somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লবী হাসান তুরাবি

০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুল যখন ফোটে তখন সে বলে না যেÑ আমি ফুটেছি, তোমরা আমার সুবাস গ্রহণ কর, আমাকে একটু দেখে যাও, দেখে যাও আমি কত সুন্দর। ফুল নয় বরং মানুষই ছুটে যায় ফুলের কাছে। মৌমাছি মৌ মৌ করতে থাকে, পাপড়ির উপর এসে খেলা করে হাজারো রঙের নীল প্রজাপতি। এক সময় চড়–ই পাখির কিচির মিচিরে মুখর হয়ে ওঠে গোটা ফুল বাগান। শুধু ফুল নয়, মানুষও হতে পারে ফুলের মতো। বরং ফুলের চেয়ে মানুষের সুভাস আরো বেশি কার্যকরী আরো বেশি স্থায়ী। তেমনি একজন মানুষ ছিলেন হাসান তুরাবি। ফুলের মতই সুবাসিত ছিল তাঁর জীবন। ফুল যেমন নিজেকে অপরের জন্য উৎসর্গ করে তেমনি হাসান তুরাবিও মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আত্ন মানবতার সেবায় কাছ করেছেন আজীবন। বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জাতির দুঃখ দুর্দশা লাঘবে তিনি কাজ করেছেন। তাইতো তিনি বিশ্বব্যাপী এত বিখ্যাত ও তুমুল জনপ্রিয় একজন নেতা।
কিভাবে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। কোন পথে সাধিত হয় চূড়ান্ত বিপ্লব। কি করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এসব নিয়ে তিনি সময় ব্যয় করতেন। এখনকার তরুণ কিশোরদের মত ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করার মানুষ তিনি ছিলেন না। বইকে তিনি জীবনের সাথী করে নিয়েছেন। আল্লাহকে তিনি বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। পাথেয় হিসাবে কুরআনকে গ্রহণ করেছেন। পড়ালেখা না করলে যে বোকা থাকতে হয়, চোখ থেকেও না থাকার সমান হাসান তুরাবি তা বুঝতে পেরেছেন। তাই সারা জীবন তিনি পড়ালেখা করে কাটিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পড়ালেখা করেছেন। মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। নীতি-আদর্শের েেত্র কখনো তিনি আপোস করেননি। তিনি ছিলেন অকুতোভয় এক লড়াকু সৈনিক। বিপ্লবের অকান্ত পরিশ্রমী এক যোদ্ধা। কুরআনের নিরলস এক কর্মী। বিপ্লবকে নিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সুদানে একটা বিপ্লব সংগঠিত করা। যার মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। বিপ্লবী হাসান তুরাবী ১৯৩২ সালে সুদানের ওয়াদ আল-তুরাবি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। হাসান তুরাবির পিতা ছিলেন ইসলামী আদালতের একজন বিচারক। তিনি খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ইউরোপের লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর প্যারিস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। সুদানের আধুনিক রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। সুদানের উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক শরিয়া আইন চালু করেন।
এ বিপ্লবীকে রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনে বহুবার কারবরণ করতে হয়েছে। ১৯৮৩ সালে সুদানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সুদানের এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সুদানের ন্যাশনাল এসেম্বলির স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ড. হাসান আত্-তুরাবি একজন চিন্তাবিদ, দার্শনিক, আলেম, মুফাসসির, আইনবিদ, শিাবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিপ্লবী ছিলেন। তার চিন্তাধারার আলোকেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক ইসলামিক প্রজাতন্ত্র সুদান। এ কারণে সুদানের সাধারণ নাগরিকের কাছে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন নেতা ছিলেন। এক সময় প্রেসিডেন্ট বশিরের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালে বশির সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মতা দখল করার বিরোধিতা শুরু করেন। তিউনিশিয়ার আদলে দেশে একটি রাজনৈতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন এই নেতা।
২০১০ সালে নির্বাচনের পর নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। সামরিক অভ্যুত্থানের দীর্ঘ দুই যুগ পর দেশে প্রথমবারের মতো ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আরো বেশ কয়েকবার তিনি কারাবন্দী হন। এরপর দারফুরে গণহত্যার ঘটনায় বশিরকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অভিযুক্ত করেছিল আদালত। তুরাবি ছিলেন সুদানের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি ওই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বন্ধু বশিরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি নিজের দল ‘পপুলার কংগ্রেস পার্টি’ গঠন করেন। ১৯৯৯ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তনি পপুলার কংগ্রেস পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। এর আগে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইসলামীক ফ্রন্টের সেক্রেটারী ছিলেন। ইংরেজি, ফারসি, জার্মান ও আরবী ভাষায় তাঁর সমান দতা ছিল। ভাষাগত পাণ্ডিত্যের কারণে বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বেশ চাহিদা ছিল তুরাবির। এ ত্যাগী বিপ্লবী ৫ মার্চ ২০১৬ সালে রাজধানী খার্তুমের রয়েল কেয়ার হাসপাতালে ৮৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটল। মুসলমানদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ নাই সীমানা নাই। আল্লামা ইকবালের একটা কবিতা এ রকম, “আরব আমার ভারত আমার চীনও আমার নাহি গো পর/ বিশ্বজোড়া মুসলিম আমি সারা জাহানে বেঁধেছি ঘর”। তাইতো তুরাবির মৃত্যুতে আমাদের হৃদয় কেঁদে উঠে। আমরাও তুরাবির মত হতে চাই। মুসলিম তরুণদের মধ্যে তুরাবির মত ডায়নামিক নের্তৃত্ব দেখতে চাই।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×