তন্দ্রার চোখে আজ ঘুম নেই ! বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুম আর আসছে নাহ,, বাঁকা চাঁদের আলোতে পুরো ঘরটা ছেঁয়ে আছে তবু ও তার মনে এক বিশাল শূন্যতা ! কার জন্য এই শূনত্য আর কেনই বা তার কোন উত্তর তন্দ্রার জানা নেই ! মাঝে মাঝে হতাশার সাগরে একদম তলিয়ে যায় সে ! হাজার চেষ্টা করে ও বেরিয়ে আসতে পারে না,, তবে তন্দ্রা তো হেরে যাবার পাত্রী নয়,, তাকে যে বেরিয়ে আসতেই হবে,, এসব কথা ভাবতে ভাবতেই চোখের কোণে পানি জমে যায় তার ! . . আজ প্রায় চার মাস হয়ে গেল আবীরের সাথে তন্দ্রার কোন রকম যোগাযোগ নেই,, অথচ মাস পাঁচেক আগে ও তারা দু জনই এটা কল্পনাই করতে পারত নাহ ! তবে কি থেকে যে কি হয়ে গেল ? তন্দ্রার শুধুমাত্র একটি ভুলের কারণে আবীর তাকে যা নয় তাই বলে দিল ! আবীর একটি বারের জন্যও তন্দ্রার কোন কথাই শোনেনি,, তার সাথে অহেতুক রাগারাগি আর ঝগড়াঝাটি করেছে,, তবে তন্দ্রা স্বীকারও করেছিল যে সে ভুল করেছে,, মন থেকেই সে ক্ষমাপ্রার্থী ছিল কিন্তু আবীর তার কোন কথাই কানে নেই নি,, তন্দ্রা চেষ্টার কোন ত্রুটিই করেনি,, নানা ভাবে আবীরের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে,, কিন্তু কোন লাভ হয় নি ! অথচ আবীর সব সময়ই কোন না কোন ভুল করেই চলে ! তন্দ্রা রাগ করে কথা বলাও বন্ধ করে দেয় কিন্তু আবীর যখনই তার কাছে শুধুমাত্র একটিবারের জন্য ক্ষমা চায় সাথে সাথে তার রাগ আর অভিমান গলে পানি হয়ে যায় ! তবে কেন তার বেলায় আজ আবীর এত্ত কঠোর হল ?? সত্যিই কি এত্ত টা কঠোর হওয়ার মতো ভুল সে আসলেই করেছিল ?? এর কোন উত্তর তন্দ্রার জানা নেই !! . . আবীরের খালাতো ভাই সাকিব ,, বয়সে আবীর আর তন্দ্রার বছর তিনেকের ছোট হবে,, সাকিব খুবই সহজ আর সরল একটা ছেলে সেই সাখে আবীর আর তন্দ্রার দারুণ ভক্ত ও সে,, যখনই আবীর আর তন্দ্রা ঝগড়া অথবা রাগারাগি করে কথা বলা বন্ধ করে দিত তখন সাকিবই তাদের সমস্যা গুলো মিটিয়ে দিত ! সাকিবকে তাই আবীর আর তন্দ্রাও খুব পছন্দ করে,, তন্দ্রাকে সাকিব সব সময়ই "ভাবী" বলে ডাকে ! সে জন্য তন্দ্রা ও সাকিবকে খুবই স্নেহ করে আর সেই সাথে বড় বোনের মত শাসন ও করে সব সময়,, সাকিব হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে,, এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছে,, তাদের বাড়ির পাশেই আবীরদের বাড়ি,, আবীরের সাথে তার দেখা আর কথাও হয়েছে,, এটা সে তন্দ্রাকে ও জানিয়েছে,, এসব কথা মনে হতেই তন্দ্রা হু হু করে কেঁদে ওঠে,, গভীর বেদনায় তার মনটা ছেঁয়ে ওঠে ! তন্দ্রা যখন বার বার ক্ষমা চেয়ে ও আবীরের কাছ থেকে কোন সাড়া পায় নি তখন সে রাগে অভিমানে তার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে,, তারপর থেকে আবীর ও তার কোন খোঁজ খবরই নেয় নি,, আর যখন সাকিবের কাছ থেকে শুনল যে আবীরের সাথে তার কথা হয়েছে তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না ! কারণ একটা সময় আবীরের কথা গুলো সেই সাকিবকে জানাত আর আজ ?? . . হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই চমকে উঠে তন্দ্রা ! ফোনটা রিসিভ করে বলে, "হ্যালো কে ?" --ভাবী আমি সাকিব ! কেমন আছেন আপনি ?. . . --আছি কোন রকম,, তোর কি খবর ?. . . --এই তো,, ভাবী খালাতোর (সাকিব আবীরকে খালাতো বলে ডাকে) সাথে আজ কথা হয়েছে,, আপনাদের মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে বলুন তো? খালাতো তো কিছুই বলছে নাহ! --নাহ কিছু হয়নি ! এমনি কথা হয় না আর,, আচ্ছা ভাল থাক,, আমি ফোনটা রাখব ! . . . --ভাবী, ভাবী (খুব ব্যস্ত হয়ে) ফোনটা রাখবেন নাহ,, আপনারা দুজনই যদি এমন করেন তাহলে কি আমার ভাল লাগে বলেন? নাহ আপনি ভাল আছেন না খালাতো না আমি,, কেউ তো ভাল নেই ! . . . --আমি কিচ্ছু জানি নাহ,, ফোন করেছিস কেন আমাকে ? আর কোন দিনও আমাকে ফোন করবি না ! এটা বলেই তন্দ্রা ফোনটা রেখে দেয় ! সাকিবের সাথে ও কখনো এভাবে কথা বলে নি,, কিন্তু আজ তার কিছুই ভাল লাগছে না,, আবীরের কথা খুব মনে পড়ছে আর সেই সাথে পুরোনো দিনের কথা ও ! সাকিবকে বললেই হয়ত আবীরের সাথে কথা বলার একটা ব্যবস্থা করে দিত,, কিন্তু নাহ সে তা কেন করবে? চাইলে তো আবীরই তাকে একবার নক করতে পারে,, ইচ্ছা করলে সে ও পারে তবে এবার আর না,, কষ্টে সে মরে গেলে ও নিজে থেকে আবীরকে নক করবে না যতদিন না সে নক করে !! কারণ তন্দ্রা যেমনই হোক না কেন সে বড্ড রাগী আর অভিমানি !!!! আবীরকে সে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তারপরও যদি সে না বোঝে তাহলে আর কি বা করার থাকে তার? আবীর তো তার কষ্ট টা একবার ও বোঝার চেষ্টা করল না ! হঠাৎ ই চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে তন্দ্রার,, আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে কিচ্ছু নাহ,, জীবনটা বোধ হয় এমনই ! দুঃখ, কষ্ট, রাগ, অভিমান আর ভুলে ভরা !!!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪