somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুরিকাহিনী

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব! একজন বা একদল মানুষ কোন উপমা বা উপাধী অন্য মানুষকে দিয়ে থাকলেও এই উপমাটি মানুষ নিজেই নিজেকে দিয়েছে। নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে সদা জাহির করতে উন্মুখ। তবে মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের মধ্যে জগতের ভালো মন্দ সব প্রানীর গুনাবলী বর্তমান। কথায় আছে কাকে কাকের মাংশ খায় না। কিন্তু মানুষে খায়। আক্ষরিক অর্থে এবং ভাবার্থে দুই অর্থেই খায়। নিউজিল্যান্ডের বর্তমান জনগোষ্ঠীর আদিপুরুষ মাউরি উপজাতী। এই মাউরিরা ছিলো নরমাংস খাদক। ভারতীয় সনাতন ধর্মের কালীমায়ের পূজারীরা পাঠাবলি প্রচলনের আগর যুগে নরবলী দিতো মায়ের সিদ্ধি লাভের আশায়।

আবার মানুষের মাঝে ভালো গুন অন্য প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশী। তারা ক্যাঙারুর মত নিজের সন্তানকে আগলে রাখে, পাখির মত পারলে মুখ থেকে বের করে খাওয়ায়। তবে আজ খুব বেশী ভালো গুনের কথা মনে পড়ছে না। মনটা অবশ হয়ে আছে। ঘুম থেকে জেগে ফেসবুকে ঢুকে একটা নিউজ পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সিলেটে রাজন নামে ১৩ বছরের এক কিশোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এক দল মানুষ নামের প্রাণী। ছেলেটার অপরাধ সে চুরি করছিলো। কি চুরি করেছিলো জানি না। বিস্তারিত ঘটনা পড়তে সাহস পাচ্ছি না। পৃথিবীতে চুরি একটি ঘৃণিত অপরাধ। তাই বলে কোন আইনেই চুরির শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে না। ছেলেটা চুরি করেছিলো। হাতে নাতে ধরা পড়েছে। পুলিশে দিতে পারতো। কিন্তু নরপিচাশেরা তাকে পিটিয়েছে এবং ভিডিও করেছে। সেই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেছে। ঘুমাও সরকার। সৌম্য সরকার থেকে শুরু করে হাসিনা সরকার, সব সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও। আমরা ইউটিউবে জীবন্ত হরর ম্যুভি দেখতে থাকি।

ইদানিং আমি একটু বেশী স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি। উঠোন পেরিয়ে যে পেছনের দরজা সেটা দিয়ে বারবার অতীত জীবনে ফিরে যাচ্ছি। ছোটবেলায় আমি অনেক চুরি করেছি। সেটা ছিলো বাবার পকেট থেকে দোঁয়েল পাখির ছবি আঁকানো দুই টাকার নোট চুরি কি মায়ের হেঁসেলে ঢুকে টুপ করে কড়াই থেকে এক টুকরো মাছ কি মাংস মুখে পুরে নিরীহ অভিব্যক্তি দিয়ে বসে থাকা। আমার ভাগ্য ভালো যে আমি নিজের বাবার কি মায়ের সাম্রাজ্যে চুরি করেছিলাম। অন্যের বাবা বা মায়ের অধিকারে হাত টান দিলে হয়তো আমার এই হাত থাকতো না লেখার জন্য। হয়তো আমার রাজনের মত দশা হতো। একটু একটু করে পিটিয়ে আমাকে মেরে ফেলা হতো। আকন্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে আমি পানি চাইতাম। আমাকে বলা হতো গায়ের ঘাম চেটে খা। ক্যামনে তোমরা এই ২৮ মিনিটের ভিডিও দেখবে। আমার গায়ের লোম এখনি খাড়া হয়ে যাচ্ছে।

একবার আমি দুইটাকা চুরি করার পর হাতে নাতে ধরা না পড়লেও অভিযুক্ত হয়ে ছিলাম। আব্বা আম্মা বিচার বসালেন। আমাকে স্বীকার করতে বলা হলো। আশ্বাস দেয়া হলো স্বীকার করলে কিচ্ছুটি বলা হবে না। আমি ভয় পেয়ে প্রবল বেগে মাথা নেড়ে অস্বীকৃতি জানালাম। ঘটনাটি সবাই ভূলে গেছে। কিন্তু এখনও মাঝরাতে আক্ষেপ জাগে মনের কোণে। কেন স্বীকার করিনি সেদিন! মার খাওয়ার ভয় পেয়েছিলাম। মধ্যবিত্ত জীবনে, চাকরি জীবনে পদে পদে এত মার খেতে হবে জানলে সেদিন কি আর দুটো চড় থাপ্পড় খাওয়ার ভয় করতাম। আমাকে নিশ্চয় বাবা মা মারতে মারতে রাজনের মত মেরে ফেলতো না!

গতবছরের কথা। দুপুর গড়িয়ে গেছে। রৌদ্রের উত্তাপ। আমি ঢাকা থেকে ফিরছি এই মেঘনা পাড়ের অঞ্চলে। রাস্তার পাশে বেশ ভিড়। রিকশা ছেড়ে দিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। লম্বা হওয়ার সুবাদে ভিড়ের পেছনে দাঁড়িয়েও অনেক কিছু দেখতে পারি। দেখলাম একটা ছেলে বেঞ্চের উপর শুয়ে আছে। মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে। আর কিছু যুবক মোটা তার পেচিয়ে ছেলেটার পায়ের তালুতে থেকে থেকে বাড়ি দিচ্ছে। ছোট ছোট বাড়ি কিন্তু ছেলেটা কুকড়ে উঠছে। কান্নার স্বর অনুচ্চ। বাবা গো মা গো ছেড়ে দাও শব্দের সাথে গোঙানী মিশেছে। যারা আকুপাওচার জিনিসটার সাথে পরিচিত তারা বুঝবে যে পদতলের স্নায়ুর সাথে মস্তিষ্কের ডিরেক্ট সম্পর্ক আছে। এই প্রতি বাড়ি সরাসরি তার মস্তিষ্কে আঘাত করছে বলে সে দ্বিগুন ব্যাথা পাচ্ছে। ছেলেটার অপরাধ জানতে পারলাম না। রিমান্ড চলছে যাতে ছেলেটা অভিযোগ স্বীকার করে নেয়। আয়োজক ছেলেরা সরকার দলের স্থানীয় সমর্থক। কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস পায় না। আমি মাথা নিচু করে ফিরে এলাম। হায়রে গণতন্ত্র তোমার জন্য আমরা ব্রিটিশ তাড়িয়েছি, পাক হানাদার তাড়িয়েছি, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তোমার নামে এখন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ আর বিপক্ষ শক্তিতে ভাগ করে ফেলেছি।

আরেকটি ঘটনা বলে আজকের লেখা শেষ করবো। ২০১২ সালের এক গুমোট সন্ধ্যায় ঢাকা গুলিস্তান থেকে গজারিয়া পরিবহনের বাসে উঠেছি। তখন ফ্লাইওভার ছিলো না। যাত্রাবাড়ির জ্যাম পেরোতে কয়েক ঘন্টা লেগে যেতো। কিছু সময় পরপর বাস থেমে যেতো জ্যামে। গুমোট গরমে আমি নোকিয়ায় মোবাইলে ফেসবুক টিপছি। হঠাৎ একটি থাবা এসে পড়লো জানালার বাইরে থেকে। হাত খানা মোবাইলটা ধরতে পারে নি। আমার হাত থেকে মোবাইল খানা পায়ের কাছে ছিটকে পড়লো। এক কিশোর ছেলে দৌড়ে রাস্তার ফুটপাতে গিয়ে দাড়ালো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহ্বল চোখে ছেলেটার দিকে তাকালাম। আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসছে। সেদিন থেকে চোরের উপর আমার প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছিলো। আজ ঘৃণা হচ্ছে সেই সব নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতি যারা নিজেদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে প্রমান করতে ব্যর্থ হলো। হে আল্লাহ, হে পরওরদেগার তুমি মানুষকে বিবেক দাও।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×