সময় ২০০৫- স্থান- ঢাকা কাঁঠালবাগান
বন্ধুবর জহিরের বাসায় কোন এক ছুটিতে বেড়াতে আসিয়াছি। ফ্ল্যাট-এর আর সবাই বাড়িতে। বুয়া-ও নাই...বিচিত্র সব খাবারের এক্সপেরিমেন্ট চলিতেছে। এরই মধ্যে একদিন দুজনে চিন্তা করিলাম দুপুরে কবুতরের মাংস খাইব। তো কবুতর লইয়া আসিলাম, সাথে ২লিটার সেভেন আপ। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে রান্না হইল। জহিরের রান্নার হাত মাশাল্লাহ খুবই ভাল। বিপাক হইল ভাত রান্নায়। প্রচুর পানি দিয়া, ভাত চুলায় চাপাইয়া দুইজন গপ্পে একেবারে মশগুল হইলাম। গপ্পে গপ্পে ভুলেই গেলাম ভাত এর কথা। হটাত মনে পরতে গিয়ে দেখি ভাত অতিরিক্ত সিদ্ধ হয়ে জাও-এ কনভার্ট হয়ে গেছে। পেটে অসম্ভব ক্ষুধা! জাও আর কবুতরের তরকারি দিয়ে একপ্লেট সাবাড় করে দিলাম। পরে আবারও নতুন করে ভাত রান্না করে ইচ্ছে মত ভুঁড়িভোজের পর দে ভাতঘুম।
সন্ধায় ঘুম থেকে উঠে দেখি লোডশেডিং।
বাইরে থেকে ঘুরাফেরা শেষে বাসায় ফিরেও দেখি বিদ্যুৎ নাই। এদিকে কবুতর আর জাও বাবাজী পেটের মধ্যে ক্রিয়া বিক্রিয়া করিয়া একাকার। পেট একবার মুচড়ায় তো আবার বুদবুদ করে। ঢাকা শহরের দূষিত বায়ু আরও দূষিত হয়; সাথে প্রকৃতিও নামে বেনামে আমাকে ডাকিয়া চলে। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই পাঁচ-ছয়বারের মত সাড়া দিয়া আমার অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন!!
এদিকে সাড়া দেয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাথরুম-এ সংরক্ষিত পানির পরিমান এক বালতি থেকে কমতে কমতে এক বদনায় আসিয়া ঠেকে। প্রচণ্ড টেনশান নিয়ে নির্ঘুম রাত বাড়ে। হাজার বছরের সেই পুরনো রাত!
যাইহোক, পরবর্তী একঘণ্টায় আমার সংরক্ষিত বদনার পানি সহ ফুটানো সকল খাবার পানি প্রকৃতির ডাকাডাকিতে বিলুপ্ত হয়। আমি তখন ক্লান্ত, বিপর্যস্ত ও শঙ্কিত। দুরুদুরু বক্ষে আল্লাহর নাম জপে বিছানায় গা ছুয়ান মাত্রই ঘুমে আচ্ছন্ন। শেষরাত এর দিকে, প্রকৃতির অনুরোধ-এর শেষ পর্বে আমার আবারো ডাক আসে। ঘুম থেকে উঠে ভূ-দৌড়ে বাথরুমে বসে চিন্তায় মাতি এযাত্রায় উদ্ধার পাবার কি উপায়? আতঙ্কিত হয়ে পানির নব ঘুরিয়েও ফায়দা হয়না।
হাল ছেড়ে দেয়ার ঠিক আগে, বিদ্যুৎ চমকের মত অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়...’অ্যান আইডিয়া’। ইয়েস... ই...য়ে...স, অ্যান আইডিয়া সিমপ্লি ক্যান চেঞ্জ দা ওয়ার্ল্ড। সম্ভাবনাকে বাস্তবে কাজে লাগিয়ে, প্রকৃতির দিকে মুচকি হাসি ছুড়ে দিয়ে সে যাত্রায় আমি উদ্ধার পাই।
“......অ্যান আইডিয়া... !!!!”
তার পর থেকেই, সেভেন-আপ দেখলেই কেমন জানি মায়া মায়া লাগে... আহারে...