বার্থ ডে পালনের প্রথা আর দশটি বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের মত আমাদের বাড়িতেও কখনো ছিলো না। সন্তানকেন্দ্রিক জীবন হলেও বাবা মা সবসময় আমাদের নিয়ে পড়ে থাকতেন না। জন্মদিন আসতো। চলে যেতো। নিজেরাই কি খুব একটা টের পেতাম। এর পর এলাকায় আমার হাঁটুর বয়সী বাচ্চাগুলোর জন্ম হলো। তাদের বাবা মায়েরা জন্মদিন পালন করা শুরু করলো। বেলুন ফুলিয়ে, রঙিন জিলজিলে ফিতা ঝুলিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, কেক কেটে পাড়া পড়শিকে খাইয়ে জন্মদিন পালন। আমরা যেতাম, খেতাম, ফিরে আসতাম। বাবা মায়ের খুব সম্ভবত ছেলেদের জন্মদিন পালনের ইচ্ছে হয়েছিলো। কিন্তু সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারেননি হয়তো। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন এক জন্মদিনের সন্ধায় আব্বু কিছু মিষ্টি কিনে আনলেন। আমরা চারজন মিলে খেলাম। আমি আব্বু আম্মু আর ছোট ভাই। এই আমাদের প্রথম জন্মদিন উৎযাপন। ছোট ভাইয়ের জন্মদিনেও এটা হলো। এরপর আম্মা আমাদের জন্মদিনে ভালো ভালো রান্না করার কালচার শুরু করলেন। পাড়া পড়শির ঘরে দেওয়া শুরু করলেন। কিন্তু পার্টি দিয়ে জন্মদিন। কাভি নেহি হুয়া।
আরেকটা ব্যাপার উইশ করা। আমার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মধ্যে এসবের বালাই কখনো দেখিনি। ২০০৭/০৮ এর দিকে নেটের বন্ধুরা উইশ করা শুরু করলো। আমি গলে গলে পড়তাম। জন্মদিনের পরদিন আমি মোবাইলের ইনবক্স, ইমেইলল ইনবক্স, ফেসবুক ওয়াল (তখন টাইমলাইন বলা হতো না), মিগ৩৩ ইনবক্স খুঁজে খুঁজে দেখতাম। গুনতাম, কয়জন উইশ করলো। ডায়েরিতে তাদের নামও লিখে রাখতাম। অন্য রকম এক ভালো লাগা। পাগলামি হলেও এগুলো একান্তই আমার বক্তিগত ভালো লাগা।
.
আমার একজন বান্ধবী আছে। সে প্রতি জন্মদিনে আমাকে উইশ করে। এই একমাত্র ব্যতিক্রম। ফেসবুকের কয়েকটি আইডি মিলে আজ আমাকে আমাকে কয়েকশো মানুষ উইশ করবে। সতের হাজার সামথিং বন্ধু অন ফেসবুক। হাজার খানেক না করলে ইজ্জত থাকে নাকি বলো! কেউ কেউ হয়তো ফোন করবে। ভালো লাগায় আপ্লুত হবো। আম্মা রান্না করার জন্য আজকেই মশলা তৈরী করে রেখেছেন। আমার কেন জানিনা খুব কান্না পাচ্ছে। বহুকাল কাঁদি না। আজকেও কাঁদতে পারছি না। আম্মা খাবার নিয়ে বসে আছেন। যাই খেয়ে আসি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০৫