" বাবুই পাখিরে ডাকি
বলিছে চড়াই,,
কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের
বড়াই,, আমি থাকি মহাসুখে
অট্টালিকা পরে,, তুমি কত কষ্ট পাও
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে,, বাবুই হাসিয়া কহে,
সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই তবু থাকি
নিজেরও বাসায়,, পাকা হোক তবু ভাই
পরের ও বাসা,, নিজ হাতে গড়া মোর
কাঁচা ঘর খাসা !! " কবি রজনীকান্ত
সেনের "স্বাধীনতার সুখ" কবিতাটি
মানবজাতির মানবিকতার বিশেষ
একটি দিক তুলে ধরে |. . . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
এই কবিতাটি আজও মানুষের মুখে
মুখে উচ্চারিত হলেও বাবুই পাখি
এবং তার সেই শৈল্পিক বাসা আজ
স্মৃতির অন্তরালে | এক কথায়
বলতে গেলে সোনার হরিণের মত |
আজ থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর
আগেও গ্রামেগন্জ্ঞে এই পাখির
বাসা খুব সহজেই চোখে পড়ত |
বিশাল লম্বা তালগাছ, নারিকেল গাছ
অথবা খেঁজুর গাছের মাথায় যখন
বাবুই পাখির বাসা বাতাসে দোল
খেতে দেখা যায় তখন তা সত্যিই
আমাদের অভিভূত করে তোলে | মনে
হাজারো প্রশ্নের উঁকি দেয় | যুগে
যুগে কালে কালে বাবুই পাখির বাসা
মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে, সাহায্য
করেছে স্বাবলম্বী হতে |. . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই
পাখির মত | গায়ের রং হলুদ বাদামী
বর্ণের তবে প্রজননের সময় রং এর
পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় | সারা
বিশ্বে ১১৭ টি প্রজাতি পাওয়া
গেলেও আমাদের দেশে মাত্র ৩টি
প্রজাতি পাওয়া যায় | এই পাখি খুবই
পরিশ্রমী | তার শক্ত
ঠোঁট দিয়ে সংগ্রহ করে বেড়ায়
নলখাগড়া, হোগলা, খড়কুঠো,
বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা যেগুলো
দিয়ে সুনিপুণ ভাবে তার বাসা তৈরির
কাজ সম্পন্ন করে থাকে | তবে
বর্তমানে নলখাগড়া আর হোগলা
আমাদের দেশে আর আগের মত নেই
যার ফলে বাবুই পাখির বাসাও আজ
বিলুপ্তির পথে | অনেকেই এই
পাখিকে তাঁতী পাখি
(weaver bird) এবং বুনে পাখিও বলে
থাকেন | বাবুই পাখির বাসা এত্তই
শক্ত আর মজবুত হয় যে তা রোদ,
বৃষ্টি, ঝড় সবকিছুকেই হার মানায় |
এমনকি প্রতিটি খড়কুঠো আর
লতাপাতা দিয়ে বাসাটি এমন শক্ত
করে তৈরি করা হয় যে তা টেনেও
ছেঁড়া যায় না |. . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখির কিছু চমৎকার আর
বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য রয়েছে | মূলত
পুরুষ বাবুই পাখিই বাসা তৈরি করে
থাকে | সেই বাসাতে যখন স্ত্রী
বাবুই ডিম পাড়ে আর তা ফুটে যখন
বাচ্চা বাবুইয়ের জন্ম হয় তখন
তাদেরকে পরম আদরে বড় করে
তোলা হয় | একটা নির্দিষ্ট সময়ে
বাচ্চা বাবুইকে বাসার উপর থেকে
নিচে ফেলা দেয় তাদের মা-বাবা |
বাচ্চা বাবুই এই ঘটনার জন্য
কখনোই প্রস্তুত থাকে নাহ | ফলে
যে বাবুই গুলো একটু বোকা ধরনের
হয় তারা বুঝতে পারে না যে তাদের
এখন উড়তে হবে | ফলে তাদের
অনেকের জীবনের ইতি সেখানেই
হয় ! অন্যদিকে যারা একটু চালাক
তারা যখন উড়ে গিয়ে পুনরায় তাদের
বাসায়
ফিরে যেতে চায় তখন তাদের মা-বাবা
তাদেরকে আর বাসায় প্রবেশের
সুযোগ না দিয়েই তাড়িয়ে
দেয় | তখন ঐ বাচ্চা বাবুই বুঝতে
পারে যে তারও এখন বাসা বানানোর
সময় এসেছে | বাসা বানানোর এই
কৌশলটি বাবুইদের একটি জিনগত
কারণ | আবার রাতের বেলায় ঘর
আলোকিত রাখতে বাবুই পাখিরা
জোনাকি
পোকা এনে ধরে রাখে আর সকাল
বেলায়
তাদেরকে ছেড়ে দেয় |. . . . . . . . . . . . .
. . .
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বাবুই পাখির বাসা নির্মাণ যেমন
আমাদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার
ইঙ্গিত প্রদান করে | অন্যদিকে
বাবুইকে বাসা থেকে খুব অল্প বয়সে
বিতাড়িত করার ব্যাপারটিও খুবই
গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে |
আমরা যখন হঠাৎ কোন বড় রকমের
অপ্রীতিকর পরিবেশে পড়ে যাই তখন
যারা দুর্বল প্রকৃতির তারা খুব
সহজেই হতাশার সাগরে ডুবে যাই !
আর যারা সবল তারা আবার নতুন
উদ্দামে নতুন প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়াই !
এইখানে এই অপ্রীতিকর পরিবেশটি
হল বাবুই পাখির মা-বাবা আর বোকা
বাবুই হল সেই সব দুর্বল প্রকৃতির
মানুষ এবং চালাক বাবুই হল সবল
প্রকৃতির মানুষ | তাই এই ছোট্ট
সুন্দর পাখিটিকে এবং তার শৈল্পিক
বাসাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা
করতে হবে | কেননা একমাত্র বাবুই
পাখির গল্পকথা থেকেই আমরা
জীবনের একটি চরম প্রিয় ও অপ্রিয়
শিক্ষা খুব সহজেই গ্রহণ করতে
পারি !!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১