কিভাবে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। কোন পথে সাধিত হয় চূড়ান্ত বিপ্লব। কি করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এসব নিয়ে তিনি সময় ব্যয় করতেন। এখনকার তরুণ কিশোরদের মত ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করার মানুষ তিনি ছিলেন না। বইকে তিনি জীবনের সাথী করে নিয়েছেন। আল্লাহকে তিনি বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। পাথেয় হিসাবে কুরআনকে গ্রহণ করেছেন। পড়ালেখা না করলে যে বোকা থাকতে হয়, চোখ থেকেও না থাকার সমান হাসান তুরাবি তা বুঝতে পেরেছেন। তাই সারা জীবন তিনি পড়ালেখা করে কাটিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পড়ালেখা করেছেন। মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। নীতি-আদর্শের েেত্র কখনো তিনি আপোস করেননি। তিনি ছিলেন অকুতোভয় এক লড়াকু সৈনিক। বিপ্লবের অকান্ত পরিশ্রমী এক যোদ্ধা। কুরআনের নিরলস এক কর্মী। বিপ্লবকে নিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সুদানে একটা বিপ্লব সংগঠিত করা। যার মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। বিপ্লবী হাসান তুরাবী ১৯৩২ সালে সুদানের ওয়াদ আল-তুরাবি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। হাসান তুরাবির পিতা ছিলেন ইসলামী আদালতের একজন বিচারক। তিনি খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ইউরোপের লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর প্যারিস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। সুদানের আধুনিক রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। সুদানের উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক শরিয়া আইন চালু করেন।
এ বিপ্লবীকে রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনে বহুবার কারবরণ করতে হয়েছে। ১৯৮৩ সালে সুদানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সুদানের এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সুদানের ন্যাশনাল এসেম্বলির স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ড. হাসান আত্-তুরাবি একজন চিন্তাবিদ, দার্শনিক, আলেম, মুফাসসির, আইনবিদ, শিাবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিপ্লবী ছিলেন। তার চিন্তাধারার আলোকেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক ইসলামিক প্রজাতন্ত্র সুদান। এ কারণে সুদানের সাধারণ নাগরিকের কাছে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন নেতা ছিলেন। এক সময় প্রেসিডেন্ট বশিরের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালে বশির সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মতা দখল করার বিরোধিতা শুরু করেন। তিউনিশিয়ার আদলে দেশে একটি রাজনৈতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন এই নেতা।
২০১০ সালে নির্বাচনের পর নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। সামরিক অভ্যুত্থানের দীর্ঘ দুই যুগ পর দেশে প্রথমবারের মতো ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আরো বেশ কয়েকবার তিনি কারাবন্দী হন। এরপর দারফুরে গণহত্যার ঘটনায় বশিরকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অভিযুক্ত করেছিল আদালত। তুরাবি ছিলেন সুদানের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি ওই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বন্ধু বশিরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি নিজের দল ‘পপুলার কংগ্রেস পার্টি’ গঠন করেন। ১৯৯৯ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তনি পপুলার কংগ্রেস পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। এর আগে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইসলামীক ফ্রন্টের সেক্রেটারী ছিলেন। ইংরেজি, ফারসি, জার্মান ও আরবী ভাষায় তাঁর সমান দতা ছিল। ভাষাগত পাণ্ডিত্যের কারণে বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বেশ চাহিদা ছিল তুরাবির। এ ত্যাগী বিপ্লবী ৫ মার্চ ২০১৬ সালে রাজধানী খার্তুমের রয়েল কেয়ার হাসপাতালে ৮৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটল। মুসলমানদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ নাই সীমানা নাই। আল্লামা ইকবালের একটা কবিতা এ রকম, “আরব আমার ভারত আমার চীনও আমার নাহি গো পর/ বিশ্বজোড়া মুসলিম আমি সারা জাহানে বেঁধেছি ঘর”। তাইতো তুরাবির মৃত্যুতে আমাদের হৃদয় কেঁদে উঠে। আমরাও তুরাবির মত হতে চাই। মুসলিম তরুণদের মধ্যে তুরাবির মত ডায়নামিক নের্তৃত্ব দেখতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪