ঘুম ভাঙলো। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের সুর ভেসে আসছে। আল্লাহু আকবার... জোহরের আজান। ঘড়ি দেখার প্রয়োজন ছিলো না। আজানের সময় জানা। তবে ঘুম ভাঙলে মোবাইলে সময় দেখার অভ্যেষ হয়ে গেছে। সময় দেখলাম। সাড়ে সাতটায় ঘুমিয়েছি। এতক্ষন ঘুমিয়েও একরাশ আলস্য সারা শরীরে। মাথা ঝিম ঝিম করছে। কাল রাত অনেক প্রেশারে গেছে। সেহেরি খাওয়ার পরে দু চোখের পাতা ভার হয়ে আসে। কিন্তু সকালের শিফটের অফিসারকে ডিউটি বুঝিয়ে দিয়ে আসা পর্যন্ত আমাকে থাকতেই হয়। রোকনুজ্জামান ফোন না করলে হয়তো ঘুমটা স্বাভাবিক ভাবেই ভাঙতো। দোষটা আমারই। মাঝে মাঝে ফোন বন্ধ করতে ভূলে যাই।
বেশ কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে রইলাম। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। ফ্লোরে পা রাখলাম। শীতল ফ্লোর পায়ে শান্তি শান্তি পরশ বুলিয়ে গেলো। মৃদু পদক্ষেপে বেলকনির দক্ষিন মাথার জানালার সামনে দাড়ালাম। আষাঢ়ের আকাশ তার স্বরূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদূরে কদম গাছটার শাখায় শাখায় গুটি এসেছে। এখনও মনে হচ্ছে কদম ফোটার সময় হয়নি। কদম গাছের মাথা ছাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের শীর্ষ দেখা যাচ্ছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ডে কৃষ্ণ মেঘে ছেয়ে আছে পুরো আকাশ। ঘন কালো মেঘের এক সৌন্দর্য আছে। যা শুধু আষাঢ় শ্রাবনেই দেখা যায়। সামনে রাস্তা। ট্রাক থেকে বালু নামাচ্ছে কয়েকজন শ্রমিক। হলুদ রঙের ফুটবল জার্সি পরা সুগঠিত শরীরের একজন বেলচা মেরে বালি নিচে ফেলছে। তার পেশী ফুলে ফুলে উঠছে। দূরে মেঘনার শাখা নদীটাকে দেখা যাচ্ছে। আকাশের কালো রঙ সবটুকু যেন সে শুষে নিয়েছে। পানির রঙ টকটকে কালো। কালো কি কখনো টকটকে হয়! না হলে না হোক। আমার মাথাতে সর্বপ্রথম এই উপমাটিই এলো।
বাতাসের শিরিষের পাতা উড়ছে। শিরিষ গাছটির দিকে তাকালাম। তার এখন ভরা যৌবন। শাখা প্রশাখা মেলে দাঁড়িয়ে আছে যুবতী নারীর মত। বাতাসের বেগ বাড়ছে। দেয়াল ঘেঁষে লাগানো রাঁধাচূড়া, মালতীবনে বাতাসেরা দোলা দিয়ে গেলো। বাতাসের ঝাপটা লাগলো আমার মুখে। আহ কি প্রশান্তি। এই বাতাসের কাছে ফ্যান এসির বাতাস অতি তুচ্ছ। আমি জানালার গ্রিলে থুতনি বাঁধিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। টিপির টিপির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাস্তার লোকেরা ছুটোছুটি করছে। এরকম বৃষ্টি শুরু হলে সব থেকে বেশী লাফায় ছাগল ছানা। একটা লাফানো ছাগল ছানা দেখতে পেলে মন্দ হতো না। বৃষ্টি ফোটা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তা জনশূন্য হয়ে গেলো। শুধুমাত্র শ্রমিকগুলো তখনো কাজ করে যাচ্ছে।
শূন্য রাস্তা, কালো আকাশ, বাতাসে দোল খাওয়া গাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বৃষ্টির ঝাপটা মুখে এসে লাগতে শুরু করেছে। ভালই লাগছে। বেশ কিছুক্ষন এভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টিতে লুঙ্গি গেঞ্জির অনেকটা ভিজে গেছে। ইচ্ছে করছে কারো হাত ধরে এই বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে। যে ইচ্ছেটা বহু বছর আগেও করতো। এখনো করে। শুধুমাত্র কখনো বাস্তব হয়ে ওঠেনি এই যা!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫