somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছেলেবেলা এবং বর্তমান !!

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের
"শ্রীকান্ত" উপন্যাসের ভাষায়
বলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে--<আমার এই
ভবঘুরে জীবনের অপরাহ্ন বেলায়
দাঁড়িয়ে ইহার একটি অধ্যায় লিখিতে
বসিয়া আজ কত কথাই না মনে
পড়িতেছে !! সত্যিই আজ কেন জানি
আমার ছেলেবেলার কথা গুলো বড্ড
মনে পড়ছে !! ছেলেবেলাটা সবারই
অনেক স্মৃতি
বিজরিত থাকে,,,অন্য সবার মত
আমার ছেলেবেলাটাও অনেক স্মৃতি
বহুল তবে একটু আলাদা,,,কারণ বাবা
সরকারী চাকুরীজীবি হওয়াতে বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন জায়গায়
থেকেছি,,,আর সেই সাথে রয়েছে
লতাপাতার মত ছেঁয়ে ওঠা কত্ত
স্মৃতি,,, !! এটা সম্ভবত ২০০২
সালের কথা,,,তখন বাবা সবে মাত্র
ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে বদলি
হয়েছেন,,,তারপর আমরাও বাবার
সাথে কুড়িগ্রাম চলে যাই,,,তো বাবা
একদিন আমাকে ওখানকার " চাইল্ড
কেয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুল " এ নিয়ে
যান ভর্তির উদ্দেশ্যে,,,তখন আমি
খুবই ছোট,,,ছোটবেলা থেকেই আমি
অনেকটা ফড়িং টাইপের ছিলাম
অর্থাৎ খুব পাঁজি আর চঞ্চল
টাইপের !! তো স্কুলে যাওয়ার পর
বাবা আমাকে হেড টিচারের সাথে
পরিচয় করিয়ে দিলেন,,,অতঃপর উনি
আমাকে
এক, দুই, অ, আ, ক, খ ইত্যাদি
ইত্যাদি লিখতে দিলেন,,,আমি ও
তখন ভদ্র মেয়ের মত চুপচাপ লিখে
গেলাম,,,লেখা শেষ হওয়ার পর স্যার
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, বাবু
বলো তো টেন ( Ten ) মানে কি ??
আমি সাথে সাথে চিংড়ি মাছের মত
লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বলে
উঠলাম যে, টেন মানে তো
রেলগাড়ি !! আমাদের বাসা থেকে
আমি রোজ দেখতে পাই !! তখন তো
স্যারের চক্ষু এক্কেবারে ছানা
বড়া !! মেয়েটা বলে কি এগুলো ??
ঠিক তার পর মুহুর্তেই বাবা আর
স্যার হো হো করে হেসে
উঠলেন,,,আমি তখন কিছুই না বুঝে
অবুঝ বালিকার মত বসে রইলাম !!
তখন বাবাই স্যার কে বললেন যে
আসলে আমাদের বাসা থেকে রেল
লাইনটা দেখা যায়,,,তো যখনই ট্রেন
যায় তখনই ও (আমি) বারান্দায়
দৌড়ে গিয়ে দেখে !! তাই ও ভেবেছে
টেন মানে রেলগাড়ি !! একথা বলেই
বাবা আর স্যার আবার ও হো হো
করে হেসে উঠলেন !! তখন আমার ও
খুব হাসি পেয়েছিল এটা মনে হয়ে যে
আমি কি হাস্যকর উত্তরটাই না
দিয়েছি !! অতঃপর স্যার আমাকে
বললেন যে টেন মানে দশ আর
ট্রেনমানে হল রেলগাড়ি যেটা তুমি
রোজ দেখতে পাও !! যাই হোক
তারপর আমাকে কেজি ওয়ান এ
ভর্তি করিয়ে ভর্তি পর্ব শেষ করা
হল !! তারপর বাসায় এসে ও বাবা
মাকে এই ঘটনার কথা বলে আবার ও
খুব হাসাহাসি করলেন,,,এখন ও কোন
কথা প্রসঙ্গে আমার ছেলেবেলার
কথা উঠলে বাসার সবাই এই
প্রসঙ্গটা তুলে হাসাহাসি করে !!
সত্যিই সেই দিন গুলো ছিলো
একদম অন্যরকম,,,কত্ত আনন্দের
আর স্মৃতি মাখা,,,মনে হলে এখন ও
চোখের কোণ পানি চিকচিক
করে ওঠে,,,যখন কুড়িগ্রামে ছিলাম
তখন অনেকটা খেলাধুলার পাশাপাশি
পড়তাম !! স্কুল থেকে বাসায়
ফিরেই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুম
থেকে উঠেই ঘন্টা দুয়েক পড়াশোনা
করেই খেলতে যেতাম বিকেলবেলা !!
সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত খেলতেই
থাকতাম,,,আমরা কুড়িগ্রাম শহরের
শান্তিনগর নামে এক জায়গায়
থাকতাম,,,ওখানকার স্থায়ানীয়
অনেকেই আমার খেলার সাথী
ছিল,,,মা কখনো আমাকে খেলতে
বাঁধা দিতেন না,,,কারণ আমি অনেকটা
জাতে মাতাল তালে ঠিক টাইপের
ছিলাম,,,খেলার সময় যেমন খুব
খেলতাম ঠিক তেমনি পড়ার
সময়টাতে ও নিজের ইচ্ছাতেই কোন
রকম দুষ্টামি ছাড়াই পড়তাম,,,তাই মা
বাবা কে কখনো আমার পড়াশোনা
নিয়ে সেই ছেলেবেলা থেকেই চিন্তা
ভাবনা করতে হয় নি !! এভাবেই
পড়াশোনা আর খেলাধূলার
মাধ্যমেদিন গুলো খুব হেসে খেলেই
চলে যাচ্ছিল,,,কিন্তু হঠাৎ ২০০৫
সালে আমরা একবার দাদুবাড়ি
যাচ্ছিল কুড়িগ্রাম থেকে,,,যাওয়ার
পথেই বাবা সংবাদ পেলেন যে তাকে
টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়েছে,,,এই
খবর শোনার সাথে সাথে আমাদের
সবার মনটাই এত্ত খারাপ হয়ে
গিয়েছিল যে কি বলব !! কারণ
কুড়িগ্রামে আমরা চার বছর ছিলাম
আর ঐখানকার মানুষ গুলো ও খুবই
আতিথেয়তা পূর্ণ আর আন্তরিক
ছিল !! যেটা আমি আর কোন জেলার
মানুষের মধ্যে এখন অবধি
পাইনি,,,আর আমার বন্ধুবান্ধব ও
অনেক ছিল ওখানে,,,কিন্তু কি আর
করা,,,২০০৫ এ বাবা আমাদের কে
নিয়ে টাঙ্গাইলে
চলে এলেন,,,আমরা ঐ দিন কুড়িগ্রাম
থেকে দুপুর দুইটার দিকে রওনা
দিয়েছিলাম আর টাঙ্গাইলে রাত
সাড়ে নয়টার দিকে
পৌঁছেছিলাম,,,তো টাঙ্গাইলে
আমাদের বাসাটা ছিল একদম মূল
শহরে ঠিক চৌরাস্তার মাথায়,,,তো
আমি গাড়ি থেকেই নেমেই ঐ
চৌরাস্তা টিকে খেলার জায়গা
ভেবেই মনে মনে খুব খুশি
হলাম,,,কিন্তু দুঃখের বিষয় যে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম যে
ওটা
খেলার জায়গা নয় একটি ব্যস্ততম
চৌরাস্তা !! সে দিনই মূলত আমার
জীবনের খেলাঘর খানা ভেঙ্গে
চুরমার হয়ে গিয়েছিল,,,তারপর ধীরে
ধীরে খেলাধূলার জীবন থেকে
নিজেকে গুটিয়ে নিলাম,,,২০০৮ এ বাবা
আবার ও বদলি হয়ে সিরাজগন্জ্ঞ
চলে এলেন,,,সিরাজগন্জ্ঞেই আমার
হাইস্কুল এবং কলেজ লাইফের
সমাপ্তি হল !! অবশেষে ২০১৫ এর
মাঝামাঝিতে পাকাপাকি ভাবে আমি
ঢাকাতে চলে এলাম,,,এভাবে সেই
একদম ছোট্ট বেলা থেকেই অনেক
জায়গায় থেকেছি,,,নতুন অনেক
বন্ধুবান্ধব হয়েছে সময়ের সাথে
সাথে তাদেরকে ও ছেড়ে চলে আসতে
হয়েছে,,,সেই সব বন্ধুবান্ধবের সাথে
এখন যোগাযোগ ও নেই কারণ সেই
সময়টাতে তো যোগাযোগের এত্ত
ব্যাপক মাধ্যমের প্রচলন ছিল না !!
তবে যাই হোক না
আমার ছেলেবেলাটা সত্যিই অন্য
রকম ছিল,,,বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন
সময়ে ছিলাম বলে অভিজ্ঞতার
ঝুলিটাও অনেক ভারী,,,মাঝে মাঝে
মনে হয় এই ইট কাঠ পাথরের জীবন
ছেড়ে ছুটে চলে যাই সেই হারিয়ে
যাওয়া ছোট্টবেলার দিন গুলোতে !!
মাঝে মাঝে যখন খুবই দম বন্ধ লাগে
তখন কল্পনায় হারিয়ে যাই
কুড়িগ্রামের সেই চির চেনা খেলার
জায়গা গুলোতে,,,ছেলেবেলার স্মৃতির
পাতাগুলো অনেকটাই মলিন হয়ে
গিয়েছে তাই আজও বেদনায় ঝাপসা
হয়ে ওঠে দু চোখের পাতা !! দুঃখ
ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে এই স্নিগ্ধ
শীতল মন !! হাতড়ে বেড়াই হারিয়ে
যাওয়া সেই ছেলেবেলা স্বপ্নবিলাসী
এই আমি !!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×