মাহমুদ শাওন
একদিন ছায়াকে ঘিরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি- অন্ধকার। বহুদিন ছায়াকে ঘিরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি- অন্ধকার। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আমি অন্ধ হবার কৌশল আয়ত্ব করি। অথচ প্রাক সন্ধ্যায় পৌরবাতি জ্বেলে ওঠে আর আঁধার হত্যা হলে আমি আনত সন্ধ্যায় মাতি আত্মখুনে। ওখানে এত আলো! কুৎসিত আলো। ওখানে মৌনতা নেই। থাকে না। বাচাল চরিত্রগুলো রাতকে জাগিয়ে রাখে বহুরাত অব্দি। পুরনো এই দৃশ্য তবু রোজ বৃত্তের মাঝে আত্মহত্যা করে।
আমার পরিচয় তো জানা হলো। আচ্ছা, তুমি কে?
আমি ছায়া। আমি নিহত হলেই তোমরা আসো।
এটা কোনও নাম হলো? এটা কোনও পরিচয়?
কাউকে সনাক্ত করার জন্য, ডাকার জন্য একটা নাম দরকার। যাকে যে নামে সনাক্ত করা যায়- সেটাই তার পরিচয়। সুতরাং ওটাই আমার নাম।
তো তুমি এখানে কেন?
আমি কাউকে খুঁজি। যে বহুকাল আলোর মুগ্ধতায় থেকেছে। যে কেবল উজ্জ্বল হতে চেয়েছে; অথচ বোঝেনি, হীরার সান্নিধ্যে থেকেও কাঁচ কাঁচ-ই।
তবে তাকে আলোতেই খোঁজা উচিত। অন্ধকারে কেন?
আমার জন্য যতটুকু পৌঁছানো সম্ভব, তার বেশি আমি পৌঁছোতে পারি না। আমি জানি, সে এখানে আসে। আগে আসতো না, এখন আসে, সরল সুখে হাসে, খেলা করে আর মৌনতা চুরি করে নিয়ে যায়। খুঁজে পেলে তার মুখোমুখি দু'হাত প্রসারিত করে বলবো, তুমি আলোচ্য সন্ধ্যার মৌনতা ফিরিয়ে দাও। বিনিময়ে নাও বিগত সন্ধ্যার ক্রোধ। যেহেতু গতকালও চুরি গ্যাছে তার সান্ধ্যজৌলুস।
আমি কি তাকে চিনি?
আমরা সবাই তাকে চিনি। আমরা কেউ তাকে চিনি না।
আচমকা বাতাসে কান পাতে অন্ধকার। একটি শব্দের নিঃশব্দে জেগে ওঠা গুপ্তগান শুনে ফেলে সে। আবার প্রশ্ন: কিছু শুনতে পাচ্ছো?
কই?
কার যেন পদশব্দ শোনা যায়। কার যেন কান্নার শব্দ। আচ্ছা কার পায়ে পায়ে এমন শব্দ কানে বেজে ওঠে?
তুমি কেবল চলে যাবার শব্দই শোন। ফিরে আসার শব্দ তোমার কান অব্দি পৌঁছে না। শোন তবে, যে যায় সে হাহাকার। সে কৌতূহল। আচ্ছা তুমি তো মৌনতা চাও, তাই না?
চাই।
কিন্তু তোমার জন্য হাহাকার উত্তম। আর উত্তম কৌতূহল অথবা কাঙ্খা।
অন্ধকারের প্রতিবাদী স্বর শোনা যায়: না-না, আমি মৌনতা চাই, নীরব-নিবিড় মৌনতা। আমি শুধু একটি মীমাংসা চাই। অথচ যতবার ভেবেছি ভাবনার কাছে পৌঁছোবার পথ মেলেনি।
কিন্তু যারা তার নিজ অবস্থানকে মেনে নেয়- তারা সুকী। অন্ধকারের মৌনতা থাকে না, হাহাকার থাকে। আর এটাই অন্ধকারের নিয়তি।
না-আ-আ-আ-----
০৫.
শোন সুরভী, মেঘলা, তুষান, বীনা রায় অথবা সিন্থিয়া, লেখাটি শেষ হয় অথবা ছায়া আর অন্ধকারের তর্ক সমাপ্ত হয় তখন, যখন শহরের সব পৌরবাতি জ্বেলে ওঠে। আর জানোই তো, কেবল আলো-ই অন্ধকারকে বহুভাগে টুকরো টুকরো করে। অন্ধকার ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। অন্ধকারের ওপর আলোর প্রতিবাদহীন, সহজ-সরল প্রভাব চিরন্তন। আর শুধু ছায়াই আলোর বিরোধী। কেবল সে-ই আলোর বিপরীতে তার অবস্থান স্পষ্ট করে তোলে।
১০.
একদিন ছায়াকে ঘিরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি- অন্ধকার। বহুদিন ছায়াকে ঘিরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি- অন্ধকার।