এগিয়ে যায় সুপ্ত।
মেয়েটার কাছথেকে জানতে পারে। ওর মায়ের অপারেশন হবে। হার্ট এর সমস্যা ছিল। আজ বিকাল থেকেই হঠাৎ করে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওর বাবা নেই। সাথে ওর এক মামা এসেছে সে নিচে ডাক্তার এর সাথে কথা বলছে।
এর মধ্যেই সোহেল এসে পড়ে।
ডাক্তার দের সাথে কথা বলে ইমারজেন্সি তে ওয়েট করতে থাকে সুপ্ত আর সোহেল। এ্যাম্বুলেন্স আসতে আরও আধা ঘণ্টা দেরি হয়।
বাবার মুখটা একবার দেখতে পারে সুপ্ত। কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মুখটার দিকে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে যেতে থাকে সুপ্তর। শরীরের সমস্ত লোমগুলাতে কেমন যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সি তে নিয়ে যাওয়া হয় বাবাকে। সুপ্তকে জড়িয়ে ধরে মা অনেক কান্নাকাটি করছে। তাকে থামানোই যাচ্ছে না। সুপ্ত আর সোহেল অনেক চেষ্টা করে।
নিজের কান্নাও যেন আর বাঁধ মানতে চায় না ওর।
এভাবে অনেকক্ষণ কাটে.........
মা এখন চুপ। একটা কথাও বলছেন না।
ডাক্তার আসেন। অবস্থা অনেক গুরুতর। একটা মেজর অপারেশান করতে হবে।
সোহেল ডাক্তার এর সাথে কথা বলছে। সুপ্ত এসে মায়ের পাশে বসে।
ছোট বেলাতে বাবাকে ঘোড়া বানিয়ে তাঁর পিঠে চড়ে কতো খেলা খেলেছে, চকলেট কেনার জন্য বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে কানমলা খেয়েছে। সৃতি গুলা হাতড়ে চলে সুপ্ত।
এগুলো তো বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। এইতো সেদিন এর। কিন্তু বাবা কেন এখন কথা বলছে না? কানমলা দিচ্ছে না আগের মত?
সোহেল একটা ফর্ম নিয়ে এল। কাপা কাপা হাতে ওইটা পুরণ করল সুপ্ত।
বাবাকে নিয়ে অপারেশান থিয়েটার এর দিকে চলল ওয়ার্ডবয় গুলা।
মা এসে সুপ্তর ঘাড়ে হাত রাখলেন।
তোর বাবার কিছু হবে না তো?
“না মা কিছু হবে না।“ উত্তর দেয় সুপ্ত।
সুপ্ত আর ওর মা অপারেশান থিয়েটার এর সামনে আগের জায়গা টায় এসে দাঁড়ায়।
অপারেশান থিয়েটার এর সামনে সেই মেয়েটাকে আর দেখতে পেল না সুপ্ত।
ওর মা এখন কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
আসলে নিজে বিপদ এ না পরলে কখনও অন্যের কষ্ট বোঝা যায় না।
ওর বাবা নেই, মা ই ওর সব।
ওর কষ্ট টা নিশ্চয়ই নিজের থেকে বেশি। মনে মনে ভাবে সুপ্ত।
কষ্ট জিনিস টা সংক্রামক সহজেই বাড়তে থাকে। একজন থেকে আরেকজন এ।
যাদের বাড়ে না তারা হয় মহাপুরুষ অথবা শয়তান।
ডাক্তার বেরিয়ে আসে ওটি থেকে। জানায় অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক। লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
মা কে চেয়ার টাতে বসিয়ে সোহেল কে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যায় সুপ্ত।
বুকের বামদিকে কেমন যেন চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে ও। পা দুইটা অবশ হয়ে যাচ্ছে। শক্ত করে গ্রিল আঁকড়ে ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সুপ্ত।
পুব আকাশ তখন কেবল আলোকিত হতে শুরু করেছে।
আবছা অন্ধকারে মেয়ে টাকে দেখতে পায় সুপ্ত। মেয়েটা ওর কাছে এসে জানায় ভালোভাবে ওর মার অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার বলেছে জ্ঞান ফিরতে সকাল হবে।
মেয়েটার খুশি দেখে কখন যে চোখে পানি চলে আসে সুপ্তর বুঝতে পারে না। মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দেয় ও।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬