ
কত কিছু দেখবার, তবু দেখালো না আজ।
অত দূর থেকে যদি ছবি তোলো ভাই
কিছু কিগো দেখা যায় , কিছু দেখা যায়?
ধোঁয়া ধোঁয়া ভাসা ভাসা ভিডিও র হাল
চোখের কষ্ট, আর করে নাজেহাল।
তুমি নাকি রিপোর্টার? সংবাদ পেশা?
করছ কেন বা তুমি বাঁচবার আশা?
কাছে যাও, ছবি তোলো, গুলি লাগে তাও
তবেই না টিআরপি, বাড়বে যে ভাও।
অফিসটা ছুটি নেওয়া ফাউ হলো ভাই।
এদের ঘটেতে কিছু স্পেশালিটি নাই।
আমরা
এই আমাদের দেশ, এই আমাদের মা,
মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে আবার ভূমিষ্ঠ হয়েছি এই মাটিতে,
আমদেরকে দাবিয়ে রাখার কম চেষ্টাতো হয়নি এ যাবৎ পর্যন্ত,
পেরেছে কি কেউ ? আমরা কি পারতে দিয়েছি তাদেরকে?
আমাদের ভালোবাসা বিশ্ব ছোঁয়া,
দেশের প্রতি ভালোবাসা
মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা।
এ কিন্তু কিংবদন্তী নয় , এ হলো ইতিহাস।
সময়ে সময়ে রাজনীতির লোকেদের রং বদলায়,
কিন্তু মানুষতো একই থাকে।
আমরা সরল, বিশ্বাস করি সহজে,
কিন্তু আমরা বোকা নই,
ধর্ম আমাদের শক্তি,
ধর্ম আমাদের ধর্মান্ধতা নয়।
ভালোবাসা দিয়ে আমাদের জয় করা যায়
উন্মত্ততা দিয়ে আমাদের ক্ষয় করা যায় না।
আমরাই সাহস রাখি- পুত্র দেশ হন্তারক হ’লে
তার মৃতদেহটাকে ন্যূনতম মমত্ব না দেখানোর জন্য।
সুতরাং খুব সাবধান।
*************************************************************************************************************************
বিঃ দ্রঃ এই কবিতা আমি উৎসর্গ করছি আমার প্রিয় ব্লগার আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম কে।
গতকাল সকালেই তাঁর কবিতাঃ সে, তুমি ও আমি দেখেই এই কবিতার জন্ম হয়েছিল আমার মাথায়। তাই এই কবিতার পুরো কৃতিত্ব আমার প্রিয় ব্লগার আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলামের।