মহাকাশে গাড়ি চালাতে কেমন লাগবে, কল্পনা করতে পারেন! স্টিয়ারিং হুইলের জায়গায় জয় স্টিক, ড্যাশ বোর্ডের জায়গায় সমতল স্ক্রিনের ডিসপ্লে। এরপর দরজা বন্ধ করে, সিটবেল্ট বেঁধে সটান ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে দূরভ্রমণে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে বেরিয়ে পড়া। মহাকাশে গাড়ি! চমকে ওঠারই কথা। তবে এ নিছক কল্পকাহিনি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসার কর্মকর্তারা গাড়ির আদলে মহাকাশযান ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন। ছয় আসনের গাড়িসদৃশ এ নভোযানটির নাম হবে ‘ড্রিম চেজার’ ।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে , সম্প্রতি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নভোযান মহাকাশে পাঠানোর পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নাসা। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে, কলোরাডোভিত্তিক সিয়েরা নেভাদা করপোরেশন (এসএনসি) ।
গাড়ি সদৃশ এই মহাকাশ যান টি নির্মাণ করছে এসএনসি। নাসা নির্বাচিত অন্য নভোযান হচ্ছে স্পেস এক্সের ‘ড্রাগন’ ও বোয়িংয়ের ‘সিএসটি-১০০’।
মহাকাশের গাড়ি ‘ড্রিম চেজার’ (ভিডিও)
স্বপ্নের পেছনে ছোটা
ছয় সদস্যের একটি পরিবারে ব্যবহূত গাড়ির মতোই ড্রিম চেজার নামের এ নভোযানটির সামনের অংশের দুটি আসনে চালক ও তাঁর সহকারীর বসার স্থান। তাঁদের পেছনে লটবহর রাখার কিছুটা জায়গা। এর পেছনে রয়েছে আরও কয়েকজনের মতো বসার জায়গা। গবেষকেরা অবশ্য মজা করে বলছেন, এ নভোযানটি আসলে গাড়ির মতো দেখতে বলা হলেও এর বাইরের দিকটা অনেকটা জুতার মতো। জুতার সঙ্গে দুটো পাখাযুক্ত একটি যান! অনেকটাই কল্পকাহিনির আকাশযানগুলোর মতো!
ড্রিম চেজার তৈরির ইতিহাস অবশ্য অনেক পুরোনো। এ ধরনের যান তৈরির ধারণা সত্তরের দশকের। ড্রিম চেজার তৈরির সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি পরীক্ষামূলক বিমানের গোপন মডেল অনুসরণ করা হয়েছে। সত্তরের দশকে সোভিয়েত বিমানের গোপনে তোলা একটি ছবির অনুকরণ করে তার ওপর আরও এক দশক গবেষণা চালিয়ে মহাকাশযানটির নকশা করেছেন এসএনসির গবেষক ও প্রকৌশলীরা। এরপর ওই নকশা অনুসারে একটি পরীক্ষামূলক নভোযান তৈরি করে নাসার কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। নাসার অনুমতি পেয়ে ড্রিম চেজারকে মহাকাশে পাঠানোর উপযোগী করতে নয় বছর ধরে কাজ করছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি এ নভোযানটির জন্য নাসার পক্ষ থেকে ২১ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে এসএনসিকে।
এসএনসি স্পেস সিস্টেমের প্রধান মার্ক সিরাঞ্জেলো এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, স্বপ্নের মতো করেই শুরু হয়েছিল তাঁদের এ প্রকল্পটি। ভবিষ্যতের নভোযানটি তৈরির জন্য কাজ করতে শুরু করেছিলেন অল্প কয়েকজন মানুষ। তাঁদের ভাবনায় ছিল মহাকাশ মিশন শেষে স্পেস শাটলের যুগ যখন শেষ হবে, তখন আধুনিক নভোযানের প্রয়োজন পড়বে। এ কথা ভেবেই স্বপ্ন তাড়া করা শুরু হয়েছিল। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। গাড়িসদৃশ মহাকাশযান ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়ে গেছে। এমনকি পরীক্ষামূলকভাবে তা আকাশেও ওড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের শেষনাগাদ নভোচারীসহ ড্রিম চেজার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পথে নিয়মিত যাত্রা শুরু করবে।
মার্ক সিরাঞ্জেলো আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনটি প্রতিষ্ঠান স্পেস স্টেশন থেকে নভোচারী আনা-নেওয়া ও রসদ পৌঁছানোর কাজ করতে নভোযান নির্মাণ করছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও কাজ করবে এ তিনটি প্রতিষ্ঠান।
কার্বন ফাইবার বা তন্তুর তৈরি ড্রিম চেজারকে বয়ে নিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যাটলাস ৫ রকেট। এ নভোযানটির সবচেয়ে বড় সুবিধা কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই পৃথিবীতে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ইতিপূর্বে মহাকাশ যাত্রায় স্পেস শাটলগুলো যে ধরনের কাজে ব্যবহার করা হতো, তার সব সুবিধাই এ যানটিতে থাকবে। রসদ পরিবহন ও ছয় সদস্য বহনক্ষমতার এ নভোযানটিকে তাই রাস্তায় চালানো গাড়ির মতোই বলা চলে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, স্পেস এক্স ও বোয়িংয়ের সঙ্গে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, তবে ড্রিম চেজারের উন্নয়ন ও কারিগরি অন্যান্য কাজ শেষ করার পর আসল পার্থক্য ধরা পড়বে। তাঁর মতে, পরিবারের সদস্যরা মিলে গাড়িতে চেপে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার মতোই ড্রিম চেজারে করে স্বপ্নের মহাকাশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে চাইবেন অনেকেই।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩২