আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে।’
আমরা কতই না মজাদার খাবার!
জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.),আল- ওয়াহ্হান কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতালকে অপছন্দ করা।’ (মুসনাদে আহমদ, খন্ডঃ ১৪, হাদিস নম্বরঃ ৮৭১৩, হাইসামী বলেছেনঃ হাদিটির সনদ ভালো, শুয়াইব আল আর নাউতের মতে হাদিসটি হাসান লি গাইরিহি)
সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছেঃ
حُبُّ الْحَيَاةِ وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ
‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ, হাদিস হাসান)
এই হাদিস নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় আসলেই রাসুল(সা.)-কে ‘অল্পকথায় অনেক কথা প্রকাশ করা’র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো। “আমাকে এমন কথা (বলার ক্ষমতা) দেয়া হয়েছে যা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অর্থ ব্যাপক ” [বুখারী মুসলিম]
ওয়াহহান সম্পর্কিত আলোচ্য হাদীসে মাত্র কয়েকটি বাক্য রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যেই মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা, তাদের মূল সমস্যা এবং তার সমাধান নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো:-
(১) ‘তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য লোকজন একে অন্যকে আহবান করবে, যেভাবে খাবারের জন্য আহবান করা হয়।’
উম্মাহর এই অচল অবস্থার শেষ কোথায়?
এই হাদীসের অসাধারণ একটি বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রোতাদের মনের সামনে যেন একটি বাস্তব স্পষ্ট ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে, মুসলিম উম্মাহকে প্রথমে তুলনা করা হয়েছে, কিছু ক্ষুধার্ত লোকের সামনে রাখা সুস্বাদু খাবারের সাথে। কিন্তু, যেহেতু তারা ভাগাভাগি করে খাবে একারণে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অংশ থেকে ভাগ নিতে চাইবে, ফলে খাদ্যটি ভাগ হয়ে যাবে ‘আমন্ত্রিত অতিথি’র মর্যাদা ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে।
খিলাফত পতনের অল্প কিছু সময় পর থেকেই, মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে দেয়া হল বিভিন্ন রাষ্ট্রে, ইউরোপিয় দখলদারি শক্তি এটা করেছিল। এবং তাদের প্রত্যেকেই এরপর নজর দিল মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ যে প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়েছেন সেদিকে।
সত্যিই বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত, আল- কুরআনও সুন্নাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। এই অবস্থায় দুনিয়ার অন্যান্য জাতি, মুসলিম উম্মাহর উপর সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে এবং একে অন্যকে আক্রমণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে, একদেশের মুসলিমদের আরেক দেশের মুসলিমদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে এবং যুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। যেমন : ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, কাশ্মীর ইত্যাদি-সেটা তাদের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য হোক অথবা খনিজ সম্পদ দখলের জন্য হোক অথবা অর্থনৈতিক বাজার দখল করার জন্য হোক।
কেউ আক্রমণ করছে সরাসরি আগ্রাসী সেনাবাহিনী পাঠিয়ে, কেউবা কুটনৈতিক (diplomacy) এর মাধ্যমে, কেউবা আদর্শিকভাবে (ideologically), কেউবা সংবাদ মাধ্যম, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে, কেউবা তাদের আবিস্কৃত শিক্ষা-ব্যবস্থা রপ্তানী করে তাদের মানসিক দাস তৈরির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই মানসিক দাসেরা পশ্চিমা দেশের অপ সংস্কৃতিকে মনে করে আধুনিকতা আর ইসলামের পবিত্রতা আর সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে মনে করে পশ্চাদপদতা, তারা কুফফারদের পরিচালিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানব রচিত মতবাদ গ্রহণ করতে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে আর ইসলামের শিক্ষা অনুসারে দেশ, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে বাধা দেয় ।আর এক্ষেত্রে তারা ‘গণতন্ত্র রক্ষা, মানবতা, নারী-মুক্তি, শিশু-অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা, সামাজিক-উন্নয়ন’ ইত্যাদি বিভিন্ন মনভুলানো চটকদার শব্দের মোড়কে তাদের এই দালালী কার্যক্রমকে ঢেকে নিয়েছে।
বস্তুতঃ ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উপর এই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত, এটা যারাই আল-কুরআনে বর্ণিত আনআম (গবাদি-পশু) এর মতো নয়, তারাই জানেন ও বুঝেন।
(২) দ্বিতীয় : ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা তখন অগণিত হবে।’
ওয়াও আমাদের সংখ্যা ১৫০ কোটি?
হোয়াষ্ট এ ক্রাউড?
এতো দেখছি মহাসমুদ্র!
এখান থেকে বুঝা যায়, বেশি সংখ্যক হওয়া ইসলামের কোন পূর্বশর্ত নয়। ইসলাম চায় মানসম্পন্ন মুসলিম,যারা আল্লাহর দীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সংখ্যা এখানে মূখ্য নয়। আল্লাহ চেয়েছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে উত্তম’ (আ’মালুন সালিহান), এটা চাননি যে, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে বেশি’ (আ’মালুন কাছিরান)।
বদরের যুদ্ধে কাফিরদের সংখ্যা ছিলো মুসলিমদের তিনগুণ। ইয়ারমুকের যুদ্ধে কাফিররা ছিলো মুসলিমদের ৭০ গুণ। উভয় যুদ্ধেই মুসলিমরা বিজয়ী হয়। অপরদিকে, হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো, কাফিরদের চেয়ে বেশি। কিন্তু সে যুদ্ধে তারা পরাজয়ের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর রহমতে বিজয় আসে। আফসোস, বর্তমান মুসলিম উম্মাহ, তাদের সংখ্যাধিক্যের পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যস্ত, কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশি গতিতে বেড়ে চলেছে, কোনদেশে মুসলিম Growth rate কত ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে তারা ব্যস্ত; কিন্তু মুসলিমদের মান নিয়ে কোন চিন্তা হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ আল-কুরআনে বারবার বলেছেন, বিজয় শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকে আসে, আর তাঁর বিজয় দানের ওয়াদা শুধু মুমিনদের জন্য।
দেড়শ কোটি মুসলিমের এত বিশাল সংখ্যাও কোন কাজে আসছে না, কারণ অধিকাংশ জনতা মানসিকভাবে পশ্চিমা দেশ ও তাদের আদর্শের দাসত্ব করে আসছে। রাখাল যেভাবে তার খেয়াল খুশি মত পালের ভেড়াদের যেদিকে খুশি সেদিকে নিয়ে যায়, এই পশ্চিমাদেশগুলোও আমাদের মুসলিমদের সেভাবে পালের ভেড়া বানিয়ে রেখে মানসিকভাবে গোলামে পরিণত করে রেখেছে।
(৩) তৃতীয়ত : ‘তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনা রাশির মতো, যা স্রোতে সহজেই ভেসে যায়।’
আমরা সমুদ্রের ভেসে উঠা ফেনার মত!
এটা হচ্ছে, বেশি সংখ্যক হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থার একটি অসাধারণ বর্ণনা।
-সাগরের ফেনা বিপুল পরিমাণ পানির উপর ভেসে থাকে ঠিকই, বিপুল জলরাশি নিয়ে সে গর্ব করে, এই জলরাশি তার কোন কাজে আসে না। তার নিজের কোন দৃঢ় অবস্থান নেই।
সত্যি আমরা সমুদ্রে ভেসে উঠা ফেনার মত!
-সাগরের ফেনার যেভাবে কোন শক্তি নেই, শুধু উপর থেকে দেখতে অনেক মনে হয়, অন্যদিকে নিচের পানির স্রোত তাকে যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যায়।
এই ফেনার কোন মূল্য নেই।
-ফলে এই সংখ্যা নিয়ে গর্ব করা এক প্রকার মিথ্যা আত্মতুষ্টি অনুভব করা।
-নিজেকে চালিত বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ফেনারাশির নেই, সাগরের ফেনাকে নিয়ন্ত্রণ করে নিচের জলরাশি।
মুসলিম উম্মাহও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই তাদের কোন ভূমিকা কিংবা অবস্থান নেই। তাদের প্রতিটি দেশই সুদভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত, আল- কুরআন সুন্নাহ বিবর্জিত পশ্চিমাবাদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদী-রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাদের দেশগুলি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামের গন্ডি শুধুমাত্র মসজিদ ও কতিপয় পারিবারিক আইনে সীমাবদ্ধ। এ যেন সংখ্যায় বেশি হয়েও তারা সংখ্যালঘু. কাফের-মুশরিক-ইসলামের শত্রুরা ঔদ্ধত্যের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের একটি কথাও বলতে পারে না। অথচ সমুদ্রের ফেনা রাশির মতোই মুসলিম উম্মাহ ও সংখ্যাধিক্য নিয়ে আনন্দিত, উল্লাসিত, গর্বিত।
(৪) চতুর্থত : ‘আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের মধ্যে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’
কাফেরদের মনে কি বিন্দুমাত্র ভয় আছে?
এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়।
ক. মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। ইসলাম কোন বৈরাগ্যবাদী ধর্ম নয়, কিংবা ‘অহিংস পরমধর্ম’ প্রকৃতির গৌতমীয় বাণীতে বিশ্বাস করে না। বরং, ইসলামে ভালোবাসা ও ঘৃণা (আন ওয়ালা ওয়াল বা’রা)একটি গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট। অনেক আধুনিকএবং পরাজিত মন মানসিকতার অধিকারী মুসলিম যাদের মন-মগজ পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থা, ডিস, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে সঠিক ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, তারা যতই এ ব্যাপারটায় তাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন না কেন। আল্লাহর রহমত, তিনি আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসকে অবিকৃত রেখেছেন। না হলে এরা ইসলামকে বিকৃত করে কোথায় নিয়ে যেতো। আল্লাহ বলেন :
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা-মায়েদা : ৫১)
মুসলিমদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বাদ দিয়ে, বিজাতীয় প্রভুদেরকে বন্ধু অভিভাবক করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
খ. মুসলিমদের উচিত তাদের শত্রুদেরকে ভীত সন্ত্রস্থ রাখা। আর তাদের অন্তরে আমাদের ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক । যদি না থাকে, বুঝতে হবে, কোন সমস্যা আছে। কারণ রাসুল (সা.), আমাদের দুরবস্থার একটি কারণ হিসেবে তাদের মনে, আমাদের ভয় না থাকাকে উল্লেখ করেছেন।
আর আল্লাহ তো পবিত্র কুরআনে ঘোষণাই দিয়েছেন, যা বেশির ভাগ মুসলিম সেনাবাহিনী তাদের কুচকাওয়াজে না বুঝে মন্ত্রের মতো পাঠ করে থাকে।
‘আর তাদেরকে মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখবে যদ্দ্বারা তোমরা ভয় দেখাতে থাকবে আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে, আর তাদের ছাড়াও অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন।তোমরা আল্লাহর পথে যা খরচ করো তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে, আর তোমাদের সাথে কখনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা-আনফাল : ৬০)
তাই কাফিরদের মনে ভয়-ত্রাস সৃষ্টি করা মুসলিমদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ। কে আছে এমন যে আল্লাহর এই হুকুমকে অস্বীকার করতে পারে। আর এক্ষেত্রে মুসলিমরা শুধু ‘চোরের কাছে পুলিশ যে রকম ত্রাস সৃষ্টি করে’ যা ডা. জাকির নায়েক বলে থাকেন, সে রকম ত্রাস সৃষ্টিকারী নয়, বরং ‘সুলায়মান (আ.) যেভাবে বিলকিসের রাজত্বে তার শিরকের কারণে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন’ সে রকমও ত্রাস সৃষ্টিকারী।
এটা ছিলো, আমাদের প্রথম সমস্যা, আর দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, আল্লাহ আমাদের মাঝে ‘ওয়াহ্হান’ ঢুকিয়ে দিবেন।
(৫)পঞ্চমত :‘জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), ওয়াহ্হানকি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতালকে অপছন্দ করা’ অথবা মৃত্যুকে অপছন্দ করা।
ওয়াহান কি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এখানে সমস্যা এবং সমাধান দুটোই চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে, পুঁজিবাদী ও সমাজাতান্ত্রিক বস্তুবাদী আদর্শ যখন মুসলিম দেশগুলোতে রপ্তানি করা হল, তখন থেকে মুসলিমরা নিজেদের স্বভাববিরুদ্ধ রকমের বস্তুবাদী ও ভোগবাদী হয়ে গেল, দুনিয়ার সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে লাগল। আখিরাতের জীবনের কথা বেমালুম ভুলে গেল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরেকটি হাদীসে বলেছেন,
“সুখ শান্তি বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করো’ (তিরমিযি)
আল্লাহ বলেন, “(হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও”। [সূরা নিসা ৭৭-৭৮]
.
(৬)ষষ্টত: উপরোক্ত দুটি সমস্যার সমাধান, এমন কি মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিসের মধ্যে।
তিনি বলেছেন :
‘যখন মানুষ দিনার এবং দিরহামের মধ্যে ডুবে যাবে, এবং যখন ঈনা নামক (সুদী) ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাবে, আর গরুর লেজ-এ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, তিনি তা উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের দ্বীনে ফিরত না যাবে।’
[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ (২/২৮), তাবরানী (১২/৪৩৩), বায়হাকী (শুয়াবুল ঈমান ৭/৪৩৪), আবু ইয়ালা (১০/২৯)]
মানুষ এমনভাবে সুদের সাথে জড়িয়ে গেছে যেন সুদ ছাড়া অর্থনীতি কল্পনায় করা যায় না?
তাই আমাদের সমস্যা কোন টাকা-পয়সার, প্রযুক্তি, ব্যবসা এর কমতি নয়, গরুর লেজ অর্থাৎ কৃষিকাজ-এর কমতি নয়, যা অনেক তথাকথিত ইসলামী বুদ্ধিজীবীরা মনে করে থাকেন। বরং আমাদের সমস্যা অন্য কোথাও। আমাদের লাঞ্চনার কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দেয়া, ক্বিতাল করতে গিয়ে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুকে ভয় করা আর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে বেশী ভালোবাসা।
যখন মুসলিমরা অনুধাবন করবে যে, মৃত্যু আসলে সমাপ্তি নয়, বরং নতুন জীবনের শুরুমাত্র, আর আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন তখন এই উম্মাহর অবস্থা নিশ্চিতভাবেই বদলাতে শুরু করবে ।
এর আগ পর্যন্ত আল্লাহ বলছেন: “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। ”[আর রাদ ১১]
এরপরেও আমরা নিরব! collected